সরব: বন্ধ হোক অপপ্রচার— বার্তা দিতে মিছিল স্কুল পড়ুয়াদের। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
স্বাধীনতা দিবস ও রাখিবন্ধনের অনুষ্ঠানে ঠিক কী হয়েছিল, তা জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে পথে নামল রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সহ শহরের বিভিন্ন স্কুলের হাজার তিনেক পড়ুয়া। অর্ধসত্য বা তথ্যবিকৃতির পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে তা মনে করাতে হাতে রইল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা— ‘অনুষ্ঠানের অংশবিশেষ দেখে বিচার করবেন না’, ‘গুজব ছড়িয়ে ছাত্রীদের মনোবল ভাঙবেন না’, ‘বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন হয়নি। মিথ্যে প্রচার বন্ধ হোক’।
ভারত ও বাংলাদেশ, দুই দেশের সৌভ্রাতৃত্বকে ‘থিম’ করে ১৫ অগস্ট রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে, এমন অভিযোগ করে বিজেপির পক্ষ থেকে দেশদ্রোহের অভিযোগ এনে অনুষ্ঠানের পাঁচ দিন পরে, মঙ্গলবার রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি রেখে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তারও আগে, অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই অনুষ্ঠানের কিছু অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। সেখানে শুধু বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে দেখানো হয়।
স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলেই এ দিন প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। তাতে শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজের পড়ুয়া, রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছায়া চট্টোপাধ্যায় সহ অন্য শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা ছিলেন। রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের গেট থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহরের ব্যাঙ্ক রোড, দেশবন্ধু রোড ধরে পাঁচমাথা মোড়ের প্রতিবাদ সভায় মিলিত হন সকলে। সেখানে বর্তমান শিক্ষিকাদের পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষিকা, প্রাক্তন ছাত্রীরা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি আরশাদ হোসেন, রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক গৌরচন্দ্র ঘোষ, রেলওয়ে আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুখেন্দুবিকাশ সিংহ, রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির প্রাক্তন সভাপতি তথা রামপুরহাটের ভাইস চেয়ারম্যান সুকান্ত সরকারেরা।
এঁদের প্রত্যেকেই সমবেত স্বরে ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঘিরে মিথ্য প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান। গৌরচন্দ্র ঘোষের কথায়, ‘‘স্বাধীনতা দিবসে ভারতের পতাকা উত্তোলন, মার্চপাস্ট ও জাতীয় সঙ্গীতের পরে সৌভ্রাতৃত্ব ‘থিম’ ছিল বলে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। এতে ভুল কিছুই হয়নি।’’ সুখেন্দুবিকাশ সিংহ মনে করেন, ‘‘সৌভ্রাতৃত্বের অনুষ্ঠান করে পড়ুয়ারা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তার জন্য বরং ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কেননা এতেই প্রকৃত সাংস্কৃতিক মানসিকতার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে।’’
রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষিকা পম্পা সাহা সাহস দিয়ে বলেন, ‘‘তোমরা ভয় পেও না। তোমাদের পাশে রামপুরহাটবাসী আছে। এটা মনে রাখবে।’’ পাশে দাঁড়িয়েছেন রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামও।
রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমেলা দাশগুপ্ত, মানসী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। অথচ তা হয়েছে বলে মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে। সৌভ্রাতৃত্ব মানে দেশদ্রোহিতা নয়।’’ প্রধান শিক্ষিকা ছায়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাধীনতা দিবস এবং রাখী বন্ধন একই দিনে ছিল। তাই সৌভ্রাতৃত্ব থিম করার ভাবনা নেওয়া হয়। কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।’’
এ দিনও অবশ্য নিজেদের মতে অনড় থেকেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের রামপুরহাট শহর মণ্ডল কমিটির সভাপতি নীলকণ্ঠ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ ভুল করেছেন। তাতে প্রলেপ দিতে ছাত্রীদের পথে নামিয়ে মিছিল করা হয়েছে। আমাদের একটাই কথা, দেশের স্বাধীনতা দিবসে শুধু ভারতের পতাকাই তোলা উচিত।’’ এতে সহমত জানিয়েছেন বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলও।
সে দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৃণমূল নেতা সুকান্ত সরকার বলছেন, ‘‘এটা নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যাঁরা মূল অনুষ্ঠানকে বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করছেন, তাঁদের জানা উচিত এই একই অনুষ্ঠান স্বাধীনতা দিবসেই রামপুরহাট মহকুমাশাসকের সামনে স্কুলে ছাত্রীরা প্রশাসনিক ভবনেই করেছে। কই কোনও আপত্তি তো ওঠেনি। আমরা স্কুলের পাশেই আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy