লাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরৎচন্দ্র প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র।
ছেলেমেয়েদের চুল আঁচড়ে দিতে পকেটে চিরুনি নিয়ে ঘোরেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক শরৎচন্দ্র প্রামাণিক। পড়াশোনাও যে এতটা আগ্রহের ব্যাপার হতে পারে, কে ভেবেছিল! পুরুলিয়ার বরাবাজারে কোনও পড়ুয়া যদি স্কুলে যেতে না পারে, তাহলে কেঁদে ভাসায় বাড়িতে। আসলে, লাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশটাই এমন। সৌজন্যে শরৎ পণ্ডিত।
তাঁর কাছে ছাত্রছাত্রীরাই সব। স্কুল অন্তঃপ্রাণ শরৎ পণ্ডিত জানেন, প্রাথমিকের পড়ুয়াদের পড়াশোনা ভাল লাগে না। তাই তিনি পড়ার বইয়ে ঢুকিয়েছেন খেলা। ফল হাতেনাতে। যে পড়ুয়া স্কুলের নাম শুনলে কেঁদে ভাসাত, এখন তারাই কোনও কারণে স্কুলে আসতে না পারলে কান্নাকাটি করে বাড়ি মাথায় তোলে। বিদ্যালয়ের সামনেই বাড়ি দুখু মাহাতোর। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম যে পড়ুয়া বিদ্যালয়ে আসতে না চেয়ে কান্নাকাটি করত, আজ সেই পড়ুয়াই বিদ্যালয়ে আসতে চেয়ে কাঁদছে। শরৎ পণ্ডিতকে ছেলেমেয়েদের যত্ন করে চুল আঁচড়ে দিতেও দেখেছি। এমন শিক্ষক দুর্লভ।’’
শরৎ পণ্ডিত জানেন, পড়ায় খেলা মেশালেই শুধু হবে না। উৎসাহ ধরে রাখতে ভালমন্দ মিড ডে মিলও চাই। তাই বিদ্যালয়ের ছাদেই করেছেন সবজির বাগান। যা থেকেই নিয়মিত হচ্ছে মিড ডে মিলের রান্না। স্কুলে নেই কোনও চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা। পড়ুয়া থেকে শিক্ষক— সকলেই বসেন মাটিতে। ছোটদের পড়ায় উৎসাহ বাড়াতে শরৎ পণ্ডিত চালু করেছেন একাধিক পুরস্কার। যেমন, যে পড়ুয়া সারা বছরে এক দিনও স্কুল কামাই করবে না, সে পাবে পদক। পর পর তিন বছর স্কুল এক দিনও কামাই না করলে আদর্শ বিদ্যার্থী পদক হিসেবে পাবে রৌপ্যপদক। ২০১৯-য়ে ছ’জন আদর্শ বিদ্যার্থী পুরস্কার পেয়েছিল। যে পড়ুয়ারা এক দিনের জন্যও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে না তাদের এই উৎসাহের পিছনে থাকে বাবা মায়ের অবদান। তাই দেওয়া হয় আদর্শ পিতা ও আদর্শ মাতা পুরস্কারও। এ ছাড়াও প্রতি বছর সেরা শিক্ষার্থী পুরস্কার দেওয়া হয়।
যদিও নিজের কৃতিত্ব জাহির করতে নারাজ শরৎ। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের বাবা-মা, বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা ছাড়া আমার একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব ছিল না।’’ বরাবাজার ব্লকের বিডিও মাসুদ রায়হান বলেন, ‘‘যে ভাবে বিদ্যালয়কে সাজিয়ে তুলেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’’ বরাবাজার ১ নম্বর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কৌশিক কুন্ডু বলেন, ‘‘আমি আগে ওঁর বিদ্যালয়ে অন্য চক্রের শিক্ষকদের নিয়ে গিয়েছিলাম। ওঁকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত।’’ জাতীয় শিক্ষক হিসেবে ২০১২-য় রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন শরৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy