দুর্ভোগ: জল ভেঙেই যাতায়াত। তবে সিউড়ি নয়, এ ছবি রামপুরহাট হাসপাতালের। নিজস্ব চিত্র
কখনও রোগীর পরিজনদের হেনস্থা, মারধরের অভিযোগ। কখনও তাঁদের নজরদারি এড়িয়ে রোগীর নিখোঁজ হওয়া বা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেকসের দরজা ভেঙে চুরির চেষ্টা— বার বারই সিউড়ি জেলা হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে আঙুল উঠেছে।
এ বার সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার ভাবনা নিল হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সমিতির বৈঠকে হাসপাতালের পরিকাঠামো ও নানা সমস্যা নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে, একগুচ্ছ সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। তবে সব চেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের নিরাপত্তায়— এ কথা জানিয়েছেন রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে সবুজায়ন, দু’টি ভবনের মধ্যে রোগীদের যাতায়াতের জন্য দু’টি ব্যাটারিচালিত অ্যাম্বুল্যান্স কেনা, দু’টি ভবনের মধ্যে যাতায়াতের পথে বিদ্যুদয়ন, হাসপাতালের নতুন ভবনে নির্মাণ ত্রুটিজনিত সংস্কার, বাগান তৈরি, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি সহ একধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সবার আগে ছিল নিরাপত্তা।’’
হাসপাতালের পরিকাঠামো সংক্রান্ত কোনও বিষয় বা রোগীদের সুষ্ঠু পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া— সবই হয় রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ বারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রোগীকল্যাণ সমিতির প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি তথা জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়, হাসাপাতাল সুপার শোভন দে, সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি, এক জন চিকিৎসক প্রতিনিধি, আইএমএ-র প্রতিনিধি, সামাজিক সংঠনের প্রতিনিধি, নার্সিং সুপার এবং পূর্ত দফতরের ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল ও সিভিল বিভাগের আধিকারিক, জেলা পুলিশের এক কর্তা। ‘‘রোগীকল্যাণ সমিতি থাকলেও, সব জায়গায় সেগুলি ঠিক মতো কাজ করছে না”— কলকাতার এনআরএস কাণ্ডের জেরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির ভূমিকা নিয়ে এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের এক প্রতিনিধি।
তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠক হয়, অনেক সিদ্ধান্ত সেখানে নেওয়া হয়, কিন্তু সে সব কার্যকর করা হয় না।’’ যা শুনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘ওরা কথাগুলো ভাল বলছে। এগুলো দেখো। রোগীকল্যাণ সমিতিকে আরও কার্যকর করতে হবে।’’ তার পরেই বৈঠক হয় সিউড়ি জেলা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির।
জেলা হাসপাতাল বর্তমানে ১০২ কোটি টাকা খরচে তৈরি ঝা-চকচকে ৫০০-শয্যার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের পুরনো ভবন থেকে প্রসূতি ও শিশু ওয়ার্ড ছাড়া প্রায় সব বিভাগ নতুন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষোভ না থাকলেও, বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। রোগী ও তাঁদের পরিজনদের একাংশের বক্তব্য, সেই তালিকায় অন্যতম নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গলদ। তা মানছেন সুপার শোভন দে এবং বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি। সিএমওএইচ বলছেন, ‘‘হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরে কী ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে, তা দেখবে জেলা পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করবেন। সেটা ঠিক না থাকলে যে কোনও দিন বড় ঘটনা ঘটতে পারে।’’
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, হাসপাতালে একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। এনআরএস কাণ্ডের পরে সেখানে পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। একজন আধিকারিক রয়েছেন। দেওয়া হয়েছে সিভিককর্মীও। যাতে যে কোনও ঝামেলায় তাঁরা দ্রুত পদক্ষেপ করতে পারেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয় নিয়ে ভিন্ন ভাবনা নেওয়া হবে। কারণ দায়িত্ব পালনে বেশ কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে সেই নিরাপত্তারক্ষীদের, তা স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে মানছেন পুলিশকর্তারাও।
তাঁদের দিকে যে অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছে সেটা জানেন হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরাও। তাঁদের এক প্রতিনিধি জগন্নাথ সাহা বলছেন, ‘‘দোষী হয়ে যাচ্ছি আমরাই। কিন্তু শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়ে রোগীর পরিজনদের হাতে মাঝেমধ্যেই হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে আমাদেরই। দেখলে সব দিকই দেখা উচিত।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy