ইঁদপুরের বাংলায়। নিজস্ব চিত্র।
সময়, দুপুর ২টো। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রওনা দিল রঘুনাথপুর রুটের একটি বাস। দেখা গেল, চালক-কনডাক্টর ছাড়া রয়েছেন জনা দুই যাত্রী। একই অবস্থা কাশীপুর রুটের একটি বাসেরও। জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলছিলেন, “ক’দিন অবরোধ গেল। তার পরেও এই হাল। আচমকা গরম এতই বেড়েছে যে, দুপুরের দিকের বাসগুলির এমন অবস্থা থাকছে।”
শুধু বাস নয়। পুরুলিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে কোর্ট মোড়, হাটের মোড়, স্টেশন চত্বর—সর্বত্রই মঙ্গলবার রাস্তাঘাট ছিল কার্যত ফাঁকা। পথে বেরনো মানুষজনের ভিড় শুধু ঠান্ডা পানীয়ের দোকান বা আখের রসের ঠেলাগাড়ি ঘিরে। দেদার বিকোচ্ছে লস্যি ও আইসক্রিমও।
দু-তিন দিন আগেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পারদ ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। আচমকা তা প্রায় ৩ ডিগ্রি বেড়ে যাওয়ায় কার্যত অসহনীয় হয়ে উঠেছে আবহাওয়া। পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর ও জাহাজপুর কল্যাণ কৃষি বিজ্ঞানকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার পরে প্রতিদিন তা পাল্লা দিয়ে বেড়ে মঙ্গলবার পৌঁছেছে ৩৮.৯ ডিগ্রিতে।
জাহাজপুর কল্যাণ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের আবহাওয়া বিভাগও বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয় মৌসম বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সুদীপ্ত ঠাকুর বলেন, “পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে গরম ও শুষ্ক বাতাস ঢোকার কারণে তাপমাত্রা আচমকা বেড়ে গিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে যে ভাবে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে পারদ চড়ছে, তাতে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছতে পারে ৪৪ ডিগ্রিতে।” বিশেষজ্ঞরাও জানাচ্ছেন, গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার তাপমাত্রা যে ভাবে বেড়েছে (তিন ডিগ্রির বেশি), তাকে তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি বলা যায়।
এ পরিস্থিতিতে শরীরের সুরক্ষায় কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। খুব প্রয়োজন ছাড়া বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত রোদে না বেরোনো, পর্যাপ্ত জলপান করা, বাইরে বেরোলে ঢিলেঢালা পোশাক ও ছাতা ব্যবহার করা, ‘হিট স্ট্রোক’ বা গরমজনিত কোনও উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে। কল্যাণ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র সূত্রে চড়া রোদে গবাদি পশুর চারণ বন্ধ রাখা এবং তাদের পানীয় জলের সঙ্গে সম পরিমাণ নুন ও গুড়ের মিশ্রণ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চাষিদের জানানো হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন ফসলে সেচ দিতে হলে ভোর বা বিকেলের দিকে দিতে।
বর্তমানে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চলছে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দফতরকেও সতর্ক করেছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, “আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা বাড়বে বলে বার্তা আমরা পেয়েছি। জেলা প্রশাসনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তা জানিয়ে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় যে শিবির হচ্ছে, সেখানে ‘ওআরএস’ মজুত রাখতে বলা হয়েছে।”
গরমের দাপট চলছে বাঁকুড়াতেও। মঙ্গলবার ছিল এ মরসুমের উষ্ণতম দিন। জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছয় ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ দিন সকাল থেকে চড়া রোদের দাপট দেখা গিয়েছে। দুপুরের বাতাসে ছিল ‘লু-’র অনুভূতি। গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে আখের রস, ডাবের জলে চুমুক দিতে দেখা গিয়েছে পথে বেরনো মানুষজনকে। ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিমের দোকানে ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকে। মাঝেমধ্যে আকাশে হালকা মেঘের দেখা মিললেও বৃষ্টি হয়নি। বাঁকুড়ার বাসিন্দা লোকেশ পাত্র, চিন্টু মণ্ডলেরা বলেন, “এপ্রিলের শুরুতে পর পর কয়েক দিন ঝড়-বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমই ছিল। এখন অস্বস্তি ফের চরমে উঠেছে। এখন ঝড়-বৃষ্টিই স্বস্তি দিতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy