বেআইনি নির্মাণ ভাঙার সময় মহকুমাশাসকের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। বুধবার রামপুরহাটের নিশ্চিন্তপুরে। নিজস্ব চিত্র।
আপাতত এক মাস উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকবে বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তার আগে এ দিন সকালে সেই বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ ঘিরেই উত্তেজনা ছড়াল রামপুরহাট ও বোলপুরে। রামপুরহাটে মহকুমাশাসককে ঘিরে বিক্ষোভ হল। বোলপুরেও পুলিশ ও তৃণমূলের পুর-প্রতিনিধিকে পড়তে হল ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে। অন্য দিকে, সিউড়ি পুরসভায় উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি।
রাস্তার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এ দিন সকালে রামপুরহাট-দুমকা জাতীয় সড়কের উপরে রামপুরহাট শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় মহকুমা পুলিশ-প্রশাসন। তার আগে বুধবার রাতে শহরে পুলিশ ও রামপুরহাট পুরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছিল। এ দিন সকাল সকাল অভিযান শুরু হয়। সাড়ে সাতটা নাগাদ দেখা যায়, ছ’ফুঁকো পেরিয়ে জাতীয় সড়কের দু’ধারে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা পরের পর গাড়ি সারানোর দোকান, গ্যারাজ, ফলের দোকান, তেলেভাজা, বিরিয়ানি দোকান, অস্থায়ী কাপড়ের দোকান, সেলুন, খাবারের দোকান ভেঙে ফেলা হয় পে-লোডারের সাহায্যে।
ঘটনাস্থলে ছিলেন মহকুমাশাসক, বিএলএলআরও দফতরের কর্মী, বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী, রামপুরহাট পুরসভার কর্মী, পুরপ্রধান এবং অধিকাংশ পুর-প্রতিনিধি। নিশ্চিন্তপুরে দু’টি ক্লাব এবং সিটু ও তৃণমূলের দু’টি ইউনিয়ন কার্যালয়ও ভাঙা পড়ে। ফুটপাতের দোকান ভাঙচুর করার খবর পেয়ে উচ্ছেদে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম পুর-প্রতিনিধি সঞ্জীব মল্লিক। দু’পক্ষের খানিক ধাক্কাধাক্কি হয়। কিন্তু, পুলিশ তাঁকে সরিয়ে দেয়। এই নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়।
চোখের সামনে দোকান ভাঙতে দেখে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। সমর দত্ত নামে এক তেলেভাজা বিক্রেতা বলেন, ‘‘আমার ৩৫ বছরের দোকান। এই দোকানের উপরে সংসার চলে। এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, সংসার কী ভাবে চালাব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ সুভাষ চন্দ্র, আনিজা বিবি নামে দুই দোকানির ক্ষোভ, ‘‘রাতারাতি দোকান ভেঙে ফেলা হল। আগের রাতে মাইকিং করে পরের দিন সকালেই দোকান ভাঙা হল। দোকানের ভিতরে থাকা সামগ্রী বের করার পর্যন্ত সময় দেওয়া হল না আমাদের!’’
ঘণ্টাখানেক অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ চলার পরে মহকুমাশাসক এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে গেলে তাঁর গাড়ি ঘিরে দোকানিরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তোলেন, শহরের মধ্যে থাকা দোকান না-ভেঙে যেখানে ফাঁকা বড় রাস্তা, সেখানে কেন ভাঙচুর করা হল? পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। এ দিকে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযানের কথা জেনে শহরের ছ’ফুঁকো, ডাকবাংলা মোড়, পাঁচমাথা মোড় এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীরা তাঁদের
দোকানের মালপত্র নিজেরাই সরিয়ে নিতে থাকেন। অবৈধ নির্মাণও সরাতে দেখা যায় অনেককে। নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত চলাকালীন সিটুর পক্ষ থেকে রামপুরহাট মহকুমা শাসককের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য অমিতাভ সিংহ কোনও রকম পুনর্বাসন ছাড়া আমানবিক ভাবে ফুটপাত দখল মুক্ত করার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। দলমত নির্বিশেষে আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।
মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) সৌরভ পাণ্ডে বলেন, ‘‘শহরের যানজট রুখতে, দুর্ঘটনা এড়াতে এবং সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করতে ফুটপাতের উপরে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়েছে।’’ অন্য দিকে, তারাপীঠে এ দিন রামপুরহাট-সাঁইথিয়া রাজ্য সড়কের দু’পাশে অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে দেওয়ার জন্য দোকানিদের পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়। তবে, উচ্ছেদ অভিযান সেখানে হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy