সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রয়াত হলেন শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক তথা রবীন্দ্র-গবেষক সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের পান্ডিত্যে ও ব্যক্তিত্বে শান্তিনিকেতনের সর্বজন শ্রদ্ধেয় হয়ে ওঠা এই মানুষটি শুক্রবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন কলকাতায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শান্তিনিকেতন জুড়ে।
শিল্পী সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র সোমেন্দ্রনাথের শৈশব কেটেছে করাচিতে। পরে কলকাতা, শান্তিনিকেতনে অধ্যয়ন, গবেষণা ও শিক্ষকতায় কেটেছে তাঁর জীবন। মহাত্মা গান্ধী, নন্দলাল বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়ের মতো বহু দিকপাল ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে এসেছেন তিনি। সেই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা তাঁর ‘বিস্মরণের বাইরে’ বইটি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিল্পকলা নিয়েও তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রামকিঙ্কর বেজের শিল্পকলা নিয়ে একাধিক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।
১৯২৬ সালে জন্ম হয় সোমেন্দ্রনাথের। কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হলেও পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় তিনি বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। অবসরের পরেও জীবনের একটা বড় সময় তিনি কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতনেই। অবসর জীবনে নিপ্পন ভবনের (জাপানি শিক্ষা বিভাগ) আধিকারিকেরও দায়িত্ব সামলেছেন। শান্তিনিকেতনের ‘সাহিত্যিকা’ নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। বিশ্বভারতীতে অধ্যাপকদের একটি নিজস্ব সংগঠন ‘অধ্যাপক সভা’ গড়ে তোলার পিছনেও সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় ভূমিকা ছিল বলে জানা যায়। সাহিত্যের অধ্যাপক হলেও রবীন্দ্র চর্চার পাশাপাশি তাঁর আগ্রহের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছিল শিল্পকলা। তাঁর রচিত ‘রবীন্দ্র চিত্রকলা: রবীন্দ্র সাহিত্যের পটভূমিকা’, ‘মাই ডেজ উইথ রামকিঙ্কর বেজ’, ‘শিল্পী রামকিঙ্কর: আলাপচারি’, ‘বাংলার বাউল কাব্যদর্শন’ প্রভৃতি গ্রন্থ আজও পাঠক ও গবেষক মহলে প্রবল সমাদৃত। তাঁর একাধিক গ্রন্থ জাপানি ভাষাতেও অনুদিত হয়েছে।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “কিছু মৃত্যু আক্ষরিক অর্থেই যুগাবসান, সোমেনদার মৃত্যু ঠিক তাই। অধ্যাপক বলতে, বিশেষত শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক বলতে যে ছবিটা ভেসে ওঠে, সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক তার মূর্ত অবয়ব। যে কয়েক জন মানুষের মধ্য দিয়ে পুরনো শান্তিনিকেতনকে ছুঁয়ে দেখা যেত, অনুভব করা যেত, উনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy