Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Bridge Collpase

শালি নদীর জলস্তর নামার পর সেতু বিপর্যয়! বাঁকুড়ার ৪০টি গ্রাম বিপদে, শুরু রাজনৈতিক চাপানউতর

বাঁকুড়া দিয়ে বয়ে যাওয়া শালি নদী সারা বছর নির্জলা থাকলেও ফি-বছর বর্ষার সময় ফুলেফেঁপে ওঠে। মাত্রাতিরিক্ত জলস্ফীতির জেরে কোনও কোনও বছর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সোনামুখী ও পাত্রসায়ের ব্লকে।

Bridge Collapse

আচমকা বসে গেল সেতুর একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
সোনামুখী শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ১৮:৫১
Share: Save:

ঘূর্ণাবর্তের জেরে গত কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়ায়। এখন বৃষ্টি কিছুটা কমে আসায় শালি নদীর জলস্তরও নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার সন্ধ্যায় নদীর উপরে রামপুর-পিয়ারবেড়া যাওয়ার যাতায়াতের সেতুর একাংশ বিপজ্জনক ভাবে বসে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন বাসিন্দারা। সেতু বিপর্যয়ের জেরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, নদীর জলস্তর আরও একটু নামলে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।

বাঁকুড়ার ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া শালি নদী সারা বছর নির্জলা থাকলেও ফি-বছর বর্ষার সময় ফুলেফেঁপে ওঠে। মাত্রাতিরিক্ত জলস্ফীতির জেরে কোনও কোনও বছর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সোনামুখী ও পাত্রসায়ের ব্লকে। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে শালি নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেতে থাকায় বন্যার আশঙ্কাই তৈরি হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত চলতি সপ্তাহের শুরুতে বন্যার আশঙ্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে নদীর জল নামতে শুরু করে। তার মধ্যে সপ্তাহ দুই আগে সোনামুখী ব্লকের হামিরহাটির কাছে থাকা সতীঘাটের সেতু ধীরে ধীরে বসতে শুরু করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই সেতুর একাধিক পিলার পুরোপুরি বসে যায়। সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ে। আর তাতেই বন্ধ হয়ে যায় শালি নদীর দু’পারে থাকা কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সোনামুখী ব্লকের হামিরহাটির কাছে থাকা ওই সেতুটি হামিরহাটি, পিয়ারবেড়া ও ধুলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষের ‘লাইফলাইন’। প্রতি দিন স্কুল-কলেজে যাতায়াত থেকে এলাকায় উৎপাদিত সব্জি সরবরাহের ক্ষেত্রে ৪০টি গ্রামের মানুষ নির্ভর করেন ওই সেতুর উপরে। কিন্তু সেতু বিপর্যয়ের পর সোনামুখীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওই ৪০টি গ্রামের। স্থানীয় বাসিন্দা বিমল পাল বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি তোলার ফলেই সেতুর ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়ে। সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণও হয়নি। কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিতে সেতুটি আরও নড়েবড়ে হয়ে গিয়েছিল। এখন কয়েক হাজার মানুষ চরম সমস্যার মুখে পড়েছি।’’ বিমলদের দাবি, দ্রুত নতুন সেতু তৈরি না হলে এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়বে।

সেতু ভেঙে যাওয়ার পর শনিবার সকালে পৃথক পৃথক ভাবে পরিদর্শনে যান স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি থেকে শুরু করে সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। সেতুটি ভেঙে পড়ার জন্য তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি। তিনি বলেন, ‘‘সেতুটি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ওই সেতু দিয়েই বহু যান চলাচলও করে। সেতুটি বেশ কিছু দিন ধরে বেহাল হয়ে পড়লেও প্রশাসন মেরামত করতে এগিয়ে আসেনি। উপরন্তু সেতুর গোড়া থেকে দিনের পর দিন তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মদতে বালি চুরি হওয়ায় সেতুটি ভেঙে পড়ে। দ্রুত ওই স্থানে নতুন সেতু না হলে আমরা লাগাতার আন্দোলনে শুরু করব।’’

স্থানীয় হামিরহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জয়রাম পাল বলেন, ‘‘বালি চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় মেরামতির কাজ সময় মতো না হওয়া এবং অতি বৃষ্টির কারণেই সেতুটির এমন অবস্থা হয়েছে।’’ সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় সেতু সরেজমিনে দেখে বলেন, ‘‘এই সেতুর স্বাস্থ্য দেখার কাজ আমাদের নয়। তবে আমাদের ধারণা, শালি নদীর প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া জলে সেতুর ভিতের নীচের মাটি ধুয়ে যাওয়াতেই এই সমস্যা হয়েছে। এত বড় সেতু নতুন করে তৈরির আর্থিক ক্ষমতা পঞ্চায়েত সমিতির নেই। কিন্তু আমরা দ্রুত নদী পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা করছি। আপাতত নৌকা অথবা ভাসমান কাঠের সেতু তৈরি করে দেওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই সেতু ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। সপ্তাহ দুই আগে সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছিলেন, সেতুটি মেরামতি করে কোনও লাভ হবে না। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেতুটির একাংশ ভেঙে গিয়েছে। বিপদের আশঙ্কায় ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Collpase bankura Heavy Rain TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy