Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

নদীর নীচে মিলল টেরাকোটার ইটের কাঠামো

সম্প্রতি ওই ধ্বংসাবশেষ দেখে এসেছেন জেলার মন্দির গবেষক সুভাষ রায়। তিনি বলেন, ‘‘আনুমানিক নবম-দশম শতাব্দীতে জেলার কিছু এলাকায় জৈনধর্মের প্রভাব ছিল। সে কারণে বেশ কিছু জৈন দেউল তৈরি হয়েছিল।

নিদর্শন: আড়শার দেউলবেড়ায় কংসাবতীতে। নিজস্ব চিত্র

নিদর্শন: আড়শার দেউলবেড়ায় কংসাবতীতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৩০
Share: Save:

জল কমতেই পলি-বালি সরিয়ে কংসাবতী নদীর বুকে বেরিয়ে এসেছে পুরনো টেরাকোটার ইটের কাঠামো। যা দেখতে কৌতূহলীদের ভিড় জমছে এক সময়কার জৈনক্ষেত্র বলে পরিচিত পুরুলিয়ার আড়শার দেউলবেড়া ঘাটে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ায় তলিয়ে গিয়েছিল ওই এলাকায় বেশ কিছু প্রাচীন দেউল। তাঁদের ধারণা, তারই কোনও একটির ধ্বংসাবশেষ উঠে এসেছে।

সম্প্রতি ওই ধ্বংসাবশেষ দেখে এসেছেন জেলার মন্দির গবেষক সুভাষ রায়। তিনি বলেন, ‘‘আনুমানিক নবম-দশম শতাব্দীতে জেলার কিছু এলাকায় জৈনধর্মের প্রভাব ছিল। সে কারণে বেশ কিছু জৈন দেউল তৈরি হয়েছিল। এই ধ্বংসাবশেষের ইটগুলি পুরনো টেরাকোটার। আমার ধারণা, এই ধ্বংসাবশেষ কোনও জৈন দেউলের।’’ তাঁর মতে, অবিলম্বে ওই দেউল সংস্কারের জন্য পুরাতত্ত্ব বিভাগকে জানানো প্রয়োজন।

ইতিমধ্যে সুযোগসন্ধানীরা ইট সরিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও। মন্দিরের নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্রামবাসীর সঙ্গে সুভাষবাবু সোমবার বিডিও-র কাছে দরবার করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘খবরটি জানি না। আমার কাছে এলে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরকে সংরক্ষণের জন্য জানাব।’’

কংসাবতী নদীর এক পাড়ে আড়শার বামুনডিহা, তুম্বা-ঝালদা গ্রাম। অন্য পাড়ে পুরুলিয়া ১ ব্লকের কাঁটাবেড়া, পটমপুটরা গ্রাম। নদী পারাপার করতে গিয়ে ক’দিন আগে ওই ধ্বংসাবশেষ বাসিন্দাদের নজরে আসে। দেউলবেড়ার এক সময়কার সমৃদ্ধ ইতিহাস পুনরুদ্ধারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা গত কয়েক বছর ধরে উদ্যোগী হয়েছেন। তাই জলের নীচে ওই ধ্বংসাবশেষ পেয়ে তাঁরা সংরক্ষণের দাবিতে সরব হয়েছেন।

নদীর জলের এক ফুট নীচেই জমে রয়েছে ইটের স্তূপ। ছোট ছোট আয়তকার, বর্গাকার ও গোলাকার ইট। জেলার বিভিন্ন মন্দির ছাড়াও, জৈন সভ্যতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন সুভাষবাবু। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় জৈন সংস্কৃতি বা সভ্যতার বেশির ভাগটাই গড়ে উঠেছিল কংসাবতীর পাশাপাশি অঞ্চলে। দামোদর নদ ও ইরাবতী নদীর তীরেও কিছু নির্দশন রয়েছে। যেখানে ধ্বংসাবশেষ মিলেছে, তার কাছেই মন্দিরক্ষেত্র দেউলঘাটায় টেরাকোটার মন্দির ছিল। ২০০২ সালে বর্ষায় বড় মন্দিরটি ধসে পড়ে। বাকি দু’টি অবশ্য রয়েছে। ওই দেউলগুলি আনুমানিক নবম বা দশম শতাব্দীর বলেই মনে হয়। নদীর তলায় থাকা ধ্বংসাবশেষও সেই সময়কার বলে মনে হচ্ছে।’’

তিনি জানান, জলের তলায় বালি সরিয়ে যতটা হাত ঢোকানো গিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এটি কোনও রেখ দেউলের ধ্বংসাবশেষ। ন’ফুট বাই ছ’ফুটের মতো কাঠামো। জল শুকিয়ে গেলে বালি সরালেই দেউলের বাকি অংশও মিলবে বলে তাঁর ধারণা।

স্থানীয় বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন মাহাতো, বিষ্ণু সিং সর্দার, দেবীলাল মাহাতোরা জানান, এই এলাকার নানা গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে পাথরের তৈরি মন্দিরের খিলানের ধ্বংসাবশেষ, মূর্তি। সে সব সংরক্ষণ করতে এলাকায় একটি হলঘর তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। দেউলবেড়া ঘাট যাওয়ার জন্য গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা গড়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy