ন’মাসের শিশু সন্তানকে সুষমা নিজের আবাসনে নিয়ে গিয়ে রাখলেও বাকি দুই শিশু থেকে যায় অধ্যক্ষর কাছে। নিজস্ব চিত্র
দারিদ্রের সুযোগ নিয়েছিলেন বাঁকুড়ায় শিশুপাচার-কাণ্ডে অভিযুক্ত অধক্ষ্য কমলকুমার রাজোরিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। অভাবী মায়ের থেকে মাত্র ১ লক্ষ ৭০ হাজারে একটি ৯ মাসের শিশু-সহ তিন জনকে কিনেছিলেন তাঁরা। ৯ মাসের শিশু ছিল অভিযুক্ত শিক্ষিকা সুষমা শর্মার কাছে। বাকি দু’জনকে নিজের স্কুলের আবাসনে এনে রেখেছিলেন কমল। পরিচয় দিয়েছিলেন আত্মীয়ের সন্তান হিসাবে। পরে রাজস্থানে পাচার করার ছক ছিল এই দুই শিশুকে। তদন্তে নেমে এমনই সব বিস্ফোরক তথ্য জানতে পারছে পুলিশ।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, শিশুপাচারের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া পাঁচ শিশুকেই নিজের সন্তান বলে দাবি করেছেন দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকার বাসিন্দা রিয়া বাদ্যকর। গ্রেফতারির পর রিয়াকে জিজ্ঞসাবাদ করার সময় তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, অতিরিক্ত মদ্যপান করার কারণে বছরখানেক আগে তাঁর স্বামী মারা যান। এর পর অভাবের সংসারে পাঁচ সন্তানকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েন রিয়া। অন্য দিকে, দ্বিতীয় বিয়ে করার ক্ষেত্রেও তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই পাঁচ সন্তান। তাই মোটা অঙ্কের বিনিময়ে শিশুদের বিক্রি করে দিতে পারলে এক দিকে তাঁর যেমন অর্থাভাব মিটবে, তেমনই দ্বিতীয় বিয়েতে কোনও বাধা থাকবে না। এই আশায় নিজের পাঁচ সন্তানকে বিক্রির পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন রিয়া।
সেই অভাবেরই সুযোগ নেন কমল ও সুষমা। রাজস্থানের আদি বাসিন্দা কমল চাকরি সূত্রে এসেছিলেন বাঁকুড়ায়। বাড়িতে আছেন স্ত্রী ও ছেলে। এখানে আবাসনে একাই থাকতেন তিনি। স্কুলে থাকার সময় তিনি জানতে পারেন, বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষিকা সুষমা শর্মার সন্তান না হওয়ায় তিনি বেশ কিছু দিন ধরে বেআইনি ভাবে সন্তান কেনার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন । সুষমা শর্মার সেই গোপন পরিকল্পনাতে যোগ দেন অধ্যক্ষ কমল। গোপনে কী ভাবে সন্তান কেনা যায়, তার খোঁজ খবর করতে গিয়েই অধ্যক্ষর সঙ্গে আলাপ হয় দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকার চায়ের দোকানদার স্বপনকুমার দত্তর । স্বপনের মাধ্যমেই অধ্যক্ষের যোগাযোগ হয় মেনগেট এলাকার বাসিন্দা রিয়া ও তাঁর মা সুমিতা বাদ্যকরের। রিয়া মোটা টাকার বিনিময়ে তাঁর ন’মাসের সন্তানকে সুষমা শর্মার কাছে বিক্রি করতে রাজি হন। পরে রিয়ার ওই ন’মাসের শিশু সন্তান-সহ তার তিনটি সন্তান বিক্রির কথা হয় অধ্যক্ষের সঙ্গে। রিয়াকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে সপ্তাহখানেক আগে তাঁর তিন সন্তানকে আনা হয় বাঁকুড়ার কালপাথর গ্রামের জওহর নবোদয় বিদ্যালয় চত্বরে।
ন’মাসের শিশু সন্তানকে সুষমা নিজের আবাসনে নিয়ে গিয়ে রাখলেও বাকি দুই শিশু থেকে যায় অধ্যক্ষর কাছে। পুলিশ জানতে, পেরেছে অধ্যক্ষর পরিকল্পনা ছিল শিশু দু’টিকে রাজস্থানে নিয়ে যাওয়ার। তদন্তকারীদের দাবি, দুই শিশুকন্যাকে আবাসনে এনে রাখার বিষয়ে বিন্দুবিসর্গ জানতেন না রাজস্থানে বসবাসকারী অধ্যক্ষের পরিবার। জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ বিঘা জমির উপর স্কুল ছাড়াও রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আবাসন। সেই আবাসনেরই একাংশে একাই থাকতেন কমল। কমলের বাড়িতে আনাগোনা ছিল স্থানীয় দুই ব্যাক্তির। এক জন তাঁর রান্নাবান্না করে দিতেন। অন্য জন বাড়ির অন্যান্য কাজের দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি কমলের বাড়িতে আনা দুই শিশু নজর এড়ায়নি বাড়ির কাজের দায়িত্বে থাকা ওই দুই স্থানীয় ব্যাক্তি ও প্রতিবেশী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। জানা গিয়েছে, ওই দুই শিশু কন্যাকে তাঁর এক আত্মীয়ের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy