পাঁচমুড়ার বিখ্যাত টেরাকোটার ঘোড়া। নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক দশক ধরে পুজো এলেই হাসি ফুটত বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া গ্রামের টেরাকোটা শিল্পীদর মুখে। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলার পুজোর উদ্যোক্তাদের চাহিদা মতো টেরাকোটা সামগ্রী সরবরাহ করতে বাড় ব্যস্ততা। কিন্তু গত দু’বছরে পাঁচমুড়ার সেই চেনা ছবি উধাও। দুর্গাপুজোর মুখেও বরাত না থাকায় প্রথাগত সেই হাতি-ঘোড়া তৈরির কাজে ফিরতে হচ্ছে অধিকাংশ টেরাকোটা শিল্পীকে।
শুধু বাংলা বা ভারত নয়, পাঁচমুড়ার শিল্পীদের হাতে তৈরি টেরাকোটা সামগ্রীর কদর রয়েছে বিদেশের বাজারেও । শিল্পীদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রায় তিন দশক আগে রাজ্যে থিম পুজো শুরু হলে বরাত পেতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। মণ্ডপসজ্জার উপকরণের পাশাপাশি অনেক পুজোর উদ্যোক্তা টেরাকোটার দুর্গা প্রতিমা তৈরির বরাতও দিতে শুরু করেন। বরাত আসতে থাকে রাঁচি, ধানবাদ এমনকি দিল্লির একাধিক পুজো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও। শিল্পীদের একাংশের দাবি, সারা বছর টেরাকোটার যে ব্যবসা হত তার প্রায় অর্ধেকই আসত পুজোর সময় ।
কিন্তু করোনার কারণে গত বছর পুজোর বরাত মেলেনি পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্পীদের। এ বছর অতিমারি পরিস্থিতি কিছুটা ভালো থাকায় বরাতের আশায় বসেছিলেন পাঁচমুড়ার শিল্পীরা। কিন্তু পুজো চলে এলেও পাঁচমুড়ার কোনও টেরাকোটা শিল্পী বরাত না পাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ তাঁরা। বাধ্য হয়ে প্রথাগত হাতি-ঘোড়া তৈরির কাজেই ফিরতে হয়েছে শিল্পীদের।
পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্পী কার্তিক কুম্ভকার বলেন “গত কয়েক বছরে আমার তৈরি টেরাকোটা সামগ্রী দিয়ে কলকাতার বিভিন্ন দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা মণ্ডপ সাজিয়েছেন। বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছি। কিন্তু করোনার জন্য দু’বছর কোনও বরাত মেলেনি। বাধ্য হয়ে টেরাকোটার হাতি, ঘোড়া তৈরি করে রাখছি।’’
স্থানীয় আর এক টেরাকোটা শিল্পী তাপস কুম্ভকার এক সময় কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলার পুজোর জন্য টেরাকোটার দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছেন। গত দু’বছর তাঁরও কপালে জোটেনি পুজোর বরাত । তিনি বলেন, “পুজোর বরাত নেই। পরিস্থিতি দেখে এখন টেরাকোটার নাম-ফলক, স্মারক ও ভিজিটিং কার্ড তৈরি করছি। নতুন এই শিল্পের কিছু কিছু বরাত মিলছে।’’
পাঁচমুড়া মৃৎশিল্পী সমবায় সমিতির সম্পাদক দীপঙ্কর কুম্ভকার বলেন, “আমরা জন্মলগ্ন থেকে দেখে আসছি প্রতি বছর পুজো এলেই এই শিল্পীপাড়ায় আনাগোনা করতেন মণ্ডপশিল্পী ও পুজো উদ্যোক্তারা। শিল্পীদের বরাতও মিলত ভালো। গত দু’বছর করোনা সংক্রমণের ভয়ে সেই ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে। এমনিতে, টেরাকোটা থিম খরচ সাপেক্ষ । করোনার জন্য পুজো উদ্যোক্তাদের বাজেটে টান পড়ায় গত দু’বছর তাঁরা টেরাকোটাকে থিম হিসাবে বেছে নেওয়ার ঝুঁকি নেননি। এই পরিস্থিতিতে আমরা সমিতিগত ভাবে শিল্পীদের যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy