রাজু দত্ত। নিজস্ব চিত্র
সকাল ৮টা থেকে খোঁজ মিলছিল না রোগীর। ১০টা নাগাদ তাঁর দেহ উদ্ধার হল কুয়ো থেকে। সোমবার সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালের ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ঢাকনার তালা ভেঙে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিলেন রাজু দত্ত (৪৫)। পরিজনেরা প্রশ্ন তুলছেন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে ভর্তি থাকা রোগী কি আদৌ এতটা করতে পারেন? দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে শুরু হয়েছে তদন্ত।
পরিবার সূত্রের খবর, সোনামুখীর বড়কালীতলার বাসিন্দা রাজু ১৩ অগস্ট ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বিএমওএইচ (সোনামুখী) প্রিয়কুমার সাহানার দাবি, এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ রাউন্ড দেওয়ার সময়েও রাজুকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরেই কর্মীরা দেখেন, তাঁর শয্যা ফাঁকা। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় থানায়। বিএমওএইচ-এর দাবি, মাঝে এক সাফাইকর্মী রাজুকে কুয়োর কাছে ঘুরতে দেখেছেন বলে খবর আসে। পুলিশ এসে তল্লাশি শুরু করে। কুয়োর মধ্যে দেহ মেলে। দমকল এবং পুলিশ সেটি উদ্ধার করার পরে পরিজনেরা রাজুকে শনাক্ত করেন।
সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, হাসপাতালের ইন্ডোর বিভাগ আর বিএমওএইচ-এর অফিসের মাঝে কুয়ো ঘিরে জটলা। জালের ঢাকনা তখনও খোলা। হাসপাতালের ফেস্যিলিটি ম্যানেজার সোমেশচন্দ্র কোনার জানালেন, এই কুয়ো থেকেই দেহ উদ্ধার হয়েছে। রাজুর স্ত্রী শিখা দত্ত এবং মেয়ে মৌসুমী ঘোষ বলেন, ‘‘দিনে দুপুরে এত লোকের মধ্যে রোগী উঠে গিয়ে কুয়োয় ঝাঁপ দিল। কেউ দেখতে পেল না?’’
প্রশ্নটা বিএমওএইচ-কে করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যা শয্যা আছে তার অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। আউটডোরেও চাপ রয়েছে। হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষী নেই। সব সময়ে নজর রাখা সম্ভব হয় না।’’ কিন্তু ঢাকা কুয়োয় রাজু ঝাঁপ দেবেন কী করে? বিএমওএইচ বলেন, ‘‘তালা ভেঙে।’’ তিনি নিজেই অভিযোগ করছেন, রাত বাড়লেই নেশাড়ুদের আড্ডা বসে হাসপাতাল চত্বরে। নিরাপত্তার জন্য থানায় অনেক বার বলা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। সোনামুখী থানা আবার দাবি করছে, হাসপাতাল থেকে নিরাপত্তারক্ষী চাওয়াই হয়নি।
সম্প্রতি বাঁকুড়া মেডিক্যালের এক নিখোঁজ রোগীকে উদ্ধার করা হয়েছিল শহরের একটি বাড়ির কুয়ো থেকে। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। তারপরে সোনামুখীতে একেবারে হাসপাতাল চত্বরেই এমন ঘটনা ঘটে গেল। সোমবার ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, যেখানে সেখানে সাইকেল, মোটরবাইক রাখা। ঘুরে বেড়াছে কুকুর। খোলা সোকপিটে পাতলা টিনের ঢাকনা। সাফাই কর্মীদের কয়েকজন দাবি করলেন, এ দিনের ঘটনার পরে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।
রাজুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, শিখাকে ঘিরে রেখেছেন পরিজনেরা। রাজুর দিদি দীপা পাল, অঞ্জলী মহন্তরা বলেন, ‘‘টাকার অভাব ছিল। ভাল ভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। কিন্তু এমনটা যে হয়ে যাবে ভাবিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy