একমনে: নকশা তৈরির আনন্দে। নিজস্ব চিত্র
বন্দিদের ছেনি-হাতুড়িতে পাহাড় রূপ পাবে শিল্পীর ভাস্কর্যে। এমনই ভাবনা থেকে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির মাঠা বনাঞ্চলে শ্রীরামপুর গ্রামের অদূরে একটি টিলার নীচে বুধবার থেকে আটজন বন্দিকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে কারা দফতর। সঙ্গে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখানে টিলা কেটে ভাস্কর্য তৈরির কাজ করছে একটি সংস্থা। কয়েকজন বন্দিকেও ওই কাজে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কাজটি তারা ভালভাবে রপ্ত করতে পারলে, আগামী দিনে মুক্তি পাওয়া পরে নিজেরাও এই কাজকে পেশা হিসেবে নিতে পারবে।’’
বাঘমুণ্ডির মাঠা বনাঞ্চলে শ্রীরামপুর গ্রামের অদূরে অযোধ্যা রেঞ্জের একটি টিলা খোদাই করে ‘উড়ন্ত পাখি’র রূপদানের কাজ শুরু করেছে একটি সংস্থা। নব্বুইয়ের দশকে এই কাজ শুরু হয়। তবে কাজ নানা সময়ে আটকেছে। কখনও বিভিন্ন দফতরের অনুমতি পেতে সময় গিয়েছে। কখনও বা মাওবাদী কার্যকলাপের জেরে কাজ থমকে গিয়েছে দীর্ঘসময়। পাহাড়ে এখন শান্তি ফিরেছে। ফের টিলার গায়ে ছেনি আঘাত করে উড়ন্তপাখিকে ফুটিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার থেকে সেই টিলার নীচেই ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে পাথর কাটার প্রশিক্ষণ নেওয়ার কাজ শুরু করলেন বন্দিরা।
আটজন বন্দির মধ্যে ছ’জন আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এবং দু’জন পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারের। এ দিন যে সমস্ত বন্দির ছেনি-হাতুড়ি হাতে নিয়ে ভাস্কর্যের কাজে হাতেখড়ি হল, তাঁদের অন্যতম পুরুলিয়া সংশোধনাগারের বন্দি বাঘমুণ্ডির বাসিন্দা রোগিন সিং মুড়া। তিনি একমনে পাথর কাটার কাজ করছিলেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দি নবদ্বীপের বাসিন্দা রঞ্জিত দাস, বর্ধমানের বাসিন্দা সুধীর পালেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘এই কাজ করতে খুব ভালো লাগছে। আমরা এই কাজটা শিখতে চাই।’’ তাঁদের নজরে রাখছেন পুলিশ কর্মীরা। প্রশিক্ষণ চলবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বাঘমুণ্ডির মাঠা বনাঞ্চলের ওই টিলা এখনও উড়ন্ত পাখির সম্পূর্ণ রূপ না পেলেও লোকমুখে সেটাই এখন ‘পাখি পাহাড়’ নামে পরিচিত। এই কাজের অন্যতম রূপকার চিত্ত দে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘একসময়ে অপরাধ করে থাকলেও ওঁদের মধ্যে প্রতিভা রয়েছে। আগে ওদের নিয়ে ছবি আঁকার কাজ করেছি। এ বার পাথর কাটার কাজের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ওদের মধ্যে যদি কেউ দক্ষতা দেখাতে পারে, তাহলে এই পাখি পাহাড় প্রকল্পের কাজে ওদের নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’’ তিনি জানান, আগামী দিনে মুক্ত হওয়ার পরে যাতে তারা কাজ শিখে ফের সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারে, সেই লক্ষেই এই উদ্যোগ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy