পুষ্পরানি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
বৈশাখের সকালে রোদে তপ্ত পথঘাট। তার উপর দিয়ে দৌড়তে হবে বারো কিলোমিটার। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া, দুই জেলা নিয়ে প্রতিযোগিতা। ফলে, প্রতিযোগীর সংখ্যাও কম হবে না। ফুটবল খেলার বুট থাকলেও, দৌড়নোর জন্য উপযুক্ত জুতো নেই তার কাছে। অন্যের কাছে জুতো চেয়ে পরে দৌড়তে নেমে যদি সমস্যা হয়, সে আশঙ্কাও মাথায় আসে। বছর পনেরোর মেয়েটি তাই সিদ্ধান্ত নেয়, খালি পা-ই ভাল। গ্রামের মাঠে তো এ ভাবেই অনুশীলন করতে হয়।
৮ মে বাঁকুড়ার ছাতনায় আয়োজিত ওই দৌড় প্রতিযোগিতায় খালি পায়েই প্রথম স্থান অধিকার করেছে পুরুলিয়া মফফ্সল থানার মাহালিতোড়া গ্রামের পুষ্পরানি মাহাতো। তার পড়শি গীতা মাহাতো গত দু’বছর টানা স্টেট ক্রসকান্ট্রি প্রতিযোগিতায় সোনা জিতেছেন। তাঁদের গ্রামেরই আরও দু’টি মেয়ে রাজ্য স্তরের স্কুল ফুটবলে জেলার প্রতিনিধিত্ব করেছে। এই চড়া রোদেই অনামিকা, পূজা, সোনামিকা, সীমা, কাকলিদের সঙ্গে ছুটতে হয় পুষ্পরানিকে। তারাও তো খালি পায়েই দৌড়য়। তা হলে সে-ও পারবে, এই জেদ সম্বল করেই প্রথম বার এই ‘ম্যারাথন’-এ নেমে পুষ্পরানির হাতে উঠেছে প্রথমের পুরস্কার।
মাহালিতোড়া গ্রামের অদূরে, পুরুলিয়া-বোকারো জাতীয় সড়কের ধারে রায়বাঘিনি ময়দান। প্রশিক্ষক বিষ্ণুপদ মাহাতোর তত্ত্বাবধানে রোজ অনুশীলন চলে পুষ্পরানি, কাকলি, রেণুকা, গীতাদের। ভোর সাড়ে ৫টায় উঠে বাড়ির কাজ সামলে সোজা মাঠে যেতে হয়। বিষ্ণুপদর কথায়, ‘‘মূলত সকালেই অনুশীলন হয়। তবে পুষ্পর মতো কয়েক জন বিকেলেও আসে। প্রত্যেকেই দিন আনি-দিন খাই পরিবারের। মেয়েগুলোর এতটাই অদম্য ইচ্ছে, ওদের দেখে অনেক কিছু করার ইচ্ছে হয়। কিন্তু সম্ভব হয় না। শুধু ছোলাভেজা দিতে পারি।’’
লাগদা গার্লস হাইস্কুল থেকে এ বারই মাধ্যমিক দিয়েছে পুষ্পরানি। তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে মোট পাঁচ জনের সংসার তার বাবা শশধর মাহাতোর। তাঁর জীবিকা চাষাবাদ। লেখাপড়া, স্কুলের ফাঁকে বাবাকে সহায়তাও করতে হয় ভাইবোনেদের। শশধর জানান, আমনের মরসুমে ধান ও শীতকালীন আনাজ চাষ করে যেটুকু রোজগার হয়, তা দিয়ে কোনও রকমে চলে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজেও ফুটবল খেলতাম। অভাবের সংসারে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন আর দেখতে পারিনি। মেয়েটা মাঠ ভালোবাসে, এক জোড়া জুতো কিনে দিতে বলে। অত দামি জুতো কী ভাবে কিনব! আর কিছু দিন অপেক্ষা করতে বলেছি।’’
পুষ্পরানি বলে, ‘‘প্রতিযোগিতার খবর পেয়ে ঠিক করেছিলাম খালি পায়েই নামব। আমাদের ক্লাবের আরও কয়েক জন খালি পায়ে নেমেছিল। চড়া রোদ ছিল। কিন্তু ঠিক করেছিলাম, লড়াই ছাড়ব না।’’ মাহালিতোড়া ফুনুছবি ক্লাবের ম্যানেজার ভক্তপ্রহ্লাদ মাহাতো বলেন, ‘‘ওই ম্যারাথনে প্রথম ১৫ জনের মধ্যে পুষ্প ছাড়াও, আমাদের আরও ছ’জন ছিল।’’
বাঁকুড়ার ছাতনায় প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্যোক্তা মহাদেব হালদার জানান, পুরুষ ও মহিলা পৃথক বিভাগ থাকলেও, দৌড় এক সঙ্গে শুরু হয়েছিল। পুরুষদের বিভাগে ৬৩ ও মহিলাদের বিভাগে ২৭ জন যোগ দেন। পুষ্পরানি শুধু মহিলা বিভাগে প্রথম নয়, পুরুষদের ৪৩ জনের আগে দৌড় শেষ করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy