Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

সংসারের পাশে থাকতে গিয়ে পরিবেশেরও পাশে

পরিবেশবান্ধব থালা-পাতা, যা তৈরি হয়েছে সুপারি গাছের খোলা দিয়ে। তাঁর এমন উদ্যোগই প্রশংসা কুড়োচ্ছে।

পৌষমেলায় পসরা নিয়ে বিশ্বভারতীর ছাত্রী নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

পৌষমেলায় পসরা নিয়ে বিশ্বভারতীর ছাত্রী নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

বাসুদেব ঘোষ 
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:১৫
Share: Save:

পৌষমেলায় পসরা নিয়ে বসেছিলেন সংসারকে সাহায্য করতেই। সেই কাজে পরিবেশকেও সাহায্য করেছেন বিশ্বভারতীর ছাত্রী নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়। কারণ তাঁর পসরা হল পরিবেশবান্ধব থালা-পাতা, যা তৈরি হয়েছে সুপারি গাছের খোলা দিয়ে। তাঁর এমন উদ্যোগই প্রশংসা কুড়োচ্ছে।

এ বছরও পৌষমেলার মাঠে অনেকেই দেখেছেন তাঁকে খোলা আকাশের নিচে সুপারি গাছের খোলা দিয়ে তৈরি নানা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে। তাঁর ছবি ছড়িয়েছে ফেসবুকেও। বিশ্বভারতী সঙ্গীত ভবনের এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী নিবেদিতা জানাচ্ছেন, এই নিয়ে মেলায় পরপর তিন বছর দোকান করলেন তিনি।

প্লাস্টিক বা থার্মোকলের থালা-বাটিতে দূষণের অভিযোগ রয়েছে বরাবরই। সেই অভিযোগ থেকে বাদ যায়নি শান্তিনিকেতনের পৌষমেলাও। সেই পৌষমেলাতেই বিশ্বভারতীর এক ছাত্রীর এমন উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে।

সুপারি গাছের খোলা দিয়েই নিবেদিতা তৈরি করেছেন বিভিন্ন ধরনের থালা, বাটি। সেই সব জিনিসের পসরা নিয়ে চারদিনই পৌষ মেলায় বসেছিলেন তিনি।

সংসারের প্রয়োজনেই তিনি এই কাজ শুরু করেন, জানাচ্ছেন নিবেদিতা। সুপারি গাছের থালা, বাটি বিক্রি করে লাভের অর্থ দিয়েই কিছুটা সংসার ও বাকিটা পড়াশোনার খরচ চালান তিনি। নিবেদিতা জানান, তাঁর বাবা মারা যান ২৬ বছর আগে। দুই ভাই বোনকে নিয়ে তাঁর মা সংসারের হাল ধরেন। মা একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বছর কয়েক আগে তিনি অবসর নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই অবস্থায় আমার ও দাদার পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খাওয়ার জোগাড় হয়েছিল মায়ের। তাই সংসারের হাল কিছুটা ধরতে মায়ের পাশে দাঁড়াই।’’

পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গেই হাওড়ায় তিনি প্রশিক্ষণ নেন সুপারি গাছের খোলা থেকে নানা সামগ্রী তৈরির। এখন লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সব জিনিস বিক্রি করে সংসারের খরচ কিছুটা হলেও সামলাচ্ছেন নিবেদিতা। তাঁর কথায়, ‘‘থালা, বাটি তৈরি করার জন্য নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে সুপারির খোলা নিয়ে আসি। তারপর সেগুলি বাড়িতে কেটে তাপ দিয়ে নানান আকৃতির থালা এবং বাটি তৈরি করি। এই ব্যবসা করে মাসে যা আয় হয় তার থেকে কিছুটা সংসারের খরচের জন্য টাকা মায়ের হাতে তুলে দিই। বাকি টাকায় নিজের লেখাপড়ার চালাই।’’

নিবেদিতা বলছেন, ‘‘চার দিনের পৌষমেলায় এ বার বিকিকিনি ভালোই হয়েছে। এই ধরনের নতুন জিনিস দেখে মানুষ আসছেন ও চাহিদাও রয়েছে যথেষ্ট।’’ এর পরে আগামী কয়েক মাসে তিনি যেতে চান কলকাতা, চন্দননগর ও ঝাড়গ্রামের নানা মেলায়। প্লাস্টিক বা থার্মোকলের ব্যবহারের ফলে দিন দিন পরিবেশে যেভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে সেখানে নিবেদিতার এমন উদ্যোগের তারিফ করছেন শহরবাসী। পড়াশোনার পাশাপাশি এ ভাবে আর্থিক উপার্জন করে সংসারের

হাল ধরার যে চেষ্টা, তাকেও কুর্নিশ জানিয়েছেন নিবেদিতার সহপাঠীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Visva Bharati Eco Friendly Poush Mela
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy