ব্যস্ত সময়ে দেওয়ালই দিতে পারে অফুরন্ত এনার্জি। দেওয়ালে ভর দিয়েই শুরু করতে পারেন ব্যায়াম। যাঁরা জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতে পছন্দ করেন না, অথবা খুব বেশি শারীরিক কসরত যাঁদের ধাতে সয় না, তাঁদের জন্য সবচেয়ে আরামের ব্যায়াম হতে পারে ‘ওয়াল সিট’। দিবারাত্র ছুটে চলা কর্পোরেট কর্মী থেকে অবসর নেওয়া প্রবীণ, শরীর ঠিক রাখতে কোন ব্যায়াম করবেন আর কী করবেন না, এই যদি ভাবনায় থাকে, তা হলে ‘ওয়াল সিট’ আপনারই জন্য। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা বা মেরুদণ্ডে আঘাত যদি না থাকে, তা হলে নিশ্চিন্তে করা যাবে এই ব্যায়াম। বেশি সময়ও লাগবে না, আর পরিশ্রমও যৎসামান্য।
প্রাণায়াম হোক বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ়, তার জন্য ন্যূনতম আধ ঘণ্টা সময় তো লাগবেই! এই সময়টুকুও নেই অনেকের। এ দিকে শরীরচর্চা না করার ফলে আজ পিঠে ব্যথা, কাল কোমরে ব্যথা লেগেই রয়েছে। অনেকে তো সোজা হয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়াতে বা বসতে অবধি পারেন না। সব সময়েই চেয়ারে ঝুঁকে বসা বা পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে ঝুঁকে হাঁটাচলা করার অভ্যাস শরীরের ভারসাম্যই নষ্ট করে দিচ্ছে। এই যে ঝুঁকে বসা বা সামনে ঝুঁকে হাঁটাচলা করার অভ্যাস, তাকে বলা হয় একে বলা হয় ‘লোর্ডাটিক ভঙ্গি’। এই লোর্ডাটিক ভঙ্গিতে দাঁড়ানোর ফলে কিন্তু অচিরেই পিঠের পেশিতে ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যারও সমাধান করতে পারে ‘ওয়াল সিট’।
‘ওয়াল সিট’ মানে দেওয়ালে ভর দিয়ে বসা। ঠিক যেমন চেয়ারে বসেন, সে ভাবেই। ধরে নিতে হবে চেয়ারখানি নেই। দেওয়ালে পিঠ দিয়ে ঠেসে দাঁড়িয়ে সেই ভঙ্গিতেই বসতে হবে। আর এতেই উপকার হবে অনেকটাই। এমনটাই জানালেন ফিটনেস প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য। তাঁর কথায়, “ওয়াল সিট হল ‘আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ়’, কোনও কিছুতে ভর দিয়ে যে ব্যায়াম করা হয়। একে স্ট্যাটিক স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ়ও বলা হয়। শরীরের নীচের অংশের পেশিকে মজবুত করে এই ব্যায়াম। অন্তঃসত্ত্বাদের জন্যও খুব উপকারী।”
আরও পড়ুন:
কী ভাবে করবেন ওয়াল সিট?
১) প্রথমে দেওয়ালে পিঠ দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
২) দু’পায়ের মধ্যে সামান্য ব্যবধান রাখতে হবে।
৩) এ বার দেওয়ালে ঠেস দিয়েই ধীরে ধীরে বসার মতো ভঙ্গি করুন।
৪) চেয়ারে বসার মতো করেই ভঙ্গিটি করতে হবে।
৫) দুই হাত দুই হাঁটুর উপরে অথবা মুঠো করে বুকের কাছে রাখতে পারেন।
৬) শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০ বার করতে হবে।

ওয়াল সিট করার পদ্ধতি। ছবি: ফ্রিপিক।
কেন করবেন ওয়াল সিট?
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এই ব্যায়ামটি অভ্যাস করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে।
হাঁটুর ব্যায়াম
হাঁটু ও অস্থিসন্ধির খুবই ভাল ব্যায়াম ওয়াল সিট। প্রশিক্ষক অনুপ আচার্যের কথায়, “দুই হাঁটুর জোর বাড়বে নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে। গাঁটে গাঁটে ব্যথা-বেদনা থাকলে কমে যাবে।”
পেশিশক্তি বাড়বে
শরীরের নিম্নাংশের ভাল ব্যায়াম হবে। কোমর, ঊরু, হাঁটু ও কাফ মাসলের ব্যায়াম হবে। ফলে পেশির শক্তি বাড়বে। পায়ের ব্যথায় যাঁরা ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না, তাঁরা এই ব্যায়ামটি করলে উপকার পাবেন।
শরীরের ভারসাম্য
শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতেও ওয়াল সিট ভাল ব্যায়াম। একটানা বসে থেকে যদি পিঠ-কোমরে যন্ত্রণা হয়, তা হলে এই ব্যায়ামটি করলে উপকার পাবেন। পিঠ টানটান হবে, সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটার প্রবণতা কমবে।
‘হ্যাপি’ হরমোনের ক্ষরণ
ভাল থাকার জন্য যে সব ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরণ জরুরি, সেই এনডরফিন, অক্সিটোসিনের ক্ষরণ বেশি হবে। হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে ঘুমও ভাল হবে।