বুথের পথে। শনিবার। নলহাটিতে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
আজ ভোটপর্ব চলবে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত, এগারো ঘণ্টা। তার আগের দিন নলহাটিজুড়ে শুধুই ভোট নিয়ে তর্ক, হরেক আলোচনা। নানা সমীকরণ, তার সম্ভাবনা নিয়ে চলল কাটাছেঁড়াও। শনিবার নলহাটি পুর এলাকায় ঘুরে উঠে এল টুকরো কিছু ছবিও। তারই ঝলক আনন্দবাজারে
নিভেছে বাতি
ভোটের নলহাটিতে ঢুকতে শুরু করেছে ‘বাইরের লোক’। শহরে গুঞ্জন, ভোটারদের প্রভাবিত করতেই নানুর, বোলপুর, লাভপুর, ইলামবাজার, সাঁইথিয়া, সিউড়ি, ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার বাছাই করা কিছু তৃণমূল কর্মীকে ইতিমধ্যেই জড়ো করা হয়েছে। এই মর্মে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েছে বাম-বিজেপি। বিরোধী দলের অভিযোগ, ওই বহিরাগতদের ঠাঁই হয়েছে নানা লজ, হোটেলে। শুক্রবার গভীর রাতে অভিযানও চালায় পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘‘লজে, ধাবায় অভিযান চালানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ বাইরের লোক এনে ভোটে গোলমাল তৈরির চেষ্টার অভিযোগ উড়িয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বও।
ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে ইচ্ছে করেই এলাকায় কারেন্ট বন্ধ করে রাখা হচ্ছে বলেও বিরোধীরা অভিযোগ করছে। বিদ্যুৎ কর্তারা অবশ্য জানিয়েছে, ফিডার লাইন বসে গিয়েই ওই ঘটনা। জেলার এক বিরোধী নেতার কথায়, ‘‘ভোটের আগে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করতেই পরিকল্পতি ভাবে এমনটা করা হচ্ছে না, সেটাই বা কে নিশ্চিত করে বলতে পারে?’’
রেলগেট কাঁটা
শুক্রবারই ভোট প্রচারে এসে রেলগেটের জন্য জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে প্রায় আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। শুধু অনুব্রত নন, নলহাটি শহরের ভৌগোলিক অবস্থান পুলিশ, প্রশাসনকেও বিপাকে ফেলেছে। নলহাটি শহরের ১, ২, ৩, ৫, ১৪, ১৫ এই ৬টি ওয়ার্ড রেলগেটের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বাকি দশটি ওয়ার্ড রেলগেটের পশ্চিমপ্রান্তে। এর ফলে রেলগেট পড়ে থাকা অবস্থায় পূর্ব প্রান্তের বা পশ্চিম প্রান্তের ওয়ার্ডগুলিতে গণ্ডগোল বাঁধলে ওই জায়গায় পৌঁছাতে থানা থেকে জগধারী বাইপাস ধরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই পুলিশ, প্রশাসনের। সেক্ষেত্রে চটজলদি পৌঁছতে সময় লাগবে। অন্য দিকে চার নম্বর ওয়ার্ডের বাইপাস রাস্তা বৃষ্টির জন্য ডুবে থাকায় ওই রাস্তা আজ, ভোটের দিন কোনও কাজে লাগবে না বলে প্রশাসনের একটি সূত্র দাবি করেছে। ফলে রেলগেট কাঁটা থাকছেই।
প্রতিরোধের ডাক
নাহ্ কোনও শিলিগুড়ি মডেল নয়। ভোটের দিনে বহিরাগতদের দিয়ে হামলা, বুথজ্যাম করার চেষ্টা হলে আলাদা আলাদা ভাবে সেই চেষ্টা রুখে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিরোধীরা। তবে আদৌ সে সব কতটা সম্ভব হবে, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিরোধীদের একাংশের মনেও। সেক্ষেত্রে ভরসা, কেবল পুলিশ-প্রশাসনই। এ নিয়ে দায়ের হয়েছে অভিযোগও। শনিবারই নলহাটি পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা রামপুরহাটের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাসের কাছে জেলা বামফ্রন্ট কমিটি এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বহিরাগতদের নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ। রিটার্নিং অফিসার সুপ্রিয় দাস জানান, অভিযোগের কপি থানায় পাঠিয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভূত দর্শন
বহিরাগত এনে ভোট লুঠের চেষ্টার অভিযোগকে হাস্যকর বলে মনে করছেন বিদায়ী পুরপ্রধান রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটে হার হচ্ছে জেনেই আগেভাগেই কাদুনি গেয়ে রাখছে বিরোধীরা। এতো ভূতের ভয়!’’ তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, কংগ্রেস বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঝামেলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। বিদায়ী পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘দলীয় কর্মীরা কংগ্রেস কর্মীদের প্ররোচনায় পা দেয়নি। আসলে পর দিন বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়েছে বুঝেই লোক দেখানো অভিযোগ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy