স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ অভিভাবকদের। নিজস্ব চিত্র।
ইংরেজি পড়াতে পারেন না শিক্ষক। পড়ুয়াদের সামনে পড়ে শোনাতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেতে হয় তাঁকে। শুধু তাই নয়, তিনি বাংলা বানানও সঠিক জানেন না। কোনও শব্দে যুক্তাক্ষর থাকলেই বেকায়দায় পড়েন। বাঁকুড়ায় এক প্রাথমিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিলেন অভিভাবকেরা। জেলার ওন্দা ব্লকের চড়ুইকুড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। পরে অবশ্য ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তালা খুলে দিলে ফের চালু হয় স্কুল।
গত বছরের জুলাইয়ে চড়ুইকুড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহশিক্ষক পদে যোগ দেন বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের বাসিন্দা ওই শিক্ষক। অভিভাবকদের দাবি, তিনি কাজে যোগ দেওয়ার পর শুরুর দিকে তেমন কিছু মনে হয়নি। পরে দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা পরীক্ষার খাতায় সঠিক উত্তর লিখলেও কেটে দিচ্ছেন ওই শিক্ষক। অভিযোগ, কিছু দিন পর থেকেই পড়ুয়ারা ওই শিক্ষকের নামে নালিশ করা শুরু করে। ছেলেমেয়েরাই বাবা-মায়েদের জানায়, ইংরেজি হোক বা বাংলা, দুটো ভাষার একটাও পড়াতে পারেন না ওই শিক্ষক।
সম্প্রতি উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করানোর দাবিতে অকৃতকার্য অনেক পড়ুয়া আন্দোলনে নামেন। সেই সময় এক ছাত্রী ইংরেজিতে একটি বানান ভুল বলায় নেটমাধ্যমে তুমুল কটাক্ষের শিকার হন। স্বপন পাল নামে ওন্দার এই স্কুলের অভিভাবক সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের আর দোষ কোথায়! শিক্ষক যদি এমন হন, পড়ুয়ারা আর শিখবে কোথা থেকে!’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অভিভাবকদের একটি সভায় ওই শিক্ষক বাংলায় লেখা রুলস অ্যান্ড রেগুলেশানই ঠিক করে পড়তে পারেননি। ‘মুসুর ডাল’, ‘বিদ্যালয়’-এর মতো শব্দের বানানও লিখতে পারছিলেন না। ওই শিক্ষক অযোগ্য বুঝতে পেরে তাঁর অপসারণের দাবিতে স্থানীয় স্কুল পরিদর্শক ও জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের দফতরে আবেদন জানাই। কিন্তু তার পরেও কোনও কাজ না হওয়ায় সোমবার আমরা স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছি।” আর এক অভিভাবক সুবল পাল বলেন, “ওই শিক্ষকের হাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা চাই, ওই শিক্ষককে অন্য স্কুলে পাঠানো হোক।’’
অভিভাবকদের অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপকুমার নন্দী। তিনি বলেন, “ওই শিক্ষক ইংরেজির ক্লাস নিতে চান না, কারণ তিনি ইংরেজির একটি অক্ষরও পড়তে পারেন না। আমি ওই শিক্ষককে বার বার বলেছি, ইংরেজি ও বাংলা ভাল করে শিখতে । কিন্তু তিনি শেখার কোনও চেষ্টাও করেননি। আজ অভিভাবকেরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” যদিও অভিযুক্ত শিক্ষক অভিভাবকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামবাসীরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”
ওন্দা ব্লকের জয়েন্ট বিডিও বাবলু ভৌমিক বলেন, “অভিভাবকদের বোঝানোর পর তাঁরা স্কুলের তালা খুলে দিয়েছেন। অভিভাবকদের অভিযোগ আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবে।”
এ প্রসঙ্গে বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বসুমিত্রা সিংহ বলেন, “ওই শিক্ষকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা আমার এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ। পঠনপাঠনের মান বিচার করার বিষয়টিও বিক্ষোভকারীদের এক্তিয়ার বহির্ভূত বলেই আমার ধারণা। ওই শিক্ষক নির্দিষ্ট সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই চাকরি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে তার পর জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy