চুনারাম মাহাতো ও গোবিন্দ মাহাতোর স্কেচ (বাঁ দিক থেকে) । নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের উদ্যোগে মানবাজারে স্থাপন করা হবে স্বাধীনতা আন্দোলনের দুই শহিদ চুনারাম মাহাতো ও গোবিন্দ মাহাতোর মূর্তি। তবে দু’জনের কোনও ‘ফটোগ্রাফ’ পাওয়া যায়নি। পরিজনেদের সঙ্গে কথা বলে ছবি এঁকেছেন শিল্পী। তার ভিত্তিতেই গড়া হবে মূর্তি।
বুধবার পুরুলিয়া জেলা পরিষদের প্রেক্ষাগৃহে একটি বৈঠক হয়। যোগ দিয়েছিলেন পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজ, আদিবাসী কুড়মি সমাজ, মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমি, ওয়েস্টবেঙ্গল কুড়মি ডেভলপমেন্ট বোর্ড-সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সেখানে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মানবাজার থানার কাছেই দুই শহিদের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৪২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মানবাজার থানা অভিযানে গিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় চুনারাম মাহাতো ও গোবিন্দ মাহাতোর। মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমির সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতো বলেন, ‘‘ভারত ছাড় আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ওই অভিযান হচ্ছিল। ২৯ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই মানবাজার থানার রাঙাটাঁড় গ্রামে বিপ্লবীরা জড়ো হয়েছিলেন। পরদিন এক সঙ্গে থানা দখলের লক্ষ্যে যান। পুলিশ গুলি চালায়। থানা চত্বরেই লুটিয়ে পড়েন কুদা গ্রামের চুনারাম মাহাতো। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুরুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় মানবাজারের নাথুরডি গ্রামের গোবিন্দ মাহাতোর।’’
এ দিন বৈঠকের পরে, সভাধিপতি বলেন, ‘‘মানবাজারের দুই বীর শহিদের স্মৃতিরক্ষার দাবি দীর্ঘ দিনের। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েও তাঁদের কোনও ছবি পাওয়া যায়নি। আমরা তাই স্কেচ শিল্পীর দ্বারস্থ হয়েছিলাম।’’ শিল্পী রাজা দাস চুনারাম মাহাতো ও গোবিন্দ মাহাতোর ‘স্কেচ’ তৈরি করেছেন। তিনি জানান, দুই শহিদের বাড়ি গিয়েছিলেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের শোনা কথার থেকে ধারণা করেছেন, দু’জনকে দেখতে কেমন ছিল। দুই শহিদের নিকট আত্মীয়দের মধ্যে যাঁদের ছবি ছিল, খুঁটিয়ে দেখেছেন তা-ও। তার পরেই ছবি এঁকেছেন। সভাধিপতি জানান, দুই শহিদের পরিবারের লোকজন আঁকা ছবিগুলি মনোনীত করেছেন। গোবিন্দ মাহাতোর নাতি সুভাষচন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা ছবি দেখেছি। মনে হয়েছে, আমার দাদুই।’’
মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমির সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতো বলেন, ‘‘স্কেচ দেখার পরে এ দিনের বৈঠকে দুই শহিদের মূর্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রায় সবাই একমত হয়েছেন।’’ আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘মানভূমের স্বাধীনতা আন্দোলন-সহ বিভিন্ন আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই ছবি নেই। তাঁদের আত্মত্যাগের কথাও তো আমাদের স্মরণে রাখতে হবে।’’ ওয়েস্টবেঙ্গল কুড়মি ডেভলপমেন্ট বোর্ডের মুখপাত্র সুনীল মাহাতো ও পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজের পুরুলিয়া জেলা শাখার সম্পাদক শুভেন্দু মাহাতো বলেন, ‘‘এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ লোকসেবক সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতোও ছিলেন এ দিনের বৈঠকে। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে কল্পিত মূর্তি গড়া কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন তুলেছি। ১৯৪২ সালের ওই আন্দোলনে আরও কয়েকজন জখম হন। তাঁরা নিজের চোখে দুই শহিদকে দেখেছিলেন। কয়েকবছর আগেও জীবিত ছিলেন তাঁদের কয়েক জন। তখন উদ্যোগী হলে কাজটা ভাল ভাবে হতে পারত।’’
সভাধিপতি জানিয়েছেন, এ দিনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত ‘নবান্ন’-এও পাঠানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy