Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হার সেই দুই আসনে,নিরঙ্কুশ হল না বোর্ড

বিধানসভা ভোটের আগেও কেষ্ট হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, ফল হবে ১১-০! কিন্তু, ফল হয়েছিল ৯-২। হাতছাড়া হয়েছিল নানুর আর হাঁসন। পুরভোটের ফলে অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ হার আমার ব্যর্থতা।’’

আবির: ফল বেরোতেই নলহাটির রাস্তা ঢাকল সবুজে। নিজস্ব চিত্র

আবির: ফল বেরোতেই নলহাটির রাস্তা ঢাকল সবুজে। নিজস্ব চিত্র

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৪
Share: Save:

নিরঙ্কুশ হল না পুরবোর্ড। নলহাটিতে শাসকদলকে থামতে হল ১৪টি ওয়ার্ডেই। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল থেমেছিল ৯টি আসনে। এক বছরের ব্যবধানে ফিরে এল সেই দু’য়ের গেরো!

ফলাফল ১৬-০ করতে কার্যত আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তো বলেই ফেলেছিলেন, ‘কেষ্টর জন্যেই জিতব’। কিন্তু, এক বালতি দুধে চোনার মতো হাতছাড়া হল ১ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ড। প্রথমটিতে জিতলেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী কোহিনুর বিবি। আর ৮ নম্বরে শেষ হাসি হাসলেন নির্দল প্রার্থী অনিমেষ মাল।

বিধানসভা ভোটের আগেও কেষ্ট হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, ফল হবে ১১-০! কিন্তু, ফল হয়েছিল ৯-২। হাতছাড়া হয়েছিল নানুর আর হাঁসন। পুরভোটের ফলে অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ হার আমার ব্যর্থতা।’’

১৪ আসনে জয়ের পরেও অনুব্রতর মেজাজ যে খারাপ, তা মালুম হয়েছে ফলপ্রকাশের পরের সাংবাদিক বৈঠকেই। সেখানে তিনি তুলোধনা করেন জেলার দুই মন্ত্রী ও দুই নেতার। অনুব্রত বলেন, ‘‘১ নম্বর ওয়ার্ডে বিপ্লব ওঝা, অসিত মালকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। ওঁরা বারবার বলেছিলেন, ভাল ফল হবে। আমরা ওঁদের উপরে ভরসা রেখেছিলাম। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চন্দ্রনাথ সিংহ। দুই মন্ত্রী বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। প্রার্থীরাও জানিয়েছিলেন, তাঁরা জিতবেন। কিন্তু, আমরা হেরে গিয়েছি। আসলে ওই সিদ্ধান্ত আমার রাজনৈতিক ভুল ছিল!’’ কেন এমন ফল হল, ২৭ তারিখের জেলা কমিটির বৈঠকে তার বিশ্লেষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অনুব্রত। তা শুনে আশিসবাবু বলেন, ‘‘জেলা সভাপতি বলেছেন যখন নিশ্চয়ই কোথাও খামতি থেকে গিয়েছে। তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।’’ একই বক্তব্য তৃণমূল নেতা বিপ্লববাবুর।

নলহাটির ওয়ার্ডভিত্তিক ফল

ওয়ার্ড জয়ী জয়ের ব্যবধান

১ কোহিনুর বিবি (ফব) ১৭৭

২ রাকেশ সিংহ (তৃণমূল) ৯১১

৩ রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ (তৃণমূল) ১৩১০

৪ আলোশ্রী ভট্টাচার্য (তৃণমূল) ৭১৫

৫ বিষ্ণুপ্রসাদ ভকত (তৃণমূল) ৩৭২

৬ রমেশ মাহেশ্বরী (তৃণমূল) ৪৪৩

৭ প্রণতি মণ্ডল (তৃণমূল) ৪৮৫

৮ অনিমেষ মাল (নির্দল) ৩২

৯ জুলি ফুলমালি (তৃণমূল) ৫০৮

১০ দেবেন্দ্রকুমার প্রসাদ (তৃণমূল) ২৩৭

১১ আয়েষা সিদ্দিকা খাতুন (তৃণমূল) ৩৬৬

১২ একরামুল হক শেখ (তৃণমূল) ২৫

১৩ তহিদ শেখ (তৃণমূল) ৮৬৮

১৪ সুনীলকুমার লেট (তৃণমূল) ৭৮৩

১৫ গিরি গোবর্ধন দাস (তৃণমূল) ১৬৮

১৬ নুরন্নেহার বেগম (তৃণমূল) ৪২৭

কেন হাতছাড়া হল দু’টি আসন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তৃণমূল নেতাদেরই একটা অংশ। ১ নম্বর ওয়ার্ড এ বার মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন উপপুরপ্রধান ইমাম হোসেন প্রার্থী হতে পারেননি। প্রার্থী হন তাঁর স্ত্রী খালেদা বিবি। তৃণমূল কর্মীদেরই একটি অংশের দাবি, তেমন উন্নয়ন হয়নি ওই ওয়ার্ডে। নিকাশি থেকে রাস্তা যেটুকু কাজ হয়েছে, সেটাও নিজের পরিবারের লোককে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। সে নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ ছিলই। ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যমূলক আচরণের অভিযোগও ছিল। যদিও তা মানতে চাননি ইমাম।

১ নম্বর ওয়ার্ডে ফব-র প্রার্থী হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, গোপালপুরের পশুহাটের মালিক শাহদাত আলির স্ত্রী কোহিনুর বিবি। তাতে শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন কাউন্সিলরকে পরিবর্তন করার প্রবণতা রয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ডে। ২০০২ সালে এই ওয়ার্ডে কংগ্রেস জেতে। পরের ভোটে ফরওয়ার্ড ব্লক জয়ী হয়। ২০১২ সালে তৃণমূলকে জয়ী করেন এলাকাবাসী। এ বার পরিবর্তনের পরিবর্তন। বিদায়ী পুরপ্রধান রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহের অবশ্য মত, ‘‘ওই ওয়ার্ডে কিছু দলীয় কর্মী আমাদের মধ্যে থেকে দলেরই ক্ষতি করেছে। তাই হার।’’

৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) প্রার্থী অনিমেষ মালের কাছে হেরেছেন তিন বারের জয়ী প্রার্থী সুব্রত দত্ত। তা-ও মাত্র ৩২ ভোটে। ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সুব্রতবাবু বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসাবে জিতেছেন। ২০১২ সালে হারান প্রাক্তন পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝাকে। ওই বছরই তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলেরই একটি অংশের দাবি, আসন সংরক্ষণের গেরোয় এ বার প্রার্থী হতে পারবেন না বুঝে সুব্রতবাবু গোড়া থেকেই ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ নজর দেননি। বরং নজর ছিল ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। যদিও তেমনটা মানতে চাননি সুব্রতবাবু। তবে, শেষে পুরনো ওয়ার্ড থেকেই প্রার্থী হয়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে পথে নেমে পড়ে তৃণমূলের সুব্রত-বিরোধী শিবির। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ান এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত অনিমেষ। শেষ হাসি হাসলেন তিনিই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE