মডেল নিয়ে অবিনাশ ও মিলন। —নিজস্ব চিত্র।
বুদ্ধির ঢেঁকি নয়, বুদ্ধিমান ঢেঁকি। পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান মেলায় এমনই মডেল উপস্থাপন করে তাক লাগিয়েছে দুই পড়ুয়া। মেলার নানা মডেলের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতচালিত ঢেঁকিও। কাশীপুর ব্লকের মণিহারা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পড়ুয়া মিলন নন্দী ও অবিনাশ মাহাতো তাদের সেই মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরেছে, গ্রাম বাংলার সনাতন ঐতিহ্য ঢেঁকির নানা গুণাগুণ।
খুদে পড়ুয়াদের বিজ্ঞান ভাবনা তুলে ধরতে পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন করে। এ বারের মেলা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। জেলার বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা হাজির হয়েছে মোট ৯৫টি মডেল নিয়ে। তার মধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট, বৃষ্টির জল ধরে রাখা, গাছ না কেটে প্রয়োজনে ট্রি-শিফটার দিয়ে অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা কিছুর ভাবনা দিয়েছে পড়ুয়ারা। দৈনন্দিন জীবনে অঙ্কের ব্যবহার নিয়েও মজার মডেল রয়েছে সেখানে। আর বৈদ্যুতিন ঢেঁকি।
ধান সেদ্ধ করে চাল তৈরির জন্য গ্রামাঞ্চলে এক চেটিয়া কদর ছিল ঢেঁকির। কাঠের এই যন্ত্রটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। চালকলের রমরমায় এখন বিনা কষ্টে তার দেখা মেলে না। ঢেঁকি চাল ছাঁটতে সময় বেশি নেয়। কিন্তু যত্ন নিয়ে চাল ছাঁটে। ঢেঁকি ছাঁটা চালের পুষ্টিমূল্য কলে ছাঁটা চালের চেয়ে বেশি। সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালেয়র উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক সুব্রত রাহা বলেন, ‘‘ঢেঁকি ছাঁটা চালে মিনারেল, আয়রন, প্রোটিন, ফাইবার ও ভিটামিন-বি অনেক বেশি থাকে। পুষ্টির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধেও এই উপাদানগুলির খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’’
মিলন এবং অবিনাশ জানায়, এই গুণের জন্যই ঢেঁকিকে ফের গৃহস্থের উঠোনে ফেরানোর ভাবনা আসে তাদের মাথায়। দুই পড়ুয়া বলে, ‘‘কলে ছাঁটার সময় চালের উপরের একটা অংশ বাদ চলে যায়। ঢেঁকিতে সেটা হয় না। শুধু চটপট কাজ করলে ঢেঁকি ফের কদর পেতে পারে। আমরা সে জন্য যান্ত্রিক মোটর ব্যবহার করেছি।’’ মিলন ও অবিনাশ জানায়, ঢেঁকিতে বিদ্যুতের খরচ অল্পই হয়। ছোট একটু জায়গা হলেই বসানো যায়। দু’জনের প্রস্তাব, কেউ চালকলের ধরণে কুটির শিল্পও চালু করতে পারেন এই ঢেঁকি দিয়ে।
জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিক ঋতব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই ধরণের অভিনব বিষয় স্কুল পড়ুয়াদের ভাবনায় যে উঠে আসছে, সেটাই মেলার সাফল্য।’’ মেলার উদ্বোধন করেতে এসেছিলেন সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়ুয়াদের তৈরি মডেল দেখে উচ্ছ্বসিত তিনিও।
বিজ্ঞান কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, মেলা চলবে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই ক’দিন জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের সমস্ত বিভাগই বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা বিনামূল্যে ঘুরে দেখতে পারবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy