Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Manasa Puja Purulia

বিষহরির পুজোয় মেতে পুরুলিয়া, শুনশান পথঘাট   

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের কেয়ট পাড়া, শাঁখারী বাজার, ধূলাপাড়া, মনসাতলা, রাসতলা পুরসভা চত্বর-সহ বিভিন্ন এলাকায় শনিবার থেকে মনসা পুজোয় মেতেছেন ভক্তেরা।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩২
Share: Save:

কর্মক্ষেত্রে দেবী মনসাই রক্ষা করবেন, এই বিশ্বাস থেকে রাঢ়বঙ্গ মেতেছে বিষহরির আরাধনায়। পুরুলিয়ার হুড়া থেকে পাড়া বা বলরামপুর থেকে কাশীপুর সর্বত্রই ধূমধাম নজরে আসে। মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতোর কথায়, “পুরনো রীতি মেনে গ্রামগুলির সিংহভাগ বাড়িতেই মনসা পুজো হয়।” লোক গবেষক তথা কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মাহাতো জানাচ্ছেন, পুরুলিয়া কৃষিপ্রধান জেলা। বর্ষায় মাঠে-ঘাটে চাষের কাজে সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচতে মানুষ মনসা পুজো করেন। লোকবিশ্বাস, ১৩ জ্যৈষ্ঠ রোহিন পরবের দিনে সাপেরা গর্ত থেকে বেরোয়। আশ্বিন সংক্রান্তির দিন, জিহুড়ের দিনে ফের গর্তে ঢোকে। এই সময় জুড়ে তাই পুজো চলে।

আড়শার বামুনডিহা গ্রামের দেবীলাল মাহাতো জানান, গ্রামে কম-বেশি শ’দুয়েক বাড়িতে মনসা পুজো হয়। পুরুলিয়া ১ ব্লকের লাগদা গ্রামের বাসিন্দা মতি কৈবর্ত্য, গোপাল সহিসরাও বলেন, “দেবীর পুজো করতেই হবে। মাঠে-ঘাটে তিনিই বাঁচান।” পুজোর পরের দিনটি পান্নার দিন হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়। অর্থাৎ পুজোর দিন উপবাস রেখে পরের দিন উপবাস ভঙ্গ করা। জেলার লোক গবেষক সুভাষ রায়ের কথায়, “এই দিনে জেলা কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়।”

রবিবার সেই ছবিই দেখা গেল। পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মাহাতো জানান, এই দিনে পাড়ার চায়ের দোকানও খোলে না। সব হোটেল বন্ধ। শহরের চাইবাসা রোডের একটি রেস্তরাঁর কর্মী জানান, এ সময় সকলে ছুটি নেন।

জেলার সিংহভাগ রুটেই এ দিন বাস পথে নামেনি। যাত্রী সংখ্যাও কম ছিল। জেলার বাস মালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “জেলায় প্রায় সাড়ে চারশো বাস চলে। এ দিন চারশোর বেশি বাস পথে নামেনি। ঝাড়খণ্ডের টানানগর-বোকারো বা টাটানগর-ধানবাদ এ রকম দূরপাল্লার কিছু বাস চলেছে।” পুরুলিয়া শহরে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য় গাড়ি জোগাড় করতে গিয়ে এ দিন কালঘাম ছোটে কাশীপুরের বাসিন্দা সুশীলকুমার সাহার।

অন্য দিকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের কেয়ট পাড়া, শাঁখারী বাজার, ধূলাপাড়া, মনসাতলা, রাসতলা পুরসভা চত্বর-সহ বিভিন্ন এলাকায় শনিবার থেকে মনসা পুজোয় মেতেছেন ভক্তেরা। তবে মল্লরাজাদের আমলে শুরু হওয়া ঝাপান উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে পুজো ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে বলেই মত বিভিন্ন পুজো কমিটির। ঝাপান উৎসবের সক্রিয় কর্মী অজিত ধীবর বলেন, “বিষ্ণুপুরের রাজ দরবারে সাপ নিয়ে ঝাপান ছিল দেখার মতো। বর্তমানে বাঁকুড়া জেলা তথা বিষ্ণুপুর মহকুমার সর্বত্র ঝাপান উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রাচীন সংস্কৃতি অবলুপ্ত হচ্ছে। পুজোয় আর প্রাণ নেই।” বিষ্ণুপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীপক ধীবর জানান, পুজোয় ধুমধামের এতটুকু ফাঁক রাখা হয়নি। এ দিন মাছ ভাত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পুজো শেষ হবে। পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।

বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ভক্তদের শোভাযাত্রা চোখে পড়ে। দক্ষিণ বাঁকুড়ার মানুষ এ দিন মনসা যাঁত গানে মাতেন। খাতড়া, রাইপুর, রানিবাঁধ-সহ বিভিন্ন এলাকা যাঁত গানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

অন্য বিষয়গুলি:

Manasa puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy