Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

দামে ছ্যাঁকা, বিক্রি পড়ল মাংসের

পুরুলিয়া আর বাঁকুড়ার ঘরে ঘরে এখন আলোচনার অন্যতম কেন্দ্র পেঁয়াজ। খোলা বাজারে দর ১৪০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে। আড়ত থেকে মধ্যবিত্তের হেঁশেল ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।

মহার্ঘ্য: পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে খুচরো পেঁয়াজের দাম রবিবার ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। নিজস্ব চিত্র

মহার্ঘ্য: পুরুলিয়া শহরের বড়হাটে খুচরো পেঁয়াজের দাম রবিবার ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২৭
Share: Save:

মাংসের ঝোল, ভাত— বাঙালির এই রবিবাসরীয় মধ্যাহ্নভোজে বাধ সেধেছে অগ্নিমূল্যের পেঁয়াজ। তার জেরে এ দিন মাংসের বেচাকেনাও কমেছে। বড়জোড়া থেকে বলরামপুর, রানিবাঁধ থেকে রঘুনাথপুর— সর্বত্রই এ দিন কমবেশি একই ছবি দেখা গিয়েছে।

বস্তুত পেঁয়াজের দর কেজিতে একশো পার হতেই মন্দা শুরু হয়েছে মাংসের বাজারে। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, খাতড়া, পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, ঝালদা, আদ্রায় খাসি বা মুরগির মাংসের বেচাকেনা কমতে শুরু করে তখনই। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ভরসা বিয়ের মতো কিছু অনুষ্ঠান।

এ দিন দুই জেলার অধিকাংশ বাজারে পেঁয়াজের দর গিয়েছে কেজি পিছু ১৩০-১৪০ টাকা। তবে রঘুনাথপুর,আদ্রায় পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০টাকা আর ঝালদায় ১০০ টাকা। দাম এত চড়ায় হিসেব কষেই রান্না চলছে হেঁশেলে। জেলার শহর ও মফস্সল এলাকায় সাধারণত রবিবার সকাল থেকেই মাংসের দোকানে ঠাসা ভিড় দেখা যায়। এ দিন ভিড় যে একেবারে ছিল না তা নয়। কিন্তু মোটের উপরে বিক্রিবাটায় খুশি নয় মাংস বিক্রেতারা।

বাঁকুড়ার কালীতলা এলাকার মুরগির মাংস বিক্রেতা নরেশ দাস বলেন, “শুধু ভিড় দেখলেই হবে? যিনি এক কেজির কম কোনও দিনই মাংস কেনেন না, তিনি এখন মেরেকেটে সাতশো গ্রাম মাংস কিনছেন। বেশির ভাগ ক্রেতাই মাংস কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।” শহরের বাসিন্দা দীনেশ রায়, বুধন মালাকাররা বলেন, “বেশি মাংস মানেই তো পেঁয়াজের খরচ বেশি! এ দিকে মাংস ছাড়া চলেও না। তাই খুব মেপেজুপে বাজার করতে হচ্ছে।’’

বিষ্ণুপুরের ছবিটাও একই। গোপালগঞ্জের মাংস ব্যবসায়ী খোকন রুইদাস বলেন, “রবিবারে গড়ে ৫০-৬০ কেজি মাংস বিক্রি করি। এখন তা ৪০ কেজিতে ঠেকেছে।” শহরের মাংস ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বর্ষশেষের কয়েকটি সপ্তাহে পিকিনিকের ধুম পড়ে। তাই এই সময়ে মাংসের প্রচুর চাহিদা থাকে। কিন্তু পেঁয়াজের দাম না কমলে মাংস বিক্রি এ বার মার খাবে মনে হচ্ছে।’’

আদ্রার গার্লস স্কুল মোড়ের মাংস বিক্রেতা রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন দিন পনেরো ধরেই পেঁয়াজ-সহ আদা, রসুনের চড়া দামের কারণে মাংস বিক্রিতে মন্দা। তিনি জানান, রবিবারে তিনি দুই কুইন্টাল খাসির মাংস বিক্রি করেন। এ দিন অর্ধেক বিক্রি হয়েছে তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘শীতের সময়ে রবিবারগুলির দিকে আমরা তাকিয়ে থাকি। কিন্তু দিন পনেরো ধরেই পেঁয়াজের চড়া দামে মাংস বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে।”

তাঁর সুরেই আক্ষেপ করেছেন পুরুলিয়া শহরের গোশালা মোড়ের মাংস বিক্রেতা কৃষ্ণচন্দ্র গড়াই। তিনি জানানচ্ছেন, রবিবার প্রায় দশটি খাসি কেটে বিক্রি করেন। এ দিন পাঁচটি খাসির মাংস বিক্রি করেছেন। সৈনিক স্কুল মোড়ের বিশু গড়াই থেকে রঘুনাথপুরের মোহন মণ্ডল, ঝালদার বুকা রজক প্রভৃতি মাংস বিক্রেতাদের মুখে এক হা-হুতাশ। তাঁরা বলেন, ‘‘যাঁরা মাংস কিনছেন, তাঁরাও কম পরিমাণে নিচ্ছেন। ব্যবসার অবস্থা মোটেই ভাল নয়।’’

ক্রেতারাও মনমরা। পুরুলিয়া শহরের মিতা তিওয়ারি, রঘুনাথপুরের দেবদাস চট্টোরাজ, ঝালদার দেবদুলাল চট্টরাজেরা বলেন, ‘‘রবিবার পাতে মাংস না হলে কি চলে? তাই কম পরিমাণেই কিনছি।’’

আবার অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা কিছু দিনের জন্য মাংসের দোকানের দিকে যাচ্ছেন না। পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পেঁয়াজ ছাড়াই সুস্বাদু মাছের রান্না হয়। তাই রবিবার মাংসের বদলে মাছই কিনলাম।”

অন্য বিষয়গুলি:

Onion Price Hike Meat Shop
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy