Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
buffalo fight

বন্ধ হোক কাড়ার লড়াই, চাইছে রথুর পরিবার

গত রবিবার পাড়া থানার হাতিমারা গ্রামে কাড়ার লড়াইয়ে আসরে হুড়োহুড়িতে মৃত্যু হয় স্থানীয় নডিহা গ্রামের রথু বাউড়ির (৫২)।

নিহতের মা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

নিহতের মা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
পাড়া শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৯:২৪
Share: Save:

কাড়ার (পুরুষ মোষ) লড়াই বন্ধ হোক, চাইছেন লড়াইয়ের আসরে মৃত্যু হওয়া রথু বাউড়ির পরিবার। মৃতের বড় ছেলে শ্যামাপদ, মেয়ে মালাদের কথায়, ”কাড়ার লড়াই দেখতে গিয়ে বাবার মৃত্যু হয়েছে। আমরা চাই, ভবিষ্যতে আর যাতে এমন না ঘটে। কাড়ার লড়াই বন্ধ হোক।”

গত রবিবার পাড়া থানার হাতিমারা গ্রামে কাড়ার লড়াইয়ে আসরে হুড়োহুড়িতে মৃত্যু হয় স্থানীয় নডিহা গ্রামের রথু বাউড়ির (৫২)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, লড়াইয়ের মাঝে একটি কাড়া আচমকা দর্শকদের দিকে ছুটে যায়। হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে জখম হন রথু। উদ্ধার করে প্রথমে পুরুলিয়া ২ ব্লকের কুস্তাউর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সেখান থেকে পুরুলিয়া মেডিক্যালে যাওয়ার পথে রাস্তায় মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবারই ময়না-তদন্তের পরে দেহ আনা হয় গ্রামে। সন্ধ্যায় তাঁর শেষকৃত্য হয়েছে।

এ দিন নডিহা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া। গ্রামের শেষ প্রান্তে আবাস যোজনার বাড়ি রথুদের। থাকেন স্ত্রী করুণা ও বড় ছেলে শ্যামাপদ। ছোট ছেলে শ্রমিকের কাজ করেন গুজরাটের সুরাতে। খবর পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মূলত দিনমজুরি করে সংসার প্রতিপালন করতেন ওই প্রৌঢ়। শ্যামাপদও একই কাজ করে।

মৃতের পরিবারের দাবি, কাড়া লড়াইয়ের আসরে মৃত্যু হলেও লড়াই দেখতে যাননি রথু। শ্যামাপদ বলেন, “বোন মালার বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রাম চয়নপুরে। বাবা বোনকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আনতে গিয়েছিলেন। রাস্তায় পড়ে হাতিমারা গ্রাম। মালার ছোট মেয়ে কাড়ার লড়াই দেখার ইচ্ছা জানালে বাবা গিয়েছিলেন সেখানে।” তাঁর সংযোজন, ”দুর্ঘটনার সময়ে ভাগ্যক্রমে বাবার সঙ্গে বোন ও ভাগ্নী ছিল না। ভাগ্নীকে নিয়ে মাঠের কাছে পুকুরে গিয়েছিল বোন। এক সঙ্গে থাকলে কী হত, ভেবে শিউরে উঠছি।”

মৃতের পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও কাড়ার লড়াই বন্ধের দাবি তুলছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ বাউড়ি ,রাকেশ বাউড়ি, সুন্দরা বাউড়িরা বলেন, ”হাতিমারা গ্রামে কাড়া লড়াইয়ের আসর বসে। কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কাতেই আমরা কেউ সেখানে যাই না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখানেই প্রাণ গেল গ্রামের এক জনের। আমরা চাইছি, কাড়ার লড়াইয়ের আসর পুরোপুরি বন্ধ করুক পুলিশ-প্রশাসন।”

পুলিশের তবে দাবি, কাড়ার লড়াই বরাবরই নিষিদ্ধ। বিনা অনুমতিতে আসর বসে। পাড়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে এক উদ্যোক্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হাতিমারা গ্রামের সাফাউল আনসারি নামের ওই ব্যক্তিকে সোমবার রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে তিন দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। এ ছাড়া, রবিবার গভীর রাতে কাড়া নিয়ে আসা পুরুলিয়া মফস্সল থানার গোলামারা গ্রামের একটি পিকআপ ভ্যানকে আটক করেছে পুলিশ।

এ দিকে, মানভূমের লোক-সংস্কৃতির অঙ্গ হিসাবে পরিচিত কাড়ার লড়াই পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন, দাবি জেলার লোক-গবেষকদের একাংশের। তাঁদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে পুরুলিয়ার বহু ব্লকে কালীপুজোর আগে-পরে কাড়ার লড়াই হয়। অতীতে সেই আসরে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। কিন্তু লড়াই বন্ধ হয়নি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ”লোকসংস্কৃতির অঙ্গ হিসাবে দীর্ঘ সময় ধরে কাড়া লড়াই, মোরগ লড়াই চলে আসছে। মানু্ষের ভাবাবেগ এগুলির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতিবিদ হিসাবে মানুষকে নিয়ে আমাদের চলতে হয়। মানুষের ভাবাবেগে আঘাত পড়ুক, তা আমরা চাই না। সব রকমের সাবধানতা মেনে আসর বসানো হোক।”

অন্য বিষয়গুলি:

buffalo fight purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy