ভারতমালা প্রকল্পে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া মিলিয়ে প্রায় ১৪৩.৩ কিলোমিটার নতুন চার লেনের জাতীয় সড়ক হবে। প্রকল্প রূপায়ণে দু’জেলার ন’টি ব্লকের ১৪২টি মৌজায় কমবেশি ১৮০ হেক্টর জমির প্রয়োজন। কিন্তু তৃণমূল সরকারের ‘জমি নীতি’ প্রকল্প রূপায়ণে অন্তরায় হবে না তো?
বিরোধীদের দাবি, তৃণমূল সরকারের জমি নীতির কারণেই কেন্দ্রের নানা প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে না। তবে শাসকদল বলছে, উন্নয়নমুখী প্রকল্পের বিরোধিতা কখনওই করা হয় না। কিন্তু জমির মালিকেরা যাতে নায্য দাম পান, তা কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ দফতরকে নিশ্চিত করতে হবে।
পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর দাবি, ‘‘রাজ্যের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলেই ভারতমালা প্রকল্প এ রাজ্যে প্রত্যাশিত গতি পাচ্ছে না। পুরুলিয়ায় রাজ্য সরকার বা শাসকদল জমি অধিগ্রহণে কতটা সহযোগিতা করবে,
সন্দেহ আছে।’’
যদিও বাঁকুড়ার তৃণমূলের সাংসদ তথা দলের জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী ও পুরুলিয়ার তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘ভারতমালা প্রকল্পে জমি নিচ্ছে কেন্দ্র। জমির মালিকেরা যাতে বাজারমূল্য পান, তা কেন্দ্রীয় সরকারকে অবশ্যই দেখতে হবে।’’
কেন্দ্র এই প্রকল্প করলেও জমি অধিগ্রহণ করবে দু’জেলার ভূমি অধিগ্রহণ দফতর। সূত্রের খবর, এখন জমি অধিগ্রহণ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সবে অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি (গেজেট নোটিফিকেশন) হয়েছে। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) রাজেশ রাঠৌর বলেন, ‘‘কোন ব্লকের কোন মৌজার কতটা জমি অধিগ্রহণ করা হবে তা চিহ্নিত করা হয়েছে।”
সূত্রের খবর, গেজেট নোটিফিকেশনের পরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পেরিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে জমির দাম স্থির করতে হয় দফতরকে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গত দু’-তিন বছরে জমি কী দরে বিক্রি হয়েছে, সেই তথ্য জোগাড় শুরু করেছে ভূমি দফতর।
জমি অধিগ্রহণ প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ দফতরের এই প্রকল্পে রাজ্যের শাসকদলের সহযোগিতা চাইছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপি। তবে তাদের আশঙ্কা এক্ষেত্রেও তৃণমূলের জমি নীতি বাধা হতে পারে। বিজেপির
বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভারতমালা প্রকল্প হলে শুধু দুই জেলা নয়, সামগ্রিক ভাবে দক্ষিণবঙ্গের আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে। তবে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের জমি অধিগ্রহণ নীতির কারণেই ছাতনা-মুকুটমনিপুর রেলপথ আটকে রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও কোনও প্রশাসনিক জটিলতা না তৈরি করা হয়।’’
বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘ভারতমালা প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে রাজ্য সরকার ও প্রশাসন সবরকম ভাবে সহযোগিতা করবে। তবে একটাই দাবি, নায্য মূল্য দিতে হবে। কাউকেই বঞ্চিত করা চলবে না’’
বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি শঙ্কর মাহাতো মনে করছেন, জেলার সার্বিক উন্নয়নে জমি মালিকেরা স্বেচ্ছায় জমি দেবেন। তৃণমূলের কোনও উস্কানি বা কৌশল কাজে লাগবে না। শাসকদলের জেলা সভাপতি সৌমেনের মতে, বিজেপি আগে থেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাঁদুনি গাইছে। কেন্দ্র বাজারমূ্ল্যে জমির নিলে অধিগ্রহণে সাহায্য করা হবে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, জমি অধিগ্রহণ নির্বিঘ্নে না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা তৈরি নিয়ে সংশয়ের মেঘ থাকছেই।
তথ্য সহায়তা: সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়
(শেষ)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)