জয়দেবকে উদ্ধারের পরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
লক্ষ্মীপুজোর দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে ক্যানালে স্নান করতে নেমে জলে ডুবে মৃত্যু হল এক কিশোরের। পুলিশ জানিয়েছে, জয়দেব মণ্ডল (১৪) নামে ওই কিশোরের বাড়ি বোলপুর পুর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মকরমপুর মুটিয়া পাড়ায়।
পুলিশ ও দমকল আধিকারিকেরা জানান, প্রান্তিক যাওয়ার পথে শ্যামবাটিতে ময়ূরাক্ষী সেচ ক্যানালের লক গেটের কাছে তিন বন্ধুর সঙ্গে স্নান করতে নেমেছিল জয়দেব। যে দিকে তারা স্নান করছিল সেখানে জলের গভীরতা অনেকটাই বেশি ছিল। এ দিন সকাল থেকেই জল ছাড়ায় ক্যানালে জলের স্রোতও ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানান, চারজন একসঙ্গেই জলে নেমেছিল কিন্তু সাঁতার না জানায় জলের তোড়ে আচমকা বন্ধুদের হাত ছেড়ে তলিয়ে যায় জয়দেব। তিন বন্ধু তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত না পেরে চিৎকার করে সাহায্য চায়। কিছুটা দূরে লকগেটের অন্য দিকে কয়েকজন মহিলা স্নান করছিলেন, তাঁরা ছুটে আসেন। ক্যানেলের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া লোকেরাও তলিয়ে যাওয়া জয়দেবকে উদ্ধারে জলে নামেন কিন্তু ডুব দিয়েও নাগাল না পাওয়ায় পুলিশে খবর দেন কয়েকজন। শান্তিনিকেতন থানা থেকেই দমকলকে ডাকা হয়। দমকল কর্মীরা জলে নেমে ওই কিশোরের নিথর দেহ উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়েছে।
জয়দেবের এক বন্ধু কানাই দাস বলে, ‘‘আমরা প্রথমে লকগেটের আগে অগভীর অংশে স্নান করতে নেমেছিলাম কিন্তু সেখানে মহিলারা স্নান করছিলেন। তাঁরা আমাদের অন্য জায়গায় স্নান করতে বলেন। তখন লকগেট পেরিয়ে স্নান করতে নেমেছিলাম। সেখানে জল যে গভীর আর স্রোতের টান এত বেশি বুঝতে পারিনি। ও আচমকা তলিয়ে গেল, আমরা বাঁচাতে পারলাম না।’’
রবিবারের এই ঘটনায় ময়ূরাক্ষী সেচ ক্যানালে অবারিত স্নান নিয়ে প্রশ্ন উঠল আবারও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সেচ ক্যানালে প্রতিবছরই একই রকম ভাবে জলের তোড়ে তলিয়ে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ক্যানেলে জল ছাড়ার সময় যদি কোনও ঘোষণা করা হয় প্রশাসনের তরফ থেকে তাহলে যাঁরা না জেনে জলে নামেন তাঁরা সাবধান
হতে পারেন। স্থানীয় বাসিন্দা বিমল দাস বলেন, ‘‘এমন ঘটনা নতুন নয়। এই জায়গাতেই অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবের
পাশাপাশি নিরাপত্তার দিকেও নজর দেওয়া দরকার।’’
গত ১৬ সেপ্টেম্বর সিউড়ির গোবরা গ্রামের কাছে অভিষেক ভট্টাচার্য নামে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্র চার বন্ধুর সঙ্গে ময়ূরাক্ষী সেচ ক্যানালে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে পরিবারের লোকেরা অভিষেককে খুনের অভিযোগ করেছিলেন। তদন্তে বন্ধুরা মিলে নেশা করে স্নান করতে নামার তথ্য উঠে এসেছিল। তথ্যগত অসঙ্গতি মেলায় ওই ঘটনায় অভিষেকের দুই বন্ধুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সেই মামলা এখন বিচারাধীন। এ দিনের ঘটনায় অবশ্য জয়দেবের পরিবারের তরফ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy