প্রতীক্ষার শেষে এল জল। ট্যাঙ্কের ধ্বংসস্তূপে দফতরের কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র
গুড়গুড় শব্দ করে চোখের সামনে ধসে পড়েছে জলের রিজ়ার্ভার। সেই আতঙ্ক কাটতেই বুধবার বিকেল থেকে সারেঙ্গা ব্লকের গড়গড়িয়া ও বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের ১৫-১৬টি গ্রামে ফিরে আসে দুঃশ্চিন্তা—এ বার খাবার জল মিলবে কোথা থেকে? ২০১৭ সালে ওই জলাধার চালু হওয়ার পর থেকেই পানীয় জলের দুর্ভাবনা কেটে গিয়েছিল সারেঙ্গা ব্লকের ২৩টি মৌজায়। সকাল ৮টা ও বিকেল ৩টে দু’ঘণ্টার জন্য জল মিলত। বুধবার রাতে অনেকেই জল নিয়ে দুর্ভাবনায় ছিলেন। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্মীরা বুধবার সারা রাত কাজ করে বৃহস্পতিবার দুপুরে জল সরবরাহ শুরু করেন। হাসি ফোটে বাসিন্দাদের মুখে।
বৃহস্পতিবার সকালে সারেঙ্গার ফতেডাঙা গ্রামে রিজ়ার্ভারের ধ্বংসস্তূপের কাছে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের জটলা। ভোর থেকেই দূরদূরান্ত থেকে লোকজন দেখতে এসেছেন। ভেঙে পড়ার কারণ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই বার বার ফিরে আসছিল, জল কবে মিলবে। আশ্বাস দিয়েছিল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। বুধবার রাত থেকেই ধ্বংসস্তূপের পাশে আলো জ্বেলে মেশিন নিয়ে এসে মাটি কেটে সরাসরি জল দেওয়ার জন্য আলাদা পাইপ পোঁতার কাজ শুরু হয়। এ দিন সকাল থেকে সেখানেও অনেকে ভিড় করেন। বার বার কর্মীদের কাছে জানতে চাইছিলেন, ‘‘জল পাওয়া যাবে তো?’’
ওই জলাধার থেকে জল পেতেন গড়গড়িয়া, ডাঙাপাড়া, নিগড়া, সীতারামপুর, মাজুরিয়া, ব্রাহ্মণডিহা, বেলেপাল, বাইশপাতড়া, বেজডাঙা, পেঁচাড়া, দেউলি, শাঁখারিয়া, বিক্রমপুর প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা। এ দিন সকালে ট্যাপে জল না আসায় সেই সব গ্রামে দুশ্চিন্তা ছড়ায়। অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন ধরে ট্যাপের জল পাওয়ায় অনেক টিউবওয়েল খারাপ হলেও মেরামত করা হয়নি। ফলে, সকাল থেকেই জলের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন গ্রামের মানুষজন।
ফতেডাঙা গ্রামের বধূ দীপালি মুর্মু, বারিমণি হেমব্রম, লতারানি মুর্মুরা বলেন, “গ্রামে জলকষ্টের দিন এখন অতীত। আগে টিউবওয়েল মাঝে মধ্যে খারাপ হয়ে যেত। তখন জলকষ্ট হত। তাই হঠাৎ ট্যাঙ্কটা ভেঙে পড়ায় জল নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যাই।’’ গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, গ্রামের দু’টি টিউবওয়েলের মধ্যে একটি খারাপ, অন্যটির জল নোংরা, তা পানের অযোগ্য। কেউ কেউ পড়শিদের বাড়িতে গিয়ে সাব-মার্সিবল থেকে জল জোগাড় করেন।
তবে রিজ়ার্ভার ভেঙে মাটিতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মজুত করা জল পাঁচিল গুঁড়ো করে দিয়ে আশপাশের জমি ভাসিয়ে দেয়। আশপাশের কয়েকটি খেতে ফসল চাপা পড়ে বালি-সিমেন্ট ও পাথরের টুকরোয়। কোথাও কোথাও জমিতে জমে রয়েছে জল। তা নিয়ে হা-হুতাশ করছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক বিঘা আলু ও সর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জল আলপথ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
বিজেপির সাংসদ সুভাষ সরকার ছাড়া আরও কোনও দলের নেতা বা জনপ্রতিনিধিরা বিপর্যয়ের পরে ওই এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। তা নিয়ে অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তৃণমূলের সারেঙ্গা ব্লক সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে দলের কর্মীরা রয়েছেন। তাঁদের কাছে খোঁজ নিচ্ছি। যাঁদের চাষবাসের ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের সাহায্যের জন্য বিডিওকে জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy