Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গি রুখতে কঠোর পুরুলিয়া পুরসভা

শহরের দেশবন্ধু রোডের একটি বিশেষ এলাকায় একের পর এক ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান পাওয়ার পরে সেখানকার নির্মীয়মাণ বাড়িগুলির পরিস্থিতি দেখে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।

বহুতলের কাছে কৌটোয় জমা জল। ছবি: সুজিত মাহাতো।

বহুতলের কাছে কৌটোয় জমা জল। ছবি: সুজিত মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

নির্মীয়মাণ বাড়িতে জল জমে থাকলে শুধু জরিমানা করাই নয়, বাড়ির কাজও বন্ধ করে দেবে পুরসভা।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরে এমনই কড়া মনোভাবের কথা জানাল পুরুলিয়া পুরসভা। কারণ শহরের দেশবন্ধু রোডের একটি বিশেষ এলাকায় একের পর এক ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান পাওয়ার পরে সেখানকার নির্মীয়মাণ বাড়িগুলির পরিস্থিতি দেখে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।

দেশবন্ধু রোডের একটি বড় শপিংমল লাগোয়া এলাকাতেই গত দশ দিনে ৩৫ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তবে এখনও পর্যন্ত শহরের অন্য এলাকা থেকে ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর নেই বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। তাহলে শুধু একটি এলাকাতেই কেন এত জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

সেই প্রশ্নের কারণ খুঁজতে গিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, এই এলাকার নির্মীয়মাণ বাড়িগুলি থেকেই ডেঙ্গি ছড়াতে পারে। এই বাড়িগুলির নির্মাণ শ্রমিকদের একাংশ ভিন জেলা থেকে কাজে এসেছেন। সেই সব জেলায় ডেঙ্গি ছড়িয়ে থাকায় শ্রমিকদের মাধ্যমে তা পুরুলিয়াতে চলে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁদেরও কেউ কেউ ডেঙ্গিতে অসুস্থ হয়েছেন।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন আগে কয়েকজন শ্রমিক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। পরে জানা যায়, ওই এলাকার একটি শপিংমলের কর্মী প্রথম ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। তিনি নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতেন। সেই খবর আসার পরেই দেখা গেল ওই এলাকায় হু হু করে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।’’ এ ছাড়া ওই সব নির্মীয়মাণ বাড়ির আনাচে কানাচে পরিত্যক্ত কৌটো ও বিভিন্ন পাত্রে জমা জলেও এডিস মশার লার্ভা গিজগিজ করতে দেখা যায়।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন)। ডাকা হয় ওই এলাকার প্রোমোটারদেরও। ডেঙ্গির সংক্রমণ রুখতে কী কী করতে হবে তা প্রোমোটারদের স্পষ্ট করে দেওয়া হয়।

বস্তুত, আগেই জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় জানিয়েছিলেন, নির্মীয়মাণ বাড়িগুলিতে সতর্ক করার পরেও যদি জল জমে থাকে, তাহলে জরিমানা করা হবে।

এ দিন সেই কথাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়। পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘এখন একটি এলাকার মধ্যে ডেঙ্গি সীমাবদ্ধ থাকলেও তা যে শহরের অন্যত্র ছড়াবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? নির্মীয়মাণ বাড়িগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় জল জমা থাকলে এ বার থেকে শুধু জরিমানা করাই নয়, প্রয়োজনে কাজও বন্ধ করা হবে।’’

ঘটনা হল, এ দিনই ওই এলাকার একটি বড় শপিংমলের পিছনের ফাঁকা জমিতে নানা মাপের পাত্রে জল জমে থাকতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়ন্ত কুমার মাহাতো, সুস্মিতা মাজি-সহ এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘এই পাত্রের জমা জলে এডিস মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে কি না কে বলতে পারে?’’ ওই শপিং মলের এক নিরাপত্তারক্ষী মোবাইলের ছবি দেখিয়ে দাবি করেন, ‘‘আমরা কিন্তু নিয়মিত ফগিং মেশিন থেকে ধোঁয়া ছড়াচ্ছি। ব্লিচিং পাউডারও ছড়ানো হচ্ছে।’’

যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মহামারী বিশেষজ্ঞ সতীনাথ ভুঁইয়া বলেন, ‘‘শপিংমলের পিছনের ফাঁকা জমিতে বেশ কিছু ছোট বড় পাত্রে জমা জলে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে। মল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ওই সমস্ত পাত্রে জমে থাকা জল ফেলে দিতে বলেছি।’’

ওই এলাকায় যান পুরপ্রধান সামিমদাদ খান, পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল বিভাস দাস-সহ পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরাও। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘মল কর্তৃপক্ষকে আমরা নোটিস দিচ্ছি। এ ছাড়া বিভিন্ন নির্মীয়মাণ বাড়িগুলিতে যে শ্রমিকেরা কাজ করছেন, তাঁদের ঠিকানা-সহ নামের তালিকা রাখতে বলা হয়েছে। তাঁরা কেউ যদি জ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia municipality Dengue ডেঙ্গি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE