(বাঁ দিক থেকে) সনাতন গোস্বামী ও মায়ের সঙ্গে মঙ্গলা গোস্বামী। নিজস্ব চিত্র
সরকারি আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ষড়যন্ত্র করে সুচ ফুটিয়ে শিশুকন্যাকে হত্যার মামলায় সোমবার রায়দান স্থগিত রাখল পুরুলিয়া আদালত। গত শুক্রবার ঘটনায় অভিযুক্ত পুরুলিয়ার মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামের কীর্তনশিল্পী সনাতন গোস্বামী (ঠাকুর) ও তাঁর ‘প্রেমিকা’ তথা নিহত শিশুর মা মঙ্গলা গোস্বামীকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। আজ, মঙ্গলবার রায় ঘোষণা হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
দু’টি আলাদা প্রিজ়ন ভ্যানে এ দিন দুপুরে পুরুলিয়া সংশোধনাগার থেকে সনাতন ও বাঁকুড়া সংশোধনাগার থেকে মঙ্গলাকে জেলা আদালতে নিয়ে আসা হয়। টি-শার্ট ও ট্রাউজার পরা সনাতনের মাথায় জ্বলজ্বল করছিল লম্বা সিঁদুরের টিপ। মুখ-চোখ নির্বিকার। তবে সালোয়ার-কামিজ পরা, এলোমেলো চুলে বিধ্বস্ত দেখিয়েছে মঙ্গলাকে। এজলাসে হাজির করানোর পরে, বিচারক দুই অভিযুক্তকে জানিয়ে দেন, মামলায় তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এ কথা শুনে কার্যত নির্বিকার ছিল সনাতন। বিচারকের কথা শুনে বিড় বিড় করে কিছু বলার চেষ্টা করলেও শেষমেষ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল সে। তবে গোটা সময়ে কাঁদতে দেখা গিয়েছে মঙ্গলাকে।
পরে, সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ার আলি আনসারি বলেন, ‘‘এ দিন মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আদালতের কাছে আমাদের আবেদন ছিল, মামলায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া প্রয়োজন। শিশুর কাছে মায়ের কোলই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। অথচ, এ ঘটনায় মায়ের কাছেই সাড়ে তিন বছরের শিশুকন্যাটি বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। মা হিসেবে সন্তানকে যে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, তা দিতে মঙ্গলা ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু শিশুটির উপরে নির্যাতনের যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতেও তার প্রশ্রয় ছিল।’’
তাঁর সংযোজন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে, দু’জনের যোগসাজশেই এ ঘটনা সম্ভব হয়েছিল। শিশুকন্যাটিকে জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তা হয়েছিল সনাতনের দুই পুত্রবধূ ও পড়শিদের চাপেই। যেহেতু মায়ের কাছেই শিশুকন্যাটির নিরাপত্তা ছিল না, তাই এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়েছি। তার প্রেক্ষিতে বিচারক আজ মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছেন। কাল, মঙ্গলবার মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।’’ একই কথা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী
শেখর বসুও।
তবে এজলাসের বাইরে বেরিয়ে এ দিন সনাতন দাবি করে, ‘‘এখনও বলছি, আমি নির্দোষ। আমি চক্রান্তের শিকার।’’ তা হলে পালিয়েছিল কেন? সনাতনের জবাব, ‘‘পালিয়ে তো যাইনি। আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলাম।’’ উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্র জেলার পিপিড়ের রেণুকোট থেকে তাকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তোলা হলে সনাতনের দাবি, ‘‘ওখানে কীর্তন হচ্ছিল। সেখানে ছিলাম। আপনারা কি জানেন না, আমি অনেক দিন ধরেই কীর্তন গাই! সঙ্গীতের প্রতি আমার আলাদা একটা টান রয়েছে।’’
এ দিকে, আদালতের বারান্দায় কয়েক ফুট দূরে পুলিশি ঘেরাটোপে চিৎকার করে কাঁদছিল মঙ্গলা। মহিলা পুলিশকর্মীরাই তাকে ধরে বেঞ্চে বসিয়ে চোখে-মুখে জল দেন। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রসঙ্গে তারও দাবি, ‘‘আমি নির্দোষ। আমি কিছু জানি না। আমি কোনও দোষ করিনি।’’ মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে দিতে মঙ্গলার মা মাধুরী মোহন্তও দাবি করেন, ‘‘মেয়েটা চক্রান্তের শিকার হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy