মাস্ক ছাড়া হিড়বাঁধ ব্লক সদরে। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়
করোনার সংক্রমণ এ বার যে কতটা ভয়াবহ, তা দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতেই স্পষ্ট। তবুও হুঁশ ফিরছে না কিছু মানুষের। পুলিশের ধারাবাহিক ধরপাকড়ের পরেও, বৃহস্পতিবার নানা জায়গায় অসচেতনতার সে ছবি দেখা গেল।
এ দিনও বিভিন্ন জায়গায় নজরে এসেছে, বাড়ির বাইরে বিভিন্ন দোকানের বাইরে আড্ডা মারছেন অনেকে। কেউ মাস্ক পরলেও, গল্প করার জন্য তা থুতনিতে কিংবা গলার নীচে ঝুলিয়ে রেখেছেন। ভাবখানা এমন, পুলিশের সামনে পড়ে গেলে তা নাকের উপরে তুলে দেবেন। তাতে পুলিশের হাত থেকে রেহাই মিললেও, খালি চোখে অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের ছোঁয়া থেকে নিজেকে কী ভাবে বাঁচাবেন? প্রশ্ন তুলছে সচেতন-সমাজ।
মাস্ক পরছেন বেশিরভাগ মানুষ। পুলিশের কড়া নজরদারিও রয়েছে। তার মাঝেই কেউ কেউ মাস্ক খুলে পরিচিতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এ দিন এমন ছবি দেখা গিয়েছে বাঁকুড়া শহরে।
বাঁকুড়ার মাচানতলার একটি চায়ের দোকানে এ দিন মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে মুখোমুখি গল্প করছিলেন কয়েকজন। প্রশ্ন করতেই উত্তর এল, ‘‘যাঁদের সঙ্গে কথা বলছি, তাঁরা আমার পরিচিত। ওঁদের করোনা নেই। আর মাস্ক পরে কি চা খাওয়া যায়?’’ এমন চিত্র দেখা গিয়েছে, সতীঘাটের চায়ের দোকানগুলিতেও।
যদিও বাঁকুড়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেনের পরামর্শ, ‘‘পরিচিতদের সঙ্গেও কথা বলার সময় মাস্ক পরতে হবে। দূরত্ব-বিধি বজায় রাখতে হবে। তবে মাস্ক পরার প্রবণতা কিছুটা হলেও বেড়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না সবাই লাগাতার মাস্ক পরছেন ও বাইরে বিনা কারণে বেরনো বন্ধ করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত করোনাকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।’’
পুরুলিয়ার মানবাজারে কিসানমান্ডিতেও এ দিন এমন ‘ইচ্ছাকৃত অন্যমনস্কতা’র ছবি দেখা গিয়েছে। পুলিশকর্মীরা তাঁদের সতর্ক করে জানিয়েছেন, অন্য দিন এ ধরনের অগোছাল ভাব দেখলে গ্রেফতার করা হবে। মানবাজারের বিভিন্ন পাড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বুধবার রাত পর্যন্ত মাস্ক-বিহীন আট যুবককে ধরেছে।
বরাবাজার থানার শাঁখারি ও রাগমা গ্রামে পুলিশ এ দিন অভিযানে গিয়ে দেখে, গ্রামের মোড়ে চায়ের দোকানে কয়েকজন যুবক জটলা করছেন। পুলিশের গাড়ি দেখে চম্পট দেওয়ার আগেই দুই গ্রাম থেকে মাস্কহীন ছয় যুবককে গ্রেফতার করা হয়। ব্যক্তিগত বন্ডে তাঁদের জামিনে ছেড়ে দেওয়া হলেও ফের ধরা পড়লে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুঞ্চায় অন্য দিনের মতো এ দিনও পুলিশ মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে। বেশ কয়েকজনকে মাস্ক বিলি করা হয়েছে।
সকালে ঝালদার মসিনামোড়, কলেজমোড় ও হোসেনডি এলাকায় মাস্ক-বিহীন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলে। জয়পুর বাজার, লক্ষ্মীমেলা হাসপাতাল মোড় এলাকাতেও অভিযান চলে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, করোনার বাড়বাড়ন্তের পরেও, অনেকেই মাস্ক না পরে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না। তাঁদের সতর্ক করতে গেলে, উল্টে পাঁচ কথা শুনিয়ে দেন।
পুলিশ পুরুলিয়ার জয়পুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ দিন মাস্কবিহীন ৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে। কোটশিলা থানা এলাকায় চার জন, বাঘমুণ্ডি থানা এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রঘুনাথপুর থানার সামনেই মাস্কহীন অবস্থায় কয়েকজন ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাঁদের মধ্যে চার জনকে আটক করে পুলিশ।
পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলায় এই মুহূর্তে পাঁচ হাজারের বেশি জন করোনা পজ়িটিভ চিহ্নিত হয়েছেন। মাস্ক পরা অভ্যাসে পরিণত করতে লাগাতার অভিযান চালানো হবে।’’
বাঁকুড়া জেলা পুলিশও দাবি করেছে, বিনা মাস্কে দেখলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মহকুমাশাসকের (বিষ্ণুপুর) দফতরের সামনের রাস্তার ধারে খাবারের দোকানে ক্রেতা -বিক্রেতা কারও মুখেই এ দিন মাক্স দেখা যায়নি। তবে পুলিশের যাওয়ার আগেই থুতনির মাস্ক উঠে যাচ্ছে মুখে। পাশের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীদের মধ্যেও অনেকের মুখের মাস্ক থুতনিতে দেখা গিয়েছে।
বিষ্ণুপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় গৃহনির্মাণ শ্রমিকদেও মাস্ক ছাড়াই কাজ করতে ও নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। বালি বোঝাই ভ্যান চালকদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। পুলিশ জানিয়েছে, এ বিষয়ে নজর দেওয়া হবে।
মাস্ক পরার প্রবণতা কিছুটা হলেও বেড়েছে পাত্রসায়র, ইন্দাসে। তবে পুলিশের অভিযান এ দিনও অব্যাহত ছিল। দক্ষিণ বাঁকুড়ার খাতড়া, রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা, সিমলাপাল থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ হানা দেয়।
খাতড়া থানার পুলিশ এ দিন সকালে পাঁপড়া ব্রিজমোড়-সহ অন্য জায়গায় মাইক নিয়ে প্রচার চালায়। এসডিপিও (খাতড়া) কাশীনাথ মিস্ত্রি বলেন, ‘‘মহকুমার সব থানাতেই মাস্ক পরাতে সচেতনতা ও ধরপাকড় চলছে। বুধবার রাত পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯৮ জনকে ধরা হয়েছে। তাঁরা পরে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।’’
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শহর ও মফস্সল এলাকায় মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়লেও, গ্রামের দিকে অধিকাংশ বাসিন্দা খোলা মুখে ঘুরছেন। এ দিন সকালে হিড়বাঁধ মোড়ে বাজারে আসা অনেক ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক ছিল না।
হিড়বাঁধের বাসিন্দা প্রদীপ্ত মহান্তি জানান, এলাকায় সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেকেই মাস্ক পরছেন না। তাঁর দাবি, এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy