Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Purulia Town

বৃষ্টিতে ডোবা কলোনি বাঁচাতে দমকল-তলব

পুরুলিয়া শহরের ১ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি নিয়ে তাই বাসিন্দারা পুরভোটের মুখে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

ডেঙ্গি নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল সারা শহর। কিন্তু যে এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল, সেখানকার নিকাশি ব্যবস্থারই হাল ফেরেনি। পুরুলিয়া শহরের ১ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি নিয়ে তাই বাসিন্দারা পুরভোটের মুখে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। অভিযোগের যে আংশিক সত্যতা রয়েছে, মানছেন খোদ তৃণমূলের পুরপ্রধানও।

শুধু ওই দুই ওয়ার্ডেই নয়, পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যাচ্ছে, বহু এলাকার নিকাশি নালা আবর্জনায় বুজে গিয়েছে। কোথাও আবার কার্যত নিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছুই নেই। বছরভর সেই সব নিচু এলাকায় জমে থাকছে জল। এ নিয়ে টানা দু’বার পুরসভার ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে নামতে কোমরের বাঁধছেন বিরোধীরা।

বছর দু’য়েক আগে শহরে যত জন ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস মিলেছিল, তাঁদের অধিকাংশের ঠিকানা ২১ ও ১ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে রাস্তার উপর দিয়ে বছরের অধিকাংশ সময়ে লোকজনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা জল গড়ায়। বাসিন্দাদের দাবি, নিকাশি সমস্যা পাঁচ বছর আগে যে তিমিরে ছিল, এখনও তাই। পোলট্রি ফার্ম এলাকা দু’-তিনটি পাড়ার সংযোগস্থল। এলাকাটি নিচু হওয়ায়, আশপাশের নোংরা জল রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে যায়। কর্পূরবাগানের বাসিন্দাদের দাবি, ডেঙ্গির বিরুদ্ধে যতটা উদ্যোগ নিয়ে প্রচার হয়েছিল, নিকাশি ব্যবস্থা গড়ার ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্তী বাউরি, পেড়কি বাউরিদের কথায়, ‘‘বছরভর রাস্তায় নোংরা জল বয়ে যায়। তা পেরিয়ে যাতায়াত কার ভাল লাগে?’’

২১ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর আরতি পান্ডের দাবি, ‘‘এলাকায় নতুন বসতি গড়ে উঠছে। অল্প সময়ে জল, পথবাতি, রাস্তা হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় নিকাশি সমস্যারও সমাধান হয়েছে। তবে এখনও কিছু কাজ বাকি। সে সব সমস্যার কথা পুরসভাকে জানিয়েছি।’’

কাছেই দেশবন্ধু রোড শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানেও ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। এখানে বেশ কয়েকটি শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স, রেস্তরাঁ গড়ে উঠেছে। এখানেও ঘুরেফিরে বাসিন্দাদের মুখে সেই নিকাশি সমস্যার কথা শোনা যায়। আনন্দসরণি, বালভারতী স্কুল লেন-সহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নর্দমা নেই। বাড়ি থেকে জল বেরিয়ে একটি নিচু এলাকায় জমছে। ওই এলাকার বাসিন্দা তিনকড়ি সরকারের কথায়, ‘‘আগে আমার বাড়িতেও ডেঙ্গি হয়েছিল। তাই বাড়ির পাশে জল জমে থাকায় সব সময়ে আতঙ্কে রয়েছি।’’

১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর মিতা চৌধুরী অবশ্য নিকাশির সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই এলাকায় দীর্ঘদিন বসতি থাকলেও এত দিন নিকাশি সমস্যার সমাধানের কথা সে ভাবে ভাবা হয়নি। গত তিন বছর ধরে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে দরবার করে এলাকায় হাইড্রেন তৈরি করানোর জন্য ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করিয়েছি। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু কাজ চলছে ঢিমেতালে।’’ তবে কিছু জায়গা নিয়ে মামলা চলায় সেখানে কাজ করায় সমস্যা রয়েছে বলে তিনি জানান।

নিকাশির সমস্যা রয়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বস্তি এলাকাতেও। এই বস্তির পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে শহরের প্রধান নিকাশি নালা। সেখানকার বাসিন্দা ইতু ঘটকের অভিযোগ, নালা পরিষ্কারের বালাই নেই। আবর্জনা ও মাটি জমে রয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে নোংরা জল ঘরে ঢুকে যায়। একই সমস্যা লাগোয়া ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রামপদ কলোনিতেও। কলোনির বাসিন্দা ভোলানাথ ঘোষ, নবারুণ মিত্রের দাবি, ‘‘বৃষ্টি হলেই নর্দমা ছাপিয়ে জল ঘরের মধ্যে ঢুকে যায়। জলমগ্ন কলোনিকে বাঁচাতে দমকল ডাকতে হয়।’’

পুরুলিয়ার বিধায়ক তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুরুলিয়া শহর যে ভাবে বেড়েছে, সেই নিরিখে নিকাশি ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি। একাধিক বার আমি বৈঠকে প্রসঙ্গটি তুলেছি।’’ বিজেপির পুরুলিয়া শহর (দক্ষিণ) মণ্ডল সভাপতি সত্যজিৎ অধিকারীর দাবি, ‘‘এত দিন ক্ষমতায় থেকেও পুরুলিয়া শহরের নিকাশির উন্নয়নে তৃণমূল কিছুই করেনি।’’ পুরপ্রধান তৃণমূলের সামিমদাদ খানের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘পুরনো নকশা থাকলেও বর্তমানে শহর যে ভাবে বেড়েছে সেই অনুসারে প্রতি ওয়ার্ডের নিকাশি-নকশা আমাদের নেই। জলের পরে নিকাশি সমস্যার সমাধানেও উদ্যোগী হয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Town Drainage System TMC West Bengal Municipal Election 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy