সানতোড় গ্রামের এই দোকান থেকেই হাজার হাজার সিম কার্ড চালু করেছিল রাজারাম বিস্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
‘ই-ওয়ালেট’ জালিয়াতি কাণ্ডের তদন্তে নয়া মোড়! পুলিশের দাবি, নকল আধার কার্ড তৈরির মধ্যেই লুকিয়ে এই জালিয়াতির আসল রহস্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে জানা গিয়েছে যে হাজার হাজার মোবাইল সিম চালু করতে নকল আধার কার্ড তৈরির ব্যবস্থাও করেছিল ‘ই-ওয়ালেট জালিয়াত চক্রের মূল চক্রী বাঁকুড়ার অভিষেক মণ্ডল। সেই আধার কার্ডের জন্য ছবি সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আর এক জনকে। অত্যন্ত গোপনে চলত গোটা অপারেশন। ‘ই-ওয়ালেট’ জালিয়াতির বখরা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যেত প্রত্যেকের কাছে। তাতেই ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করেছিল এই চক্রের সঙ্গে যুক্তেরা।
এই জালিয়াতি কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ধৃত ন’জনকে আলাদা ভাবে জিজ্ঞসাবাদ করেছে পুলিশ। জালিয়াতির কাজে প্রত্যেকের ভূমিকা কী ছিল, তা খতিয়ে দেখা হয়। তাতে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে শুরু করে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, অভিষেক পেটিএম, এয়ারটেল মানি, ভীম-সহ বিভিন্ন ‘ই-ওয়ালেট’-ও অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্য বিভিন্ন বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার ডিলারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল।
কিন্তু কোন নথির ভিত্তিতে ওই সিম কার্ডগুলি চালু করত ডিলাররা? পুলিশের দাবি জানিয়েছে, সাইবারের অপরাধের অন্ধকার জগতে ক্রমশ প্রতিপত্তি বাড়তে থাকায় অভিষেকের তৈরি ‘ই-ওয়ালেট’ অ্যাকাউন্টের চাহিদাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিন্তু একটি সিম কার্ডের নম্বর ব্যবহার করে এক সংস্থার ‘ই-ওয়ালেট’-এ এক বার মাত্র আকাউন্ট করার সুযোগ থাকায় সমস্যায় পড়ে সে। সে জন্যই বিকল্প রাস্তা বেছে নেয় অভিষেক। বাঁকুড়ার জয়পুর থানার রাউৎখন্ড গ্রামের বাসিন্দা দীপক গুঁই কম্পিউটারে ফোটোশপ সফটওয়্যারে কাজে দক্ষ জেনে তাকে নকল আধার কার্ড তৈরির দায়িত্ব দেয় সে। সে জন্য ছবি সংগ্রহের দায়িত্ব পায় ওন্দা থানার সানতোড় গ্রামের বাসিন্দা পেশায় মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সিম কার্ডের ডিলার রাজারাম বিস্বাস। রাজারামের কাছে এলে বিভিন্ন ব্যক্তি সিম কার্ড তুলতে এলে নানা অছিলায় তাঁদের ছবি তুলে নিত সে। মোবাইলে তোলা সেই ছবি সরাসরি হোয়্যাটসআপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হত দীপকের কাছে। দীপক সে ছবি ব্যবহার করে ইচ্ছেমতো নাম-পরিচয় ও ঠিকানা বসিয়ে ফোটোশপে নকল আধার কার্ড তৈরি করত। তার সফ্ট কপি ফের পাঠিয়ে দিত রাজারামের কাছে। রাজারাম সেই নকল আধার কার্ডের ভিত্তিতে সিম কার্ড অ্যাক্টিভেট করে অভিষেক কাছে পৌঁছে দিত।
তদন্তকারীরা দীপক এবং রাজারামের কম্পিউটার থেকে হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করেছেন। তার মধ্যে হাজার হাজার নকল আধার কার্ডের সফ্ট কপি ও ছবি উদ্ধার হয়েছে। দীপক এবং রাজারামের সঙ্গে অভিষেকের কী ভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। অভিষেকের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ন’হাজার সিম কার্ড তোলা হয়েছিল বেশ কয়েক জন ডিলারের কাছ থেকে। এত বিপুল সংখ্যক আক্টিভেট করা সিম কার্ড সংগ্রহে মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কোনও আধিকারিক বা কর্মী জড়িত রয়েছে কি না, সে বিষয়টাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের দু’জন সাইবার বিশেষজ্ঞ বাঁকুড়ায় গিয়ে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy