অপেক্ষা: টিকার লাইন বান্দোয়ান ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র।
করোনার টিকার জন্য হাপিত্যেশ বেড়ে চলছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায়। কোথাও ভোর থেকে লাইন পড়ছে। কোথাও বহু দূর উজিয়ে এসে টিকা না পেয়েই ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। আবার অশীতিপর বৃদ্ধ ভোর ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর ১২টায় টিকা নিয়ে বেরোচ্ছেন— দেখা গিয়েছে এমন ছবিও।
পুরুলিয়ার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১০ লক্ষ। ৪৫ বছরের উপরে টিকাকরণ করার কথা প্রায় আট লক্ষ ৪৫ হাজার জনের। রবিবার পর্যন্ত দু’টি ডোজ়ই পেয়েছেন প্রায় এক লক্ষ ১২ হাজার মানুষ। শুধু প্রথম ডোজ় পেয়েছেন দু’লক্ষ ৪৭ হাজার মানুষ।
টিকার অভাবে ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে জেলার নানা জায়গায়। জোগানের অভাবে এ দিন মানবাজার ১ ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ বন্ধ ছিল। সে কথা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেওয়ালে পোস্টার দিয়ে জনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের কাছে টিকার যেমন জোগান আসছে, তেমনই দেওয়া হচ্ছে।”
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কমে এলেও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে টিকা নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। বাড়ছে হুড়োহুড়ি। সোমবার রঘুনাথপুর শহরে রঘুনাথপুর পঞ্চায়েত সমিতির কমিউনিটি হলে দেখা গেল, দূরত্ব-বিধি শিকেয় উঠেছে। প্রায় ছ’কিলোমিটার উজিয়ে এসেছিলেন শুড়িসগড়া গ্রামের বছর আশির শ্রীপতি মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘ভোর ৫টায় লাইন দিয়ে বেলা ১২টায় নাগাদ টিকা পেলাম।’’
পুরুলিয়া শহরে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভা পরিচালিত ধবঘাটা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভোর থেকেই লাইন পড়েছিল। টিকা পেয়েছেন ষাট জন। মানবাজার ১ ব্লকের ধানাড়া পঞ্চায়েতে টিকা না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বারো বছর পর্যন্ত বয়সের ছেলেমেয়ে রয়েছে, এমন মায়েদের টিকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। প্রায় পাঁচশো মহিলা উপস্থিত হন। দেড়শো জনের পরে, টিকাকরণ বন্ধ হতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের লোকজন গিয়ে বুঝিয়ে থামান। ধগাড়া গ্রামের রেণুকা সিংহ বলেন, ‘‘ঘরে বাচ্চাদের রেখে গাড়ি ভাড়া এসেছিলাম। শুধু হ্যাপাই হল।’’
বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার আধিকারিকদের সূত্রে খবর, রবিবার পর্যন্ত প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ২,৫৪,৬৭১ জন। তাঁদের মধ্যে ১,৩৯,৫২১ জন দ্বিতীয় ডোজ়ও পেয়ে গিয়েছেন। ১৮ থেকে ৪৪ বছরের ৭৫,৩৪৭ জন টিকা পেয়েছেন এ পর্যন্ত। সোমবার বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেন বলেন, ‘‘প্রশাসনের পাঠানো অগ্রাধিকারের তালিকা অনুযায়ী টিকাকরণ চলছে। যেমন টিকার জোগান আসছে, সে রকমই দেওয়া হচ্ছে।’’ এ দিন সকাল থেকে টিকার জন্য লম্বা লাইন ছিল খাতড়া, সিমলাপাল, রানিবাঁধ, ইঁদপুর ব্লকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। খাতড়ার মহদেব সর্দার জানান, সকাল ৮টা থেকে লাইন দিয়ে দুপুর ২টোয়
টিকা পেয়েছেন।
বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার জানান, জোগান অনুযায়ী টিকাকরণ চলছে। স্বাস্থ্য-কর্তাদের থেকে জানা যাচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মী, ‘ফন্টলাইন ওয়ার্কার’ এবং ৪৫ বছরের উপরে সাধারণ মানুষ মিলিয়ে মোট ৩,৩৯,৭৮৩ জনের টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। রবিবার পর্যন্ত প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ১,১৫,৬৮৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন ৫৪,২৩৯ জন। ১৮ থেকে ৪৪ বছরের ৩৯,৪০৬ জনের টিকাকরণ হয়েছে। সোমবার প্রায় চার হাজার জন টিকা পেয়েছেন।
বিষ্ণুপুর হাসপাতালের পিপি ইউনিটে রাত থেকেই মানুষ লাইন দিচ্ছেন। প্রগতিপল্লির পলি খাঁ বলেন, ‘‘বেশ কয়েকদিন লাইনে দাঁড়িয়েও প্রতিষেধক পাইনি। তাই আর যাইনি।’’
বিষ্ণুপুর পুরসভা চত্বরের টিকাকরণকেন্দ্রে মাসখানেক আগে নাম জমা দিয়েও ডাক পাননি বলে দাবি চকবাজারের এক ব্যবসায়ীর। শহরের বাসিন্দা ভোলানাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ডোজ় নিতে এসে দু’দিন ফিরতে হল।’’ বিষ্ণুপুর পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম গোস্বামী বলেন, ‘‘সোমবার একশোটি ডোজ় এসেছিল। বারো বছর পর্যন্ত ছেলেমেয়ের মায়েদের
দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy