Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

চাঁদার জুলুমে ভরসা পুলিশের ব্যারিকেড

পথ-আটকে: শনিবার সকালে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে বিষ্ণুপুরের উজালা মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

পথ-আটকে: শনিবার সকালে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে বিষ্ণুপুরের উজালা মোড়ে। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
 বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:২০
Share: Save:

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশ যে ব্যারিকেডগুলি ব্যবহার করে, বিষ্ণুপুরে সেগুলি জুলুম করে চাঁদা আদায়ে খুবই কাজে আসছে। পুজো আসতে হাতে গোনা ক’টা দিন বাকি। এর মধ্যে, পড়ে পাওয়া ব্যারিকেডে চাঁদা আদায়কারীদের সুবিধা হয়েছে বেশ! তবে যাত্রীরা ভ্যাবাচাকা। বাধ্য হয়ে দেড়শো থেকে পাঁচশো টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে, ওই ব্যারিকেডগুলির দিকে পিছু ফিরে দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছেন তাঁরা।

ছবিটি মোটেও প্রতীকি নয়। একেবারে আক্ষরিক। শনিবার সকাল ৭টা। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে বিষ্ণুপুর হয়ে চলে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বিষ্ণুপুরে ঢোকার মুখে পড়ে উজালা মোড়। সেখানেই জনা দশেক যুবক এবং তরুণ পুলিশের ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে চাঁদা আদায় করছিলেন। হাতে বাঁশ আর লাঠি। যাত্রীবাহি বাস, মাছ বোঝাই ট্রাক— আটকানো হচ্ছে সমস্ত গাড়ি। ছাড় পাচ্ছেন না পর্যটকেরাও। সপ্তাহান্তের ছুটিতে বেলুড় থেকে বিষ্ণুপুরে বেড়াতে আসছিলেন সুপ্রতীম বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের গাড়ি আটকেও জবরদস্তি করে আদায় করা হল চাঁদা। তিনি বলেন, ‘‘প্রাচীন শহর। বাংলার অন্যতম পর্যটন নগরী। সেখানে ঢোকার মুখেই এমনটা হবে, ভাবতেই পারিনি। এখন ঘুরবো না থানায় অভিযোগ জানাতে যাবো বলুন তো? পুলিশ এই সময়টায় একটু বাড়তি পাহারা দিতে পারে না?’’

চাঁদা নিয়ে ক্রমাগত চলছে দর কষাকষি। এ দিকে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে ব্যারিকেড দিয়ে। বেলা বাড়তেই দু’দিকেই দেখা গেল আটকে পড়া গাড়ির লাইন। আর তাতে হাঁসফাঁস অবস্থা যাত্রীদের। বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে যাওয়ার পথে থমকে পড়েছিলেন রোগী রাও।

পুলিশের ব্যারিকেড আইনভঙ্গকারীদের হাতে গেল কী করে? পুলিশের একটি সূত্রের খবর, উজালা মোড়ের কাছে ওই ব্যারিকেডগুলি রাখা থাকে। ধারেকাছে পুলিশ নেই দেখে সেগুলি টেনে এনেছেন ওই যুবকেরা।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ বাস মালিকেরা। বাঁকুড়া বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অঞ্জন মিত্র বলেন, ‘‘নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। চাঁদার জুলুমের চোটে অনেকে সাময়িক ভাবে বাস বন্ধ করে দিচ্ছেন।’’ তাঁর অভিযোগ, কোতুলপুর থানার সামনেই চলছে চাঁদা নিয়ে জোরজুলুম। সোনামুখী-বেলিয়াতোড় রাস্তার রামপুরে কিছু দূর যেতে হলেই বার বার আটকে পড়তে হচ্ছে চাঁদা আদায়কারীদের জন্য। নিস্তার নেই পখন্নাতেও। এক বাস মালিক বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোতেই তো হাজার দশেক টাকা বেরিয়ে গেল। এখনও সরস্বতীপুজো পর্যন্ত চলবে ব্যাপারটা। এ রকম চললে বাস চালানোটাই মুশকিল হয়ে পড়বে।’’ বাস মালিকদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনকে অনেক বার জানিয়েও কাজের কাজ হয়নি। সোমবার জেলার প্রতিটি থানার ওসি-কে লিখিত ভাবে চাঁদার জুলুম নিয়ে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বিষ্ণুপুর মহাকুমা ট্রাক অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মহেশ শরাফ বলেন, ‘‘চাঁদার জুলুম যা বাড়ছে, এ বারে ব্যবসা করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। রাস্তায় ট্রাক বের করা দায় হয়ে গিয়েছে। দাবি মতো চাঁদা না দিলে ড্রাইভারকে মারধর করা হয়। গাড়ি ভাংচুর তো আছেই।’’

কী করছে পুলিশ?

এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনও রকম অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

donation Police barricades
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy