জয়পুরের আঘরপুর শিল্পতালুরে মেশিন দিয়ে জোর কদমে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
জয়পুরের আঘরপুরে শিল্পতালুক নির্মাণের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ধৃত ১৩ জন মহিলার ১৪ দিনের জেল হেফাজত হল। তাঁদের সঙ্গে তিন শিশুও জেলে গিয়েছে। এই ঘটনায় ফুঁসছেন এলাকাবাসী। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, গ্রামের পরিবেশ বাঁচাতে যাওয়া মহিলাদের পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। যদিও পুলিশের দাবি, তাঁদের চিহ্নিত করেই ধরা হয়েছে।
আঘরপুর গ্রামের কাছে ১৭ একর খাস জমিতে প্রস্তাবিত শিল্পতালুকের জন্য শনিবার সীমানা পাঁচিল তৈরি করতে গিয়ে গ্রামবাসীর বাধার মুখে পড়ে প্রশাসন। কলকারখানা হলে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হবে, এই আশঙ্কায় বাধা দেন গ্রামবাসী। তা থেকে জনতা-পুলিশে সংঘর্ষ বাধে। আহত হন দু’পক্ষের কয়েকজন। সেদিনই ১৩ জন মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। রবিবার ধৃতদের পুরুলিয়া আদালতে তোলা হয়।
আসামী পক্ষের আইনজীবী মানব মুখোপাধ্যায় ও অনুভব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিরস্ত্র মহিলাদের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের চেষ্টা, সরকারি কাজে বাধাদান, সরকারি কর্মীদের বাধা দেওয়া-সহ জামিন অযোগ্য ধারাগুলি দিয়েছে, তার বিরোধিতা আদালতে করা হয়। আগামী মঙ্গলবার বিচারক পুলিশের কাছে কেস ডায়েরি তলব করেছেন। অন্যায় ভাবে গ্রেফতারের বিরোধিতা করে সে দিন ফের আদালতে জামিনের আবেদন করব।’’
রবিবার গ্রামবাসীর একাংশ অভিযোগ করেন, গোলমাল থামাতে যাওয়া কিংবা স্নান করতে যাওয়া কয়েকজন মহিলাকেও পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। যদিও এসডিপিও (ঝালদা) সুব্রত দেবের দাবি, ‘‘গোলমাল যাঁরা করেছেন, তাঁদের নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আঘরপুরে আর অশান্তির খবর নেই। পুলিশের নজরদারিতে নির্মাণের কাজ চলছে।’’
এ দিকে জেলে যাওয়া মায়েদের সঙ্গে তিনটি শিশু থাকার ঘটনা মানতে পারছেন না বাসিন্দাদের অনেকে। পুলিশ জানিয়েছে, তিন জনের কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশু রয়েছে। নিয়ম রয়েছে, মাতৃদুগ্ধ পান করা শিশু থাকলে সে-ও গ্রেফতার হওয়া মায়ের সঙ্গে থাকতে পারে। সংশোধনাগার সূত্রে খাবার, জেলে মায়ের সঙ্গে শিশুরা থাকতে পারে। তাদের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
এ দিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, থমথমে পরিবেশ। রাস্তাঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে। মহিলারা জেলে যাওয়ায় বাড়ির পুরুষেরাই সংসারের কাজ সামলাচ্ছেন। তাতে অনেকে নাজেহাল হচ্ছেন।
স্ত্রী জেলে যাওয়ায় নিজের ও ছেলের জন্য ভাত এবং টোম্যাটো ও আলু দিয়ে তরকারি রান্না করছিলেন এক প্রৌঢ়। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের যাতে ভাল হয়, সে কথা চিন্তা করেই শনিবার সেখানে আলোচনায় গিয়েছিল স্ত্রী। কেউ বা স্নান করতে, কিংবা শৌচকর্মে গিয়েছিলেন। তাঁদেরও ধরে নিয়ে গেল পুলিশ!’’
এক যুবক বলেন, ‘‘গোলমাল শুনে মা সবাইকে বোঝাতে গিয়েছিল। উল্টে পুলিশ মাকেই ধরল। বাড়ির রান্নাবান্না মা করত। মা নেই বলে বাবা ও আমরা দু’ভাই অসহায় হয়ে পড়েছি। নিজেদেরই রান্না করতে হচ্ছে।’’
গ্রামের এক বধূকে পুলিশ ধরেছে। তাঁর শাশুড়ি পা ভেঙে শয্যাশায়ী। এখন ওই শাশুড়ির দেখাশোনা কে করবে, তা নিয়ে পরিবারটি চিন্তায় পড়েছে। এক যুবকের আক্ষেপ, ‘‘আঘরপুরের টিলাকে ঘিরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বোধহয় আর বাঁচাতে পারলাম না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy