Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা

রাতভর বধূর দেহ আটকে বিক্ষোভ

রবিবার সকালে শ্বশুরবাড়িতেই একটি ঘরে গলায় দড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় প্রতিমার দেহ উদ্ধার হয়।

বাড়ির বাইরে পড়ে বধূর দেহ। বাইরে বিক্ষোভকারীরা। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির বাইরে পড়ে বধূর দেহ। বাইরে বিক্ষোভকারীরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিবাঁধ শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০১:০৫
Share: Save:

এক বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে তেতে উঠল রানিবাঁধের মল্লিকডাঙা গ্রাম। তদন্তের দাবিতে ময়না-তদন্ত করা দেহ ২৪ ঘণ্টা আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন বাসিন্দারা। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্বশুরবাড়ির দরজার সামনেই পড়ে থাকল প্রতিমা মাহাতোর (৩০) দেহ। বধূর বাপের বাড়ির লোকজনের দাবি, রবিবারই তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। তাঁদের সঙ্গে এলাকার কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা উপযুক্ত তদন্তের দাবিতে দেহ আটকে রাতভর বিক্ষোভ দেখান।

বাঁকুড়ার জেলা পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও দাবি করেন, ‘‘অভিযোগ পুলিশ নেয়নি, তা ঠিক নয়। ওদের বাড়ি থেকে কেউ অভিযোগ জানাতে আসছিলেন না। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁদের বোঝানোর পরে সোমবার দুপুরে তাঁরা অভিযোগ দায়ের করেন।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, বধূটিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বধূর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও অনেকের দাবি, ২৪ ঘণ্টা একটি দেহ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখালেও পুলিশের তা উদ্ধারে আরও তৎপর হওয়া দরকার ছিল।

স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতিমাদেবীর সঙ্গে বছর দশেক আগে পেশায় কৃষিজীবী বাসুদেব মাহাতোর বিয়ে হয়। তাঁরা নিঃসন্তান ছিলেন। বছরখানেক হল বাসুদেব ফের বিয়ে করেন। রবিবার সকালে শ্বশুরবাড়িতেই একটি ঘরে গলায় দড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় প্রতিমার দেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন রানিবাঁধের বীরখাম থেকে তাঁর দাদারা। তাঁদের এক সদস্যের মৃত্যুর খবরে জড়ো হয়ে যান আশপাশের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্য সদস্যেরাও।

বাসিন্দাদের দাবি, সে দিন দুপুর ১২টা নাগাদ রানিবাঁধ থানার পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠিয়ে দেয়। সন্ধ্যার মুখে দেহ গ্রামে চলে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দাদের একাংশ। বধূকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তাঁরা দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দাবি করেন, পুলিশকে অভিযোগ গ্রহণ করে উপযুক্ত তদন্ত করতে হবে। পুলিশ থাকলেও বিক্ষোভ চলে রাতভর। সোমবার সকালেও দেহ ছাড়তে চাননি তাঁরা।

এ দিন বেলায় ঘটনাস্থলে গেলে বধূর স্বামী দাবি করেন, ‘‘শনিবার রাত দশটা পর্যন্ত প্রতিমার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সকালে দেখি ঘুম থেকে উঠছে না। ভেবেছিলাম, আগের দিন মাঠে চাষের কাজ করেছে বলে হয়তো ক্লান্ত হয়ে বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছে। ডাকতে গিয়ে দেখি, ঘরের ভিতরে গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা খুন করিনি।’’ তিনি জানান, বধূর বাপেরবাড়ি ও পড়শিদের তিনিই খবর দেন।

মল্লিকডাঙা শ্রীদুর্গা এসএইচজি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেত্রী শিবানী মাহাতো, মল্লিকডাঙা মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর শেফালি মাহাতো, বিরতি এসএইচজি (১) গ্রুপের লতিকা সর্দার, মল্লিকডাঙা ইন্দিরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মিঠু প্রামাণিকেরা দাবি করেন, ‘‘প্রতিমা খুব ভাল মেয়ে ছিল। বছর চার-পাঁচ আগে বাসুদেব আবার বিয়ে করার পর থেকে তাঁকে সহ্য করতে পারছিলেন না। খুন করে গলায় দড়ি বলে সাজাতে চাইছে। দোষীদের শাস্তি দিতে পুলিশ যাতে উপযুক্ত তদন্ত করে সে জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।’’

মৃতার দাদা রবি মাহাতো ও অনাদি মাহাতোরা অভিযোগ করেন, ‘‘রবিবার বোনকে খুন করা হয়েছে বলে রানিবাঁধ থানায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তারা গ্রহণ করেনি।’’ যদিও রানিবাঁধ থানার আইসি উত্তম দেবনাথ তা মানতে না চেয়ে দাবি করেন, ‘‘ওই সময়ে আমি থানায় ছিলাম না।’’ এতক্ষণ কেন দেহ পড়ে থাকল? এসডিপিও (খাতড়া) বিবেক বর্মা দাবি করেন, ‘‘পুলিশের কোনও গাফিলতি নেই। এ দিন দুপুরেই মৃতের বাপের বাড়ির তরফে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়। তারপরেই মৃতার স্বামী বাসুদেব মাহাতো, শ্বশুর জানকী ও শাশুড়ি সাবিত্রীকে গ্রেফতার করা হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Police Death Housewife
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy