Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
bankura

বাঁকুড়ায় বিরসা-মূর্তি গড়তে আদিবাসী বাড়ির মাটি সংগ্রহ

তৃণমূল সূত্রে খবর, অমিত শাহকে চিঠি দেওয়ার জন্য এক লক্ষ পোস্টকার্ডে অলচিকি হরফে প্রতিবাদ ছাপিয়ে বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি ব্লক নেতৃত্বকে পাঠিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পাঠানো হবে এই চিঠি। চলছে স্বাক্ষর ও টিপছাপ সংগ্রহ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পাঠানো হবে এই চিঠি। চলছে স্বাক্ষর ও টিপছাপ সংগ্রহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:০৫
Share: Save:

বিরসা মুন্ডার মূর্তির বেদি তৈরি করতে বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি আদিবাসী ঘরের মাটি সংগ্রহে নেমে পড়লেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সঙ্গে বাঁকুড়ায় ‘শিকারির মূর্তিতে’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মালা দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁর কাছে আদিবাসীদের স্বাক্ষর করা প্রতিবাদপত্র পাঠানোর কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। জেলার সব ক’টি ব্লক নেতৃত্বকে দ্রুত এই কর্মসূচি সেরে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর জেলা গডেৎ বিপ্লব সরেন বলেন, “সরকারি ভাবে হোক বা দলীয় ভাবে, বিরসা মুন্ডার মূর্তি গড়ার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে যে ভাবে বিরসা মুন্ডাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে, আমরা তা সমর্থন করি না।” বিধানসভা ভোটের মুখে আদিবাসী মন পেতে তৃণমূল এই ‘নাটক’ করছে বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা অবশ্য বলেন, ‘‘এখানে ভোটের রাজনীতি খোঁজা ঠিক নয়।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, অমিত শাহকে চিঠি দেওয়ার জন্য এক লক্ষ পোস্টকার্ডে অলচিকি হরফে প্রতিবাদ ছাপিয়ে বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি ব্লক নেতৃত্বকে পাঠিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সমস্ত পোস্টকার্ড ব্লক নেতৃত্ব জেলায় পাঠাবেন। তার পরে, সেই সব চিঠি আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলা ডাকঘরে গিয়ে অমিত শাহের উদ্দেশে পাঠানো হবে।
মন্ত্রী শ্যামলবাবু দাবি করেন, “জেলায় এসে এক শিকারির মূর্তিকে বিরসা মুন্ডার মূর্তি বলে মালা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই অপমানের প্রতিবাদে আদিবাসীরা তাঁকে চিঠি পাঠাবেন। এক লক্ষ চিঠি জেলা থেকে দিল্লিতে পাঠানো হবে। আমরা বিরসা মুন্ডার মূর্তি তৈরি করব। সে জন্য প্রতিটি আদিবাসী পরিবারে আমাদের দলীয় কর্মীরা গিয়ে বিরসা মুন্ডার মূর্তির বেদির জন্য মাটি সংগ্রহ করছেন। সেই সঙ্গে চিঠিতে স্বাক্ষর করাচ্ছেন ও টিপছাপ নিচ্ছেন।”
গত ৫ নভেম্বর বাঁকুড়ায় আসেন শাহ। বাঁকুড়া শহর লাগোয়া পোয়াবাগান এলাকায় একটি আদিবাসী পুরুষের মূর্তিকে বিরসা মুন্ডার মূর্তি দাবি করে সেখানে শাহকে দিয়ে মাল্যদানের ব্যবস্থা করা হয় বিজেপির তরফে। একটি আদিবাসী সংগঠন দাবি করে, মূর্তিটি বিরসার নয়। এর পরেই ওই মূর্তির সামনে বিরসা মুন্ডার ছবি রেখে সেখানে মাল্যদানের ব্যবস্থা করা হয়।
পরদিন তৃণমূলের জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে ওই মূর্তি গঙ্গাজল ও দুধ দিয়ে ‘শুদ্ধকরণ’করা হয়। তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন, মূর্তিটি বিরসা মুন্ডার না হলেও শাহের স্পর্শে সেটি ‘অশুদ্ধ’ হয়েছিল বলেই আদিবাসী মানুষজন ‘শুদ্ধকরণ’ করেছেন। তখনই পোয়াবাগান লাগোয়া এলাকায় বিরসা মুন্ডার ত্রিশ ফুটের মূর্তি গড়ার কথা ঘোষণা করেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া শহর লাগোয়া দ্বারকেশ্বর নদ সংলগ্ন রাজগ্রাম এলাকায় কয়েক কাঠা জমি মূর্তি গড়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
তৃণমূলের শুদ্ধকরণ কর্মসূচিকে আদিবাসী সংস্কৃতির অপমান বলে দাবি করে বিজেপির জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে ফের ওই মূর্তিকে গোবর জল দিয়ে ‘শুদ্ধকরণ’ করা হয়। বিরসা মুন্ডার মূর্তি নিয়ে বিতর্কে বিরক্ত হয়ে আদিবাসী সংগঠন পোস্টারও দেয় বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল এলাকায়।
ডিসেম্বরে জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় আদিবাসী সমাজ। তবে তৃণমূলের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মাটি সংগ্রহের কর্মসূচিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আদিবাসী সমাজের একাংশ।
জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের মানুষের একটা বড় অংশের ভোট হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ সাঁওতাল, মুন্ডা, ভূমিজ-সহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। ফলে তৃণমূলের এই কর্মসূচির পিছনে আদিবাসী ভোট ফেরানোও একটা কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব এর সঙ্গে ভোট-রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করছেন।
‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর জেলা গডেৎ বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘বিরসা মুন্ডাকে নিয়ে আবেগ উস্কে দেওয়ার বদলে, আদিবাসী-ভোট কেন বিমুখ হয়েছে তৃণমূল যদি সেই কারণ অনুসন্ধান করত, তা হলে বরং কাজের কাজ হত।”
বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের কটাক্ষ, “ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে আদিবাসী আবেগে বারবার আঘাত করছে তৃণমূল।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামলবাবুর পাল্টা দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী মানুষজনের উন্নয়নের জন্য দিনরাত এক করে কাজ করছেন। জঙ্গলমহলে এখন শান্তি ফিরেছে। আমরা চাই বিরসা মুন্ডার মূর্তি গড়ার কাজে জেলার সমস্ত আদিবাসী মানুষের ভূমিকা থাকুক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

bankura Birsa Munda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy