পাহারায় চিকিৎসা। ছবি: সুজিত মাহাতো।
স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করা দূর অস্ত। তার আগেই রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে গেল পুরুলিয়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল! বৃহস্পতিবারের পরে শুক্রবারও এই হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা চালু করতে পারল না স্বাস্থ্য দফতর।
অথচ, বুধবার বিকেলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে জরুরি বার্তা পেয়েই বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে বিবেকানন্দ নগরে (হাতোয়াড়া) নির্মীয়মাণ এই হাসপাতালে বহির্বিভাগের আংশিক পরিষেবা চালু করার চেষ্টা করেছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সেই মোতাবেক ওষুধপত্র-সহ পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে দুই চিকিৎসক বৃহস্পতিবার সকালে নতুন হাসপাতালে পৌঁছলেও পুরুলিয়া কেন্দ্রের কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থী সুদীপ মুখোপাধ্যায় এবং জোটের কর্মীদের বাধার মুখে পড়ে স্বাস্থ্য দফতরকে পিছু হঠতে হয়। হাসপাতাল থেকে ফিরে যান দুই চিকিৎসক। জোটের কর্মীদের প্রশ্ন ছিল, নিবার্চনী আচরণবিধি চালু থাকাকালীন কী ভাবে নতুন একটি প্রকল্প চালু হতে পারে?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুক্রবার ফের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বহির্বিভাগের পরিষেবা চালু করার চেষ্টা করা হয়। এ দিন সকাল থেকে অবশ্য আউটডোরে চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ডিএসপি পদমযার্দার এক আধিকারিকের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী সেখানে পৌঁছয়। ছিলেন পুরুলিয়া মফস্সল থানার ওসি। এর পরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে নিয়ে এই হাসপাতালে পৌঁছন। সঙ্গে ছিলেন প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক চিরঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। ততক্ষণে সেখানে জোটের প্রার্থী সুদীপবাবু, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা পুরুলিয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান কৃষ্ণপদ বিশ্বাস-সহ বাম-কংগ্রেসের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী চলে এসেছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সুদীপবাবু জানতে চান, এ দিন থেকে কী পরিষেবা চালু করা হবে। হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছেন জানিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হাসপাতালে ঢুকে যান। সুদীপবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতাল পরিদর্শনে তাঁরা আসতেই পারেন। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’’
শেষ অবধি এ দিনও আউটডোর পরিষেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। বেশ কিছুক্ষণ হাসপাতালের বিভিন্ন ঘর, বারান্দা ইত্যাদি পরিদর্শন করে বেরিয়ে অনিলবাবু জানান, আরও কী কী বিভাগ চালু করা যায়, তা দেখতে তাঁরা এ দিন এসেছিলেন। কী পরিষেবা চালু হয়েছে, জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ‘‘এক সঙ্গে তো হবে না। ধাপে ধাপে হবে।’’ সকালে কেন কোনও চিকিৎসক আসেননি, সে প্রশ্নের জবাবে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, সকালে কিছু সমস্যা ছিল। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
এ দিকে, হাসপাতাল চত্বরে এত পুলিশ দেখে সুদীপবাবু প্রশ্ন তোলেন, একটা ভাল কাজ শুরু হবে। সেখানে এত পুলিশ কেন? তা ছাড়া কোনও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালের পরিষেবা চালু করার ব্যাপারে আমরা শুধুমাত্র সরকারি নির্দেশিকা দেখতে চেয়েছিলাম বৃহস্পতিবার। কিন্তু, স্বাস্থ্য দফতরের লোকজন নির্দেশিকা দেখাতে পারেননি।’’ তাঁর অভিযোগ, এত বড় হাসপাতালে পরিষেবা চালু করা হচ্ছে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল থেকে মাত্র দু’জন ডাক্তার নিয়ে। রাস্তা হয়নি, পানীয় জলের বন্দোবস্ত হয়নি। ওষুধ পর্যন্ত নেই। গাড়িতে বাক্সবন্দি করে ওষুধ নিয়ে আসা হয়েছে চিকিৎসকদের সঙ্গে। গোটা ব্যাপারটাই হাস্যকর। জোটের নেতাদের বক্তব্য, ‘‘তড়িঘড়ি অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই এই হাসপাতাল চালুর পিছনে নিশ্চয় কোনও কারণ রয়েছে। এর তদন্ত দরকার।’’ সিপিএম নেতা কৃষ্ণপদবাবুর হুঁশিয়ারি, এ ভাবে রাতারাতি নড়বড়ে পরিকাঠামো নিয়েই হাসপাতাল চালু করার চেষ্টা হলে তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভে নামবেন।
যা শুনে তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধির নামে মানুষকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করতে চাইছেন জোটের নেতা-কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা পাইয়ে দিতে আমাদের সামনেও রাস্তায় নামা ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা থাকছে না।’’
দই তরফের হুঙ্কার, পাল্টা হুঙ্কারে রাজনীতির তাপ বাড়লেও আখেরে সাধারণ মানুষের কতটা উপকার হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy