Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

কেন কম ভোট, ক্ষুব্ধ শতাব্দী

লোকসভা নির্বাচনের ফল বলছে, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বেশির ভাগ এলাকায় তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।

শতাব্দী রায়। কড়িধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

শতাব্দী রায়। কড়িধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০১:৫২
Share: Save:

‘লিড’ দিয়েছে মুরারই। তাই ভোটে জিতে জেলায় এসে প্রথমেই সেখানে গিয়ে জানিয়ে এসেছেন কৃতজ্ঞতা। সেই শতাব্দী রায় বৃহস্পতিবার সাঁইথিয়ার সভা থেকে ভোট কম পাওয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিলেন দলের কর্মীদের উপরেই। তবে হারের পর্যালোচনা জরুরি বলেও মনে করেন সাংসদ।

সাঁইথিয়ায় মঞ্চ থেকে কর্মীদের উদ্দেশে সাংসদ-অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আপনারা আমাকে ভরসা দিয়েছেন। কিন্তু, কথা রাখেননি। আমি তো সব সময় কাজ করেছি। দল কাজ করেছে। তা হলে আপনারা কী করেছেন?’’ শতাব্দীর সংযোজন, ‘‘আমি সাংসদ সেটা ভুলে যান। আপনারা তৃণমূলের কর্মী সেটাও ভুলে গিয়ে সাধারণ মানুষ হিসেবে বলুন, আপনারা যদি কিছু না দেন, তা হলে আর কি ভাল লাগবে কাজ করতে? আপনারা কী করতেন?’’

লোকসভা নির্বাচনের ফল বলছে, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বেশির ভাগ এলাকায় তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। লিড রয়েছে রামপুরহাট, সিউড়ি, সাঁইথিয়া, দুবরাজপুরের চার বিধানসভায়। সেই হিসেবে শুধু মুরারই, হাঁসন এবং নলহাটি বিধানসভার ভোটে হ্যাট্রিক করতে পেরেছেন শতাব্দী। এই আবহে জেতার পরে এ দিন প্রথমবার সাঁইথিয়া এসেছিলেন সাংসদ। হাতোড় পঞ্চায়েতের মসোড্ডা তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে সংবর্ধনারও আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই কর্মীদের উপর ক্ষোভ উগরে দেন। এ দিনের সভায় ছিলেন বিধায়ক নীলাবতী সাহা, ব্লক সভাপতি সাবের আলি, জেলা সম্পাদক দেবাশিস সাহা ও পঞ্চায়েত প্রধান সহ তৃণমূল কর্মীরা।

শতাব্দীর কথায়, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রচুর কাজ করেছেন। আমার তো মনে হচ্ছে এখানে আমাদের দেওয়া যে নীল সাইকেলগুলো দেখতে পাচ্ছি, আপনারা এই সাইকেলে করেই গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।’’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সাংসদের মুখে এই কথা শুনে শুরু হয় তুমুল হাততালি! তৃণমূল কর্মীদের সতর্ক করে শতাব্দী বলেন, ‘‘দলে থেকে কেউ বেইমানি করবেন না। যে দল করার ইচ্ছে, সেটাই করুন। কিন্তু, সাহস রেখে করুন। যেন বলতে পারেন আমি এই দলটাই করি। আমরা কিন্তু বেইমানদের প্রশ্রয় দিই না।’’

বিজেপি ভাল ফল করায় এখন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাকের ডগায় দলবদলের অনুষ্ঠানও হয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতারা দাবি করে এসেছেন, একই লোককে কুমিরছানার মতো দেখানো হচ্ছে। এ দিনের সভায় সেই দলবদলের প্রসঙ্গ তোলেন শতাব্দী নিজেই। বলেন, ‘‘অনেকেই এখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন। যাচ্ছেন যান। আসলে এঁরা আরও বেশি পাওয়ার লোভে যাচ্ছেন। কিছু দিন পরেই বোঝা যাবে কে কতটা পেয়েছেন।’’

বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মনে করেন, তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ, দুর্নীতির জন্যেই তাদের দলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। দলবদলের পরে সে কথা প্রকাশ্যেও জানিয়েছেন অনেকে। আর শতাব্দীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপির সাঁইথিয়া বিধানসভার সংযোজক মন্টু চৌধুরীর জবাব, ‘‘সাংসদ হওয়ায় পরে উনি নিজেই তো ডুমুরের ফুল হয়ে গিয়েছিলেন। সাংসদ তহবিলের টাকা হয়তো পরে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই টাকায় কাজ আদৌ হচ্ছে কি না, সেটা কি দেখেছিলেন? কোনও দিন খোঁজও নেননি। তাই মানুষ আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’’

সিউড়ি ২ ব্লকের অবিনাশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের সভাতেও শতাব্দী এই ব্লকের দু’টি অঞ্চলে তৃণমূলের খারাপ ফল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দলেরই কিছু কর্মী-সমর্থক অন্য দলের হয়ে ভোট করেছেন অভিযোগ তুলে তাঁদের ‘বেইমান’ বলেও আক্রমণ করেন শতাব্দী। সেই সঙ্গে সঙ্গে দলে থেকে বেইমানি না করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘‘দলে থেকে বেইমানি করবেন না। আমাদের মিছিলে থেকে, আমাদের সঙ্গে খাবার খেয়ে, আমাদের ফ্ল্যাগ নিয়ে ছুটে ভোটের সময় এমন কোনও শত্রুতা করবেন না, যাতে দলের ক্ষতি হয়।’’

শতাব্দী এ দিন সভা করেন কড়িধ্যার কমিউনিটি হলেও। সেখানে সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, সিউড়ি ১ ব্লকের সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহদের উপস্থিতিতে বলেন, ‘‘পুরনো মানুষগুলোকে সামনে আনুন। মনে হত পারে আমি খুব সাধারণ কথা বলছি। কিন্তু, এটা করতে হবে।’’ এই কথা এর আগে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও শোনা গিয়েছে। শতাব্দী মনে করেন, ‘‘একটা দল চালাতে গেলে যেমন শক্তির দরকার হয়, তেমনই দলের প্রতি ভালবাসারও প্রয়োজন।’’ ভোটের প্রচারে কড়িধ্যার রোড-শোয়ে ভিড় হয়েছিল। কিন্তু, ভোট সে ভাবে পায়নি দল। এ দিন সে প্রসঙ্গও তোলেন শতাব্দী। সাংসদের কথায়, ‘‘কোথাও অহংকার, কোথাও ভুলের জন্য এই অবস্থা হয়েছে। চারটি বিধানসভায় কেন হারলাম দেখতে হবে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy