সারি-সারি। নিজস্ব চিত্র
শহিদ সমাবেশে জেলা থেকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লোক গিয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহের। যদিও তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, অন্যান্য বছর যত জন যান, তার চেয়ে কম লোকই ধর্মতলায় গিয়েছেন এ বার। এমনকি দলের কিছু স্থানীয় নেতাকে রবিবার তাঁদের এলাকাতেই দেখা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ব্লক সভাপতিও! সমাবেশে না যাওয়ার কারণ অসুস্থতা বলে দাবি করেছেন তাঁদের অনেকেই। শুধু তাই নয়, অন্যান্য বছর বাস তুলে নেওয়ায় যে দুর্ভোগ হয়, সেই ছবিটাও এ বার অনেকটাই আলাদা। কারণ, একে রবিবার, তার উপরে সমাবেশে বাসও গিয়েছে অন্য বারের চেয়ে ঢের কম। যা নিয়ে তৃণমূলকে বিজেপি-র খোঁচা, লোক হয়নি বলেই বাস নেওয়া হয়নি।
দলের কান্ডারী, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অসুস্থতার জন্য শহিদ সমাবেশে কত জন কর্মী-সমর্থককে নিয়ে যাওয়া সম্ভ হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তৃণমূলের বাকি নেতারা। এর জন্য সমাবেশের দু’দিন আগে পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার এবং ছোট ছোট সভা করার উপরে তাঁরা জোর দিয়েছিলেন। এ সব করেও ২৫-৩০ হাজার লোক গিয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। সহ-সভাপতির যদিও দাবি, এ বার বীরভূম এবং লাগোয়া পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট (এই তিন বিধানসভার দায়িত্বেও অনুব্রত) লক্ষাধিক কর্মী গিয়েছেন।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত এবং রবিবার সকালে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার, ময়ূরাক্ষী এক্সপ্রেস, ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, বর্ধমান লোকালে কর্মীরা কলকাতা পৌঁছেছেন। এ ছাড়াও ছিল বেশ কয়েকটি বাস এবং গাড়ি। এমনিতে ফি বছর ২১ জুলাই বাসযাত্রীদের ভোগান্তি ধরাবাঁধা থাকে। সমাবেশের দু’দিন আগে থেকেই বাস তুলে নেওয়া হয়। এ বার সাধারণ যাত্রীদের সেভাবে সমস্যায় পড়তে হয়নি। রবিবার স্বাভাবিক বাস চলাচল করেছে বলে জানিয়েছেন বীরভূম জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। বোলপুর স্ট্যান্ড থেকে কিছু রুটের বাস নেওয়া হয়েছিল। তবে, তাতে পথে নেমে দুর্ভোগ হয়নি। রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকেও কয়েকটি লাক্সারি বাস (বহরমপুরের রুটের) ছাড়া রুটের বাস একটিও তোলা হয়নি বলে দাবি করেছেন জেলা বাস মালিক সমিতির রামপুরহাট শাখার সম্পাদক জামারুল ইসলাম। পথে বাস চলাচলও স্বাভাবিক ছিল।
সদর শহর সিউড়ির বাস পরিষেবাও ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এ দিন সকাল থেকে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে সব রুটের বাসই চলাচল করেছে। ফলে যাত্রী পরিষেবায় কোন সমস্যা হয়নি। তৃণমূল সমর্থিত সিউড়ি বাসকর্মী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শেখ বাবুলাল বলেন, ‘‘কোনও বাস এ দিন নেওয়া হয়নি। শুধু টুরিস্ট বাস নেওয়া হয়েছিল। ফলে বাস পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।’’ তাঁর দাবি, অন্যান্য বার প্রায় ২০টি বাস নেওয়া হয়। তবে সেই সময় টুরিস্ট বাস পাওয়া যেত না। কিন্তু এ বছর পাওয়া গিয়েছে। সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয়, সে জন্যই শুধুমাত্র টুরিস্ট বাস নিয়েছি।’’
বিজেপির সিউড়ি শহর সভাপতি উত্তম বন্দোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘লোকই তো যায়নি! তাহলে বাস নিয়ে কি হবে? আর টুরিস্ট বাসের কথাটা শুধুমাত্র বাহানা।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলও দাবি করেছেন, ‘‘লোক নিয়ে যাওয়ার জন্য রুটের বাস তুলে নেওয়া থেকে যত রকম কৌশল ব্যবহার করতে হয়, সেটা করেও তৃণমূলের শহিদ সমাবেশে এ বার আশা মতো লোক হয়নি। কারণ মানুষ আর তৃণমূলের সঙ্গে নেই। সেই কারণে বীরভূম থেকেও এ বার লোক কম গিয়েছে।’’
একান্ত আলোচনায় তৃণমূল নেতারা মানছেন, অন্য বছরগুলিতে কর্মী-সমর্থক বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষও যান। এ বার সেই সংখ্যাটা নামমাত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক তৃণমূল নেতার দাবি, তিনটি কারণে লোক কম গিয়েছে। প্রতমত, কাটমানি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ। দ্বিতীয়ত, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র উত্থান। তৃতীয়ত, চড়া রোদ ও গরম। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যান্য বার ২১ জুলাই মানেই বৃষ্টি। এ বার তো এমন গরম, মে মাসকেও হার মানাচ্ছে। ফলে, লোক এমনিতেই কম হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy