রাস্তা অবরোধে আটকে বাস। অগত্যা হাঁটাই ভরসা। কোতুলপুরের গোপালপুরে শনিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র।
এক কিশোরকে পিষে দিয়ে তার দেহ টেনে হিঁচড়ে কয়েকশো মিটার দূর পর্যন্ত নিয়ে গেল মালবোঝাই ট্রাক। ক্ষুব্ধ হয়ে বাসিন্দারা ওই ট্রাক থেকে খালাসিকে নামিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। ভাঙচুর চালালেন ট্রাকে। শনিবার কোতুলপুর থানার গোপালপুর গ্রামের মোড়ে বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কে ওই দুর্ঘটনায় অর্পণ কুণ্ডু (১৭) নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। আগের দিন শুক্রবার রাতে হুড়া থানার লালপুর গ্রামে মহাত্মা গাঁধী কলেজের অদূরে, জল আনতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় আর এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। তার নাম অক্ষয় মণ্ডল (১৭)। দু’টি জায়গাতেই মানুষজন অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চলাচলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে যান নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন।
শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে কোতুলপুর থানার গোপালপুর গ্রামের মোড়ে। মৃত ছাত্র অর্পণের বাড়ি ওই গ্রামেই। জয়পুরের রাজগ্রাম শশিভূষণ রাহা ইন্সস্টিটিউশন সে ভোকেশনাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছিল। গ্রামবাসীর ক্ষোভ, এ দিন রাস্তা পার হওয়ার সময় আরামবাগ থেকে ট্রান্সপোর্টের মালপত্র বোঝাই বিষ্ণুপুরগামী একটি দশ চাকার ট্রাক অর্পণকে চাপা দিয়ে প্রায় আধ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় জনতা উত্তেজিত হয়ে তাড়া করে ট্রাকটির পিছনে। চালক ট্রাক থামিয়ে পালিয়ে যেতে পারলেও ভিতরে থাকা খালাসিকে বাসিন্দারা ধরে ফেলেন। এরপরেই বাসিন্দারা ট্রাকে ভাঙচুর চালায়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে গাড়ি চালানোর জন্যই এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল। প্রাণ গেল একটি তরতাজা ছেলের। তাঁরা এ বিষয়ে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো ও ওই ট্রাক চালককে ধরার দাবিতে অবরোধ শুরু করেন। দিনের ব্যস্ত সময়ে এই অবরোধে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। অনেকে মালপত্র নিয়ে হাঁটা শুরু করেন। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ চলার পর গ্রামবাসীকে বুঝিয়ে রাস্তা মুক্ত করেন পুলিশ কর্মীরা।
ছেলের মৃত্যুর সময় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন না অর্পণের মা-বাবা। তাঁরা গিয়েছিলেন পাশের গ্রাম গোগড়ায় অর্পণের মামার বাড়িতে। ঘটনার খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অর্পণের বাবা-মা দু’জনেই। কেউই কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। গ্রামবাসী জানান, অর্পণরা দুই ভাই। সেই ছিল ছোট। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে গ্রামে। অর্পণের স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার সামন্ত বলেন, “অর্পণ ভাল ছাত্র ছিল। দুর্ঘটনায় তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে এ দিন স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়।” পুলিশ জানিয়েছে, খালাসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক চালককে ধরার চেষ্টা চলছে।
এ দিকে, ঠিক ১২ ঘণ্টা আগে শুক্রবার রাত প্রায় ৯টার সময় অন্য একটি দুর্ঘটনা ঘটে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়কের উপর হুড়া থানা এলাকার লালপুর গ্রামে মহাত্মা গাঁধী কলেজের অদূরে। মেস থেকে পানীয় জল আনতে বেরিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় অক্ষয় মণ্ডল নামের এক ছাত্রের। তার বাড়ি হুড়া থানারই দেশড়া গ্রামে। অক্ষয় হুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। সে স্থানীয় একটি মেসে থাকত। শুক্রবার রাতে কলেজের অদূরে একটি টিউবওয়েল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে সে বেরিয়েছিল। সেই সময় বাঁকুড়ার দিক থেকে পুরুলিয়ামুখী একটি ট্রেলার যাচ্ছিল। উল্টো দিক থেকে আসছিল একটি ট্রাক। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আচমকা ট্রেলারটি ডানদিকে খানিকটা চেপে গেলে উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাকটি বাঁদিকে নেমে গিয়ে একটি গাছে ধাক্কা মারে। গাছের একটি শুকনো ডাল ওই ছাত্রের মাথায় পড়ায় সে ছিটকে ট্রাকের চাকার কাছে লুটিয়ে পড়ে। ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার পরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় মানুষজনই ধাওয়া করে ট্রাকটি আটক করেন। খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ট্রাক ও চালককে আটক করা হয়। রাতে এই সড়কে বেপরোয়া যান চলাচলের অভিযোগ তুলে বাসিন্দারা নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন। তাঁরা রাস্তার উপরে ট্রাফিক ব্যারিয়ার বসানোর দাবি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy