কলকাতায় কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই
খোদ দলনেত্রীর ডাকা বৈঠক। তাতেও অনুপস্থিত থাকলেন বীরভূম জেলার একাধিক পুরসভার অনেক কাউন্সিলর!
লোকসভা ভোটে ফলের নিরিখে রাজ্যের পুরসভায় তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে। শহরাঞ্চলে দলের এই ফল বিশ্লেষণে মঙ্গলবার দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে কলকাতার নজরুল মঞ্চে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, সূত্রের খবর, দলনেত্রীর তলবেও বৈঠকমুখো হননি জেলার বহু তৃণমূল কাউন্সিলর। তাঁদের কেউ বলছেন, ব্যক্তিগত কাজ থাকায় যেতে পারেননি। অনেকে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। অনেকে মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। তবে, কাউন্সিলরদের একাংশের এই অনুপস্থিতি দলের অন্দরেই জল্পনা বাড়িয়েছে।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুক বোলপুর পুরসভার কথাই ধরা যাক। ২০ ওয়ার্ডের এই পুরসভায় তৃণমূলের ১৯ জন কাউন্সিলর। এক জন মারা গিয়েছেন। বাকি ১৮ জনের মধ্যে হাতেগোনা কয়েক জন এ দিন কলকাতায় গিয়েছেন বলে দল সূত্রেই জানা যাচ্ছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সেই হাতে গোনাদের এক জন এ দিন সন্ধ্যায় বললেন, ‘‘একটা গাড়িতে আমি-সহ চার জন কাউন্সিলর আজ কলকাতায় গিয়েছিলাম। বাকিরা কেউ যাননি বলেই জানি।’’ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেলি রায় অবশ্য পারিবারিক কাজে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘এ দিনই আমার শ্বশুরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থাকায় বৈঠকে যেতে পারিনি।’’ বাকি কাউন্সিলরদের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
ছবিটা আলাদা নয় জেলা সদরেও। সিউড়ি পুরসভায় ১৯ ওয়ার্ড। সব কাউন্সিলরই তৃণমূলের। এক জন মারা গিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ দিন দলনেত্রীর বৈঠকে যাননি অন্তত ৯ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান উপ-পুরপ্রধান বিদ্যাসাগর সাউ, প্রাক্তন দুই পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও তপন শুকুল এবং শহর সভাপতি অভিজিৎ মজুমদারের স্ত্রী-ও। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ির বর্তমান পুরপ্রাধন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দলের বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরের ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভের কারণেই এই অনুপস্থিতি। অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের প্রায় সকলেই কিন্তু সিউড়িতে ছিলেন এ দিন।
কেন যাননি, এ প্রশ্নের জবাবে গরহাজির দুই কাউন্সিলরের বক্তব্য, ‘‘আমাদের ক্ষোভ পুরপ্রধানের উপরে। দলের প্রতি নয়। দলের প্রতি আমাদের যথেষ্ট ভালোবাসা এবং আস্থা আছে। আমাদের ক্ষোভের কথা
বহুবার জেলা সভাপতি ও পর্যবেক্ষককে বলা হয়েছে। কিন্তু, আমাদের কথা গুরুত্ব পায়নি।’’ সে কারণেই তাঁরা এ দিনের মিটিংয়ে যাননি বলেও জানিয়ে দিচ্ছেন।
আর এক কাউন্সিলরের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আমাদের হাতে এত দিন কোনও বিকল্প ছিল না। এখন কিন্তু আছে!’’ তা হলে কি দলবদল করবেন? সে কথা এখনই জানাতে নারাজ ওই কাউন্সিলরেরা। পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁর সঙ্গে এ দিন ৯ জন কাউন্সিলর কলকাতায় গিয়েছিলেন। তাঁরা সকলে দলের সঙ্গেই আছেন। বাকিরা কেন যাননি, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পুরপ্রধান এড়িয়ে গিয়েছেন।
লোকসভা নির্বাচনে ফলাফলে ১৮ ওয়ার্ডের রামপুরহাট পুরসভায় তৃণমূল কেবল মাত্র ৪ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম এগিয়ে। বাকি ১৫টি ওয়ার্ডেই বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছে। সূত্রের খবর, ফলাফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে দলের অনেক কাউন্সিলরই যাননি। তৃণমূলের বর্তমান ১৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে অনুপস্থিত থেকেছেন ৮ জন।
বৈঠকে হাজির রামপুরহাটের উপ-পুরপ্রধান সুকান্ত সরকার বলেন, ‘‘অনেকেই মহিলা কাউন্সিলর। সেই জন্য তাঁদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আবার কেউ কেউ ঠিক সময়ে যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি বলে যেতে পারেননি।’’ তিনি জানান, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের স্ত্রী মারা গিয়েছেন। এ দিন বাড়িতে পারলৌকিক কাজ ছিল। ওই কাউন্সিলরকে সহযোগিতা করার জন্য ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও রামপুরহাটে থেকে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy