সোনামুখীর রাধামোহনপুরের পাণ্ডে পাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
ক্রমশ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জল নামছে। এ বছর জুলাইয়ে পুরুলিয়ায় রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলায় জুলাই মাসে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিল। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে এ মাসে এখনও পর্যন্ত ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।’’ কিন্তু পুরুলিয়ার মাটির ধাঁচ এমন, যে বেশি ক্ষণ জল ধরে রাখতে পারে না। বুধবার অনেক এলাকায় জল নেমে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।
পুরুলিয়াতে গত শুক্রবার থেকে নাগাড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল । বুধবার সকালে বিক্ষিপ্ত ভাবে জেলার কয়েকটি থানা এলাকায় বৃষ্টি হলেও তাতে তেমন জোর ছিল না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করে। সূর্য দেখা না গেলেও আকাশের ঘোলাটে ভাব অনেকটাই কেটে গিয়েছিল।
পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘বুধবার কয়েকটি এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছি। এ দিন অনেকেই রাস্তায় নেমেছেন। যে সমস্ত কজওয়ে জলের তলায় ছিল, সেই এলাকাগুলি থেকেও দ্রুত জল নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে।’’
এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জেলায় ১৪৭টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের চাল ত্রিপল ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। রঘুনাথপুর থানা এলাকার বড়বাগান গ্রামের চারটি পরিবারের বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ায় তারা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। মানবাজার-পুঞ্চা সড়কে একটি কালভার্ট মেরামতির কাজ চলছিল। বৃষ্টির জমা জলে বিকল্প রাস্তা জলের তলায় চলে যেতে মানবাজার-পুঞ্চা সড়ক যোগাযোগ সোমবার দুপুর থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে । বুধবার গিয়ে দেখা গেল ভেঙে যাওয়া বিকল্প রাস্তার মেরামতি চলছে। মানবাজার মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘এলাকার কয়েকটি কজওয়ে জলের তলায় চলে গিয়েছিল। বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি। ফলে জমা জল ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।’’
মঙ্গল ও বুধবার কেন্দা ও পুঞ্চা থানা থেকে দুর্গতদের জন্য ত্রিপল বিলি হয়েছে। মহকুমাশাসক জানান, ব্লক অফিসের ভিড় কমাতে এবং এলাকার মানুষের সুবিধার কথা ভেবে কয়েকটি থানা থেকে আবেদনের ভিত্তিতে কিছু ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। বরাবাজার-মানবাজার রাস্তায় বরাবাজারের নেংসাই নদীর বাল্লার ঘাটে জল নামতে শুরু করলেও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে বুধবারও যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। মানবাজার–কেন্দা থানার সীমানায় মঙ্গলবার চাকা নদীর সেতুর উপরে জল থাকায় পারাপার বন্ধ ছিল। জল নেমে গেলেও এ দিন ওই রাস্তায় ভারী গাড়ি পারাপার হয়নি।
বোরো থেকে জয়পুর হয়ে কুইলাপাল যাওয়ার রাস্তায় জয়পুরের কজওয়েতে জল নেমেছে। তবে এ দিনও জল তীব্র গতিতে নামায় পারাপার করা যায়নি। কুইলাপাল থেকে বান্দোয়ান যাওয়ার রাস্তায় কজওয়েতে মঙ্গলবার তীব্র গতিতে জল বইছিল। বুধবার যাতায়াত স্বাভাবিক হয়েছে। কাশীপুর-বাঁকুড়া রাস্তায় মাজরামুড়া গ্রামের কাছের কজওয়ে থেকে জল কমতেই বুধবার দুপুরের পরে ওই রাস্তায় বাস ও ছোট যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে, ব্লক সদর কাশীপুর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া চারটি পঞ্চায়েতের সঙ্গে আবার যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন জায়গায় কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা বাড়ছে।
বুধবার দুপুরে জেলার কৃষি উপঅধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত চব্বিশ ঘন্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। খবর নিয়ে জেনেছি জেলার প্রায় ২০০ হেক্টর বীজতলার জমি জলের তলায় রয়েছে। ধান তো দাঁড়িয়ে থাকা ফসল, তার উপরে কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে কয়েকটি এলাকায় আনাজ চাষের জমি জলের তলায় রয়েছে। জল সরে গেলে সেগুলিতে ছত্রাকের আক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy