ধৃত দেবব্রত ভৌমিক। নিজস্ব চিত্র
সংশোধনাগারের ভিতরে কোনও কিছু নিয়ে ঢোকা নিষেধ। রক্ষীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। তার পরেও কী ভাবে অভিযুক্ত রক্ষী মাদক নিয়ে জেলের ভিতরে ঢুকলেন, সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
বৃহস্পতিবার রাতে রক্ষী দেবব্রত ভৌমিকের হাত দিয়ে খুনের মামলার আসামি সুমন সিংহের কাছে মাদক পৌঁছনোর দৃশ্য সিসিক্যামেরায় ধরা পড়ার পরে বাঁকুড়া সংশোধনাগারের নিরাপত্তা নিয়ে ফের এক গুচ্ছ প্রশ্ন সামনে এসে পড়েছে।
প্রথমত, জেলের ভিতরে মাদক এল কী ভাবে? দ্বিতীয়ত, যে সময়ে মাদক হস্তন্তর হয়, সেই সময়ে সংশোধনাগারের সিসিটিভির মনিটরের সামনে কেউ ছিলেন না কেন? তৃতীয়ত, সূত্রের খবর, দেবব্রত একাই ওই রাতে রক্ষী হিসেবে সুমনের সেলের বাইরে ছিলেন। সুমন ধোঁয়া উড়িয়ে মাদক নিলেও তার গন্ধ আশপাশের অন্য কোনও রক্ষী কি পাননি? তা হলে বৃহস্পতিবার রাতভর কয়েক দফায় সুমন মাদক সেবন করলেও তা কেন কারও নজরে এল না? তবে কি এই ঘটনায়, আরও কেউ জড়িত?
রক্ষীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, কাজে যোগ দেওয়ার আগে এক দফা তল্লাশি করা হয় তাঁদের। সঙ্গে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ কিছুই ভিতরে নিয়ে যাওয়া যায় না। সে সব অফিসেই জমা করে যান রক্ষীরা। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, বৃহস্পতিবারও নিয়ম মাফিক দেবব্রতকে তল্লাশি করা হয়েছিল। তাঁর কাছ থেকে কিছুই মেলেনি। তা হলে কী ভাবে ভিতরে তিনি মাদক নিয়ে গেলেন? পুলিশ জানিয়েছে, সে সব জানতে তাঁকে জেরা করা হবে।
আগেও একাধিক বার বাঁকুড়া সংশোধনাগারে বন্দিদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, মাদক উদ্ধার করেছেন রক্ষীরা। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের একাংশ দাবি করতেন, কারাগারের দেওয়ালের পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে রাজপথ। ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যানবাহনের ছাদ থেকে, রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা উঁচু ভবন থেকে জিনিসপত্র জেলের ভিতর ছোড়া হয়। বন্দিদের সঙ্গে আগে থেকে সাঁট করেই তাঁদের পরিচিতেরা সে সব পাঠাতেন। ঠিক সময়ে গিয়ে সে সব কুড়িয়ে আনতেন বন্দিরা। বহু বার রক্ষীরা তল্লাশি চালাতে গিয়ে সংশোধনাগারের পাঁচিল সংলগ্ন জায়গা থেকে সে সব উদ্ধার করেছেন। কয়েদিরা জেলের দেওয়াল গর্ত করে মোবাইল, মাদক দ্রব্য লুকিয়ে রাখেন বলেও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ আগে জানিয়েছিলেন।
তবে বাইরে থেকে বন্দিদের হাতে জিনিস পৌঁছে দেওয়ার ঘটনায় অন্তর্ঘাত-তত্ত্ব উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনায়। ডিআইজি কারা (মেদিনীপুর রেঞ্জ) শুভব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি আমরা হাল্কা ভাবে নিচ্ছি না। এ ক্ষেত্রেও পাঁচিল টপকে মাদক সংশোধনাগারের ভিতরে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে, এ কথা এখনই মানা যাচ্ছে না। কারণ, সেটি মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। তল্লাশি চালানোর পরেও কী ভাবে ওই রক্ষীর হাতে মাদক এল, তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হচ্ছে।”
তদন্তকারীদের দাবি, মোটা টাকার বিনিময়েই দেবব্রত বন্দিদের জিনিসপত্র সরবরাহ করতেন। কারারক্ষীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সদ্য একটি দামি মোটরবাইক কেনেন দেবব্রত। তাঁর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না কেনার রসিদও মিলেছে। এই সব জিনিসপত্র কেনার টাকার উৎস কী, সে সব তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সেই সঙ্গে বাঁকুড়া শহরে চলতে থাকা মাদক চক্রের হদিস পেতেও দেবব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “ধৃতের কাছে বাঁকুড়া সংশোধনাগারের ভিতরে চলতে থাকা নিষিদ্ধ জিনিসপত্র সরবরাহ চক্র নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি কোথা থেকে মাদক কিনতেন, তা-ও খোঁজ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy