প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ শিক্ষিকার। প্রতীকী ছবি।
কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি লিখলেন এক শিক্ষিকা। পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি বিদ্যালয়ে কর্মরত বোলপুর নিবাসী ওই শিক্ষিকা ওই চিঠি পাঠিয়েছেন ব্রাত্যকে। চুক্তির ভিত্তিতে কর্মরত ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বসার জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তার মাধ্যমে তাঁকে দেখে প্রধান শিক্ষক ‘যৌন লালসা মেটান’। এই অভিযোগের সূত্র ধরেই বোলপুরের কাছাকাছি কোনও বিদ্যালয়ে বদলির জন্য আবেদনও করেছেন অভিযোগকারিণী। শিক্ষামন্ত্রীকে মঙ্গলবার পাঠানো ওই চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক এবং শিক্ষা দফতরের অন্য আধিকারিকদেরও। যদিও ওই শিক্ষিকার সমস্ত অভিযোগ ‘মিথ্যা’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। পাল্টা তিনি ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আউশগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। শিক্ষামন্ত্রীকেও চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ওই শিক্ষিকা অভিযোগ করেছেন, প্রধান শিক্ষক তাঁর উপর ‘নানা ভাবে নির্যাতন’ চালাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘উনি বহু দিন ধরে আমাকে নানা কুপ্রস্তাব দিতেন। তাতে আমি রাজি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে প্রতি পদে অপদস্থ এবং হেনস্থা করেন। যার ফলে আমি সব সময় আতঙ্কে থাকি। সুস্থ ভাবে চাকরি অবধি করতে পারছি না।’ চিঠিতে শিক্ষিকার দাবি, ওই বিদ্যালয়ে তিনি ১৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। ওই শিক্ষিকা আরও লিখেছেন, ‘আমি প্রতি দিন ৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সকাল সাতটার ট্রেন ধরে সকাল ন’টার মধ্যে বিদ্যালয়ে পৌঁছই।’ তাঁর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক ‘শুধুমাত্র বেলা সাড়ে তিনটের সময় একটি ক্লাস দেন এবং সাড়ে চারটে অবধি বসিয়ে রাখেন। এমনকি স্টাফরুমে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে সেই ক্যামেরার মাধ্যমে আমাকে দেখতে থাকেন এবং ওই ভাবে নিজের যৌন লালসা মেটান।’
স্বামী এবং ছয় বছরের একটি শিশু কন্যা রয়েছে ওই শিক্ষিকার। শিক্ষামন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সে কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, প্রাপ্য ছুটি তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর আরও অভিযোগ, কোভিড পরিস্থিতিতে ট্রেন-বাস না চলার দরুন স্কুলে উপস্থিত না হতে পারায় বেতন কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের কড়া শাস্তির দাবিও তুলেছেন ওই শিক্ষিকা। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি সামান্য বেতনে ওই স্কুলে চাকরি করি। স্কুলটিকে ভালবেসেই ১৭ বছর ধরে চাকরি করছি। কিন্তু উনি প্রধান শিক্ষক হয়ে আসার পর থেকে আমি সম্মানের সঙ্গে চাকরি করতে পারছি না। আমাকে একটি বিয়েবাড়িতেও কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন উনি। এর আগে এক দিদিমণির শ্লীলতাহানিও করেছিলেন। সে সময় উনি হাতেপায়ে ধরে বিষয়টি মিটিয়ে নেন। তবে আমি এর শেষ দেখতে চাই।’’
অন্য দিকে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মঙ্গলবারই ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আউসগ্রাম থানায় অভিযোগ করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ওই শিক্ষিকা যে সব অভিযোগ করেছেন তা সর্বৈব মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। উনি আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাইছেন। আমরা এ নিয়েই ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষিকা, পরিচালন সমিতির সদস্য, পড়ুয়া এবং অভিভাবক সকলের সই সম্বলিত একটি অভিযোগপত্র থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। উনি সকলের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। যখন তখন ছুটি নেন। এর প্রতিবাদ করাতেই উনি এই ভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন প্রায়শই। এর আগেও এক প্রবীণ শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন তিনি।’’
এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও পূর্ব বর্ধমানের শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদেরও পাল্টা চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই প্রধান শিক্ষক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy