প্রতীকী ছবি।
করোনা ঠেকাতে লকডাউনের জেরে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সর্বস্তরের শিক্ষাব্যবস্থা। তিন মাস ধরে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কখন স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি জানা নেই। আপার প্রাইমারি, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, সকলেই বিপাকে। তবে শিক্ষকদের একটা বড় অংশের মতে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়ারাই।
শিক্ষকরাই জানাচ্ছেন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠদানের বিকল্প পথ নেওয়া হয়েছে। তবে গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকার অসংখ্য পড়ুয়ার কাছেই ইন্টারনেট পৌঁছয়নি। অনেকের বাড়িতে নেই স্মার্টফোন। আপার প্রাইমারি স্তর থেকে যদিও বা সেই সুযোগ কিছু শতাংশ পড়ুয়ার কাছে পৌঁছচ্ছে, সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে কেবল ইংরেজি মাধ্যম ও দু-একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ছাড়া সেই সুযোগ নেই।
এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার পরে চার, পাঁচ বা ছ’মাস বাদে স্কুল খুললে অধিকাংশ পড়ুয়াকে স্কুলমুখী করাটাই চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা। প্রশাসন সূত্রে খবর, বীরভূম জেলায় ২৪০২টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৩ হাজারের কাছাকাছি। এর সঙ্গে কয়েকশো শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ধরলে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা তিন লক্ষ তিরিশ হাজারেরও বেশি। শহর ও গঞ্জ এলাকায় কিছু স্কুল বাদ দিলে গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকায় ওই পড়ুয়াদের একটা বড় অংশই নতুন প্রজন্মের পড়ুয়া। কারণ বীরভূম জেলা স্কুল বা হাতে গোনা কিছু প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক ও এলাকার সচেতন অভিভাবক ও প্রশাসনের মিলিত উদ্যোগে জন্য প্রথমিকের পড়ুয়াদের পাঠদানের বিকল্প ভাবনা নেওয়া হয়েছে। কোথাও ই-লার্নিং কোথাও বা মাইক বাজিয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু সেটা ব্যতিক্রমই।
শিক্ষকদের একাংশের মত, ওই খুদে পড়ুয়ারা যে টুকু পড়াশোনা করে সেটা স্কুলে এসেই করতে হয়। কারণ অধিকাংশ পড়ুয়ার বাড়িতে হয় পড়াশোনার চল নেই বা পরিবেশ নেই। করোনা পরিস্থিতির জেরে মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ থাকায় ওই শিশু পড়ুয়াদের স্কুলে আসা বা পঠনপাঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভ্যাসেই ছেদ পড়ে গিয়েছে। স্কুল খুললে সেই শিশুকে স্কুলে আনাও সমস্যার হবে। দ্বিতীয় যে সমস্যার কথা ভাবছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা, তা হল, স্কুলে এলেও এতদিন অনভ্যাসের পর নতুন ক্লাসের পড়া শিশুটি আদৌ বুঝবে কি না। হয়তো পড়ানো শুরু করতে হবে প্রথম থেকেই। সমস্যা হবে আদিবাসী প্রধান এলাকায় থাকা প্রথামিক স্কুলেও।
এত ঝক্কি পোহাতে না পেরে হতাশ হয়ে অনেক পডুয়া স্কুলছুট হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষকরা।
সেই আশঙ্কা একেবারে অমূলক বলে উড়িয়ে দিতে পারছেন না জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রলয় নায়েক। তিনি বলছেন, “ পড়ুয়ারা সত্যিই সঙ্কটে পড়েছে।” সঙ্গে অবশ্য তিনি এটাও দাবি করছেন, সব স্কুল না হলেও কিছু স্কুলের শিক্ষকদের ঐকান্তিক ইচ্ছেয় খুদে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন চালু রাখার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা সংগঠনগতভাবে গ্রামে গ্রামে শিক্ষকদের পাঠিয়ে পারস্পরিক দূরত্ববিধি ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে পাঠদানের বিকল্প ভাবনা নিয়েছি। আমরা চাইছি শিক্ষকেরা যেন পড়ুয়াদের বাড়িতে গিয়ে বা পাড়ায় গিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের পঠনপাঠনে সহায়তা করেন।” কোনও নির্দেশ নয়, শুক্রবারই বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে ডিপিএসিসির তরফে আবেদন জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এ জন্য স্টাডি মেটিরিয়াল বাবদ যা খরচ হবে সেটা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ বহন করবে। প্রলয়বাবু বলেন, “আশা করি আবেদন সাড়া দেবেন শিক্ষকেরা।”
তবে বীরভূমের যে হারে করোনা-সংক্রমণ বাড়ছে এই মুহূর্তে স্কুল খোলা বা বাচ্চাদের কাছাকাছি যাওয়া কতটা যুক্তি সঙ্গত হবে সেটা নিয়েও ধন্দে শিক্ষক শিক্ষিকারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy