তারাপীঠে চোখে পড়ছে এমন ফ্লেক্স। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
তিনি জেলায় নেই, আছেন জেলে। তাঁর জেলার তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যা আয়োজনের পোস্টার থেকেও এ বার উধাও বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ছবি। বীরভূমে যে কোনও অনুষ্ঠানের প্রচারে অনুব্রত ছবি থাকা যেখানে কার্যত ‘নিয়ম’ ছিল, এ বার তার ব্যতিক্রম হওয়ায় জোর জল্পনা বীরভূমে।
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে রামপুরহাট থেকে তারাপীঠ যাওয়ার যাওরার রাস্তার ধারে নানা জায়গায় দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে পর্ষদের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে শুভেচ্ছা বার্তার ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। প্রতি বারই দলের পক্ষ থেকে কৌশিকী অমাবস্যার সময় তৃণমূলের জেলা সভাপতির ছবি-সহ ফ্লেক্স দেখা গিয়েছে। এ বার তা নেই। তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা ডেপুটি স্পিকার এবং তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা দলীয় কোনও ফ্লেক্স নয়। সুতরাং ওই প্রসঙ্গে বলার কোনও এক্তিয়ারও নেই আমার।’’
কৌশিকী অমাবস্যার সময় প্রায় প্রতি বার দলের অনুব্রত তারাপীঠে আসতেন। পুজো দিতেন। অনেক সময় দলের অনুগামীরা তারাপীঠে দলের সভাপতির মঙ্গল কামনায় কৌশিকী অমাবস্যায় যজ্ঞও করতেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারাপীঠে থেকে সেই যজ্ঞ দেখতেন অনুব্রত। এ বার গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে তিনি জেলে। আর এ বারই তাঁর ছবি দিয়ে দলের চেনা ফ্লেক্স উধাও! তারাপীঠ এলাকায় তৃণমূলের দলীয় পতাকা অবশ্য টাঙানো হয়েছে। এ বারের দলীয় প্রচারে অনুব্রতর এই ‘অনুপস্থিতি’ নিয়ে তারাপীঠে কোনও তৃণমূল কর্মীই কিছু বলতে চাননি।
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে রামপুরহাট শহরেও সানঘাটা সেতু সংলগ্ন এলাকায় পুরসভার পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে বড় তোরণ করা হয়েছে। ওই তোরণেও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি আছে। আগেও পুরসভার পক্ষ থেকে একই রকম তোরণে অনুব্রত মণ্ডলের ছবি দেখা গিয়েছে। এ বছরের ২১ শে জুলাই ‘ধর্মতলা চলো’ কর্মসুচিতে ফ্লেক্সে অনুব্রত মণ্ডল সহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সহ ফ্লেক্স এখনও শহরে টাঙানো রয়েছে। কিন্তু কৌশিকী অমাবস্যার ক’দিন আগে অনুব্রত গ্রেফতার হতেই তার ছবি বাদ চলে যাওয়া নিয়ে চর্চা চলছে এলাকায়।
বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন, ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর রামপুরহাট কিষান মান্ডিতে বুথ ভিত্তিক কর্মিসভায় সময় মেজাজ হারিয়ে বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অপদার্থ’ বলেছিলেন অনুব্রত। তারই ‘বদলা’ নিতে সুযোগ বুঝে আশিসবাবু এ বার অনুব্রতকে ‘মুছে ফেলতে’ চেয়েছেন। বিজেপির বীরভূম জেলা সাংগঠনিক সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘তৃণমূলের বোধোদয় হয়েছে। তাই গরুচোর, কয়লাচোর, বেকার যুবকদের চাকরি চোরদের ছবি আর ফ্লেক্সে টাঙাতে লজ্জা পাচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘তৃণমূল বুঝতে পেরেছে একজন অপরাধীর ছবি দেওয়া মানে পুণ্যার্থীদের কাছে আরও বেশি লজ্জিত হওয়া। তবে যাদের ছবি দেওয়া হয়েছে তাদের ছবিও সরে যেতে আর বেশি দিন নেই।’’
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠন করেছেন। তাঁর আমলে তারাপীঠে সৌন্দর্যায়ন, রাস্তা সম্প্রসারণের মতো নানা উন্নয়ন-কাজ করা হয়েছে। রাস্তার দু’ধারে আলো বসেছে। তাই পর্ষদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে।’’ রামপুরহাটের পুরপ্রধান সৌমেন ভকত বলেন, ‘‘দলীয় কোনও কর্মসূচি নয় বলেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও দেওয়া হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy