Advertisement
E-Paper

আনাজের দাম আগুন, মিড-ডে মিল চালাতে হিমশিম স্কুল কর্তৃপক্ষ

শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে রান্নার গ্যাসের যা দাম তাতে মাথা পিছু গ্যাসের পিছনেই প্রায় দেড় টাকা চলে যায়। ডাল দিতে গেলে তার পিছনে যায় আরও অন্তত দেড় টাকা।

মিড-ডে মিলের খাবার খাচ্ছে পড়ুয়ারা। ফাইল চিত্র

মিড-ডে মিলের খাবার খাচ্ছে পড়ুয়ারা। ফাইল চিত্র

সৌরভ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৭
Share
Save

এক মাসেরও বেশি কার্যত অগ্নিমূল্য আনাজের বাজার। মরসুমি আনাজে কার্যত হাত দিতে পারছেন না ক্রেতারা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে জেলার বাজারগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হলেও খুব একটা কমেনি আনাজের দাম। এই পরিস্থিতিতে খুব অল্প পরিমাণ নির্দিষ্ট টাকার মধ্যে কী ভাবে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়ানো হবে তা নিয়ে চিন্তায় স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুলগুলি সূত্রে খবর, কোনওরকমে কাজ চালিয়ে নিলেও পড়ুয়াদের প্রাপ্য পুষ্টির সঙ্গে সমঝোতা করা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, মিড-ডে মিলে কোন দিন কী খাবার দেওয়া হবে তার একটি নির্দিষ্ট তালিকা সরকারের তরফ থেকে স্কুলগুলিকে আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় সপ্তাহে এক দিন ডিম এবং বাকি দিনগুলিতে মরসুমি আনাজ ও ডাল দিয়ে পড়ুয়াদের ভাত খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে৷ এই বাবদ প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মাথাপিছু ৫ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য মাথাপিছু ৮ টাকা ১৭ পয়সা বরাদ্দ করেছে সরকার।

শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে রান্নার গ্যাসের যা দাম তাতে মাথা পিছু গ্যাসের পিছনেই প্রায় দেড় টাকা চলে যায়। ডাল দিতে গেলে তার পিছনে যায় আরও অন্তত দেড় টাকা। এর পরে তেল, নুন, মশলা ও পেঁয়াজের খরচ আলাদা। সবশেষে যেটুকু টাকা পড়ে থাকে তাতে শুধুমাত্র আলুর সব্জি করতে গেলেও সরকার নির্ধারিত মাথাপিছু ১০০ গ্রাম করে সব্জি দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

সিউড়ি ১ ব্লকের মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোবিন্দপুর গ্রামের কবি নজরুল শিক্ষা নিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিপ্লব ধর বলেন, “আনাজের এই মূল্যবৃদ্ধির পরে সত্যিই মিড-ডে মিল চালাতে অত্যন্ত কষ্টের মুখে পড়তে হচ্ছে। মরসুমি আনাজ পড়ুয়াদের পাতে কার্যত দেওয়াই যাচ্ছে না। আলু ও সয়াবিনের উপর নির্ভর করেই চলছে মিড-ডে মিল। আমরা অসুবিধার কথা ব্লকের সংশ্লিষ্ট আধিকারিককেও জানিয়েছি।”

এই প্রসঙ্গেই সিউড়ি সংলগ্ন সুরেন ব্যানার্জি স্মৃতি হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী ঘোষ বলেন, “আমাদের স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেক কম। ফলে, মাথাপিছু রান্নার খরচের পরিমাণ অনেকটাই বেশি হয়। আমরা শুধুমাত্র ডাল আর সোয়াবিন-আলুর তরকারিই বেশি দিচ্ছি। গ্রীষ্মের ছুটির পরে কিচেন গার্ডেনের অবস্থাও ভাল নেই। এখন নতুন করে পেঁপে গাছ লাগানো হচ্ছে। এ ভাবে চালানো সত্যিই খুব কঠিন।”

কড়িধ্যা বিদ্যানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুজাতা সাহা দাস বলেন, “একমাত্র পটলের দামটা কিছুটা সাধ্যের মধ্যে। তাই প্রায় প্রতি দিনই পটলের তরকারিই দিচ্ছি। তাও বেশি দিতে পারছি না। আনাজের তুলনায় ঝোই বেশি থাকছে, যাতে ঝোল দিয়েই পড়ুয়ারা ভাতটা খেতে পারে, তাই একটু সব্জি মশলা বা ধনে পাতা ব্যবহার করছি।”

এই প্রসঙ্গে জেলার মিড-ডে মিলের ওসি অনির্বাণ মণ্ডল বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাও আনাজের দাম বাড়ার প্রভাব যে মিড-ডে মিলের উপর পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। আর বছর বছর এই দামবৃদ্ধির ঘটনাও খুব স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা দু’টি বিষয়ের উপর প্রধানত জোর দিচ্ছে। একদিকে স্কুলের কিচেন গার্ডেনে মরসুমি আনাজের চাষের পরিমাণ বাড়াতে বলা হয়েছে। যাতে কম খরচে পড়ুয়ারা খাবারে ভাল পুষ্টিগুণ পায়। আর দ্বিতীয়ত, আমরা প্রতিটি স্কুলকেই বলেছি, যত বেশি সংখ্যক পড়ুয়াকে সম্ভব মিড-ডে মিলের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কারণ পড়ুয়ার সংখ্যা যত বেশি হবে তত মাথাপিছু রান্নার খরচ কম হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suri Vegetable Price

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}