Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ঝোঁক সেই সুগার-ফ্রি মিষ্টিতেই

মিষ্টি চাই-ই। কিন্তু, তাতে যেন মিষ্টত্ব কম থাকে—ভাইফোঁটার মুখে আমবাঙালির প্রার্থনা এটাই! বীরভূমের প্রতিষ্ঠিত মিষ্টি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতা, নানা জনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল বহু জনেরই নজর কম চিনির মিষ্টি কিংবা একেবারে ‘সুগার ফ্রি-র’ দিকে। রসনা আর রোগের মাঝে মোক্ষম দাওয়াই এই মিষ্টি।

সিউড়ির দোকানে কম মিষ্টি দেওয়া ছানার কেক ও সরপুরিয়া।

সিউড়ির দোকানে কম মিষ্টি দেওয়া ছানার কেক ও সরপুরিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

মিষ্টি চাই-ই। কিন্তু, তাতে যেন মিষ্টত্ব কম থাকে—ভাইফোঁটার মুখে আমবাঙালির প্রার্থনা এটাই! বীরভূমের প্রতিষ্ঠিত মিষ্টি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতা, নানা জনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল বহু জনেরই নজর কম চিনির মিষ্টি কিংবা একেবারে ‘সুগার ফ্রি-র’ দিকে। রসনা আর রোগের মাঝে মোক্ষম দাওয়াই এই মিষ্টি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হু-এর রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের জনসংখ্যার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যাও। গত ২৫ বছরে বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার ধাপ বেড়েছে। অতিরিক্ত ওজন বাড়া, ওবেসিটি, বয়স বাড়াকেই এ অন্যতম কারণ বলে করছে তারা। এই আবহেই এসে হাজির বাঙালির তেরো পার্বনের একটা ভাইফোঁটা—যার সঙ্গে মিষ্টির যোগ অঙ্গাঙ্গী। যে মিষ্টির সঙ্গে আবার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ডায়াবেটিসের।

শুধু কি বাড়ির ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান? ইদানীং একাধিক শহরে জুড়ে গিয়েছে উদ্যোক্তাদের গণ ফাইফোঁটা, আবার কোথাও সম্প্রীতির ফোঁটার অনুষ্ঠান। এমন সামাজিক অনুষ্ঠানেও মিষ্টি ছাড়া কথাই নেই। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন জনসংযোগ আধিকারিক তথা বর্তমানে একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মসচিব অমিতাভ চৌধুরীর মুখে মিষ্টিপ্রীতি বরাবরের। অশীতিপর দিদি মীরা চক্রবর্তীর কাছে যাবেন ভাইফোঁটা নিতে। সুগারের কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে মিষ্টিতে তাঁর নিষেধ রয়েছে। এ দিকে, মিষ্টি না খেলে, দিদি কষ্ট পাবেন। সমাধানের উপায় খুঁজছেন তিনি। বললেন, ‘‘উপায় কেবল সুগার ফ্রি মিষ্টি।’’

অমিতাভবাবুর মতো অনেকেই সমঝোতার রাস্তায় হাঁটছেন। এক যুগ ধরে বোলপুরের জামবুনি এলাকায় গণ ভাইফোঁটা এবং সম্প্রীতির ফোঁটার অনুষ্ঠান করে আসছেন হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতির দাদা পীযূষ মুখোপাধ্যায়ের মতো বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে অধ্যাপিকা সবুজকলি সেন মতো অনেকেই ওই অনুষ্ঠানের অতিথি। অতিথিদের পাতে কেমন মিষ্টি দেবেন, তা নিয়ে চিন্তিত হরিপ্রসাদবাবু। তিনিও রাখছেন কম মিষ্টি এবং সুগার ফ্রি-র মিষ্টির।

উৎসবের মরসুমে সুগারের রোগীদের সমস্যার কথা মেনেছেন চিকিৎসক অনির্বাণ দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “উৎসব অনুষ্ঠানে খাওয়ার বৈচিত্র্যের থেকেও সমস্যা হয় পরিমাণে। যেমন ‘অল্প খাওয়া’ কথাটির নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তবে মিষ্টি ছাড়া সন্দেশ যেমন চিত্তরঞ্জন, সুগার ফ্রি রসগোল্লা খাওয়া যায়। একদম ‘না’ বলব, ফাস্ট ফুডে।”

এ দিকে, কম মিষ্টি তো বটেই সুগার ফ্রি মিষ্টিও জেলায় বহু দোকানেই প্রস্তুত। বোলপুরের চিত্রা মোড়ের মিষ্টি ব্যবসায়ী উদয়শঙ্কর মোদক সুগার ফ্রি সন্দেশ, চিত্তরঞ্জন থেকে শুরু করে প্রাণহারা বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করেছেন। তিনি দোকানের মিষ্টি নিয়েই চলে যান বোন মিতালি মোদকের কাছে ফোঁটা নিতে। সুপার মার্কেট এবং ডাঙ্গালি কালীতলা এলাকার মিষ্টির দোকান রয়েছে শ্যামল মণ্ডলের। তিনি বলেন, “সাত দশকের বেশি পুরনো দোকান আমাদের। সুগারের রোগীদের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে বিশেষ মিষ্টি।” যেমন—রসগোল্লা, ভাপা সন্দেশ। শ্যামলবাবু জানান, তিনি নিজেও সুগার রোগী। চার দিদি ও তিন বোন রয়েছে তাঁর। ভাইফোঁটার জন্যে সকলে এসে পড়েছেন ত্রিশুলাপট্টির বাড়িতে। মিষ্টি ব্যবসায়ী ভাইয়ের মুখে মিষ্টি পড়বে না, তা কি হয়? প্রশ্ন করলেন শ্যামলবাবুর দিদি লিলিমা রায়, মহিমা কুণ্ডু এবং বোন মঞ্জুলা ঘোষেরা। তাঁদের সঙ্গে থাকছে সুগার ফ্রি মিষ্টি।


বোলপুরের দোকানে সুগার-ফ্রি মিষ্টি প্রাণহারা। বিকোচ্ছে ‘ভাইফোটা’ লেখা সন্দেশও।

দুবরাজপুরের প্রসিদ্ধ মিষ্টি ব্যবসায়ী রাম দে সুগার রোগীদের জন্য বানিয়েছেন কাস্টার্ড ভাপা, সন্দেশ। শাহি কলাকান্ত ও মনোরমার মতো খুব কম মিষ্টির সন্দেশও রয়েছে। আবার নলেন গুড় বাজারে এসে পড়ায় ভাইদের পাতে থাকছে জলভরা সন্দেশ। ক্ষীর এবং চকোলেটের ফিউশনে এভারগ্রিন মিষ্টিও থাকছে।

জেলা সদর সিউড়ি কিংবা মহকুমা শহর রামপুরহাটও পিছিয়ে নেই সুগারের রোগীদের জন্যে মিষ্টি তৈরির আয়োজন থেকে। সিউড়ির প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী উৎপল ঘোষাল জানান, কাস্টার্ড সন্দেশ থেকে শুরু করে কম চিনির মিষ্টির চাহিদা তুঙ্গে। একই দাবি বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী সুশান্ত সাহারও। রামপুরহাটের বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি দোকান রয়েছে চন্দন মণ্ডল, রাজা কুমারের। এঁরা দোকানে সুগার ফ্রি মিষ্টি না রাখলেও কম মিষ্টির ওষুধ রেখেছেন। আগামী দিনের সুগার ফ্রি মিষ্টি যে রাখবেন, জানাতে ভুলছেন না তা-ও।

আর দাম?

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেশির ভাগ মিষ্টির দামই ১০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে। রসগোল্লা ৬, ১০, ১৫ টাকা, জলভরা সন্দেশ ১২, ১৫, ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। চিত্তরঞ্জন, প্রাণভরা কিংবা ভাপা সন্দেশও মিলছে একই দামে।

—নিজস্ব চিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

More Popular Sugar Free Sweets Bhai Phota
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy