Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Summer Vacation

‘অনেক দিন  হল, এ বার  স্কুল খুলুক’

গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের ‘টিআইসি’ তথা ওই ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত কেওড়া জানাচ্ছিলেন, স্কুলের পড়ুয়াদের বড় অংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের।

School gate locked at Bishnupur

বিষ্ণুপুরের একটি স্কুল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ০৬:৩৭
Share: Save:

জানুয়ারি থেকে ‘পিএম পোষণ’-এর আওতায় আরও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছিল মিড-ডে মিলে। সপ্তাহে অন্তত চার দিন পড়ুয়াদের পাতে পড়ছিল ডিম। স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতিও বেড়েছিল লক্ষণীয় ভাবে। তবে গরমের ছুটি ক্রমাগত বাড়তে থাকায় মিড-ডে মিলের পুষ্টিকর খাবার থেকে পড়ুয়াদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন অভিভাবক থেকে শিক্ষকদের একাংশ। টানা স্কুল বন্ধে বিশেষত প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়াদের পড়াশোনায় প্রভাব পড়ছে বলেও সরব শিক্ষকমহল।

পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির কুলাই গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের ‘টিআইসি’ তথা ওই ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত কেওড়া জানাচ্ছিলেন, স্কুলের পড়ুয়াদের বড় অংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের। জানুয়ারির আগে স্কুলের ৭২ জন পড়ুয়ার মধ্যে উপস্থিত থাকত গড়ে পঞ্চাশ জন। মিড-ডে মিলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ডিম খাওয়ানো শুরু হওয়ার পরে উপস্থিতি একশো শতাংশে পৌঁছেছিল। সুশান্ত বলেন, “একশো দিনের কাজ বন্ধ। দিনমজুর পরিবারগুলির হাতে টাকা নেই। মিড-ডে মিলটা চালু থাকলে ছেলেমেয়েগুলো স্কুলে পুষ্টিকর খাবারটা পেত।” ঝালদার ঝাড়খণ্ড সীমানার মাঘা প্রাথমিক স্কুলের কর্তৃপক্ষও জানাচ্ছেন, মিড-ডে মিলে সপ্তাহে ডিম দেওয়ার পরিমাণ বাড়ার পরে স্কুলে উপস্থিতি প্রায় একশো শতাংশে পৌঁছেছিল। টানা দেড় মাস স্কুল বন্ধ থাকায় পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারের পড়ুয়ারা।

ঘটনা হল, পঠন-পাঠন ও মিড-ডে মিল—উভয় কারণের জন্যই শিক্ষকদের একাংশ ও অভিভাবক মহলের বড় অংশ চাইছেন দ্রুত স্কুল খুলুক। অনেক শিক্ষকেরই দাবি, ছুটিতে পড়াশোনোর সঙ্গে কার্যত কোনও সম্পর্ক থাকে না বিশেষত প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়াদের। স্কুলই ভরসা। অযোধ্যা পাহাড়ের জিলিংসেরেন গ্রামের পড়ুয়া রাজেন পাহাড়িয়া, অমিত পাহাড়িয়ারা ঝালদার কুটিডি স্কুলের ছাত্রাবাসে থেকে স্কুলে পড়ে। স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের বাড়ি ফিরতে হয়েছে। তারা বলে, “বাড়িতে পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। এলাকায় টিউশন পড়ার সুযোগও নেই। স্কুলের ক্লাসই ভরসা। তা ছাড়া, স্কুল খোলা থাকলে মিড-ডে মিলে ভাল খাবার পাওয়া যায়। অনেক দিন হল। এ বার স্কুল খুলুক।” ওই স্কুলের ‘টিআইসি’ অরূপকুমার গোপ মণ্ডলের দাবি, “স্কুলে এমন অনেক পড়ুয়া আছে, যাদের স্কুলের ক্লাসই ভরসা। তাদের অভিভাবকেরা চাইছেন, দ্রুত স্কুল খুলুক। পড়াশোনার স্বার্থে আমরাও তা-ই চাইছি।”

স্কুল খোলার দাবি জোরদার হচ্ছে বাঁকুড়াতেও। সম্প্রতি জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার কমে যাওয়ার জন্য স্কুলে কর্মদিবস কমে যাওয়া অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন শিক্ষক মহল। টানা গরমের ছুটিতে অভিভাবক থেকে শিক্ষক, সকলেই এ নিয়ে সওয়াল করতে শুরু করেছেন। জেলার একটি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “রাজ্য সরকারি স্কুলগুলিতে কোভিড পরিস্থিতির পরে যে হারে ছুটি দেওয়া হচ্ছে, তা দেখে আমরাও অবাক হচ্ছি।”

শহরাঞ্চলের সরকারি স্কুলে পড়া ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের একাংশও টানা ছুটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বাঁকুড়ার বাসিন্দা অরূপ দত্তের কথায়, “ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এত ছুটি হলে স্কুলে সিলেবাস শেষ হবে কী ভাবে, বুঝতে পারছি না। স্কুলের এই পরিস্থিতি দেখে বাড়তি টিউশন দিতে হচ্ছে।” শহরের একটি প্রথম শ্রেণির স্কুলের প্রধান শিক্ষকও জানান, ছাত্রছাত্রীদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের সুযোগ মিলছে না লাগাতার ছুটির কারণে। স্কুল বন্ধে বিশেষত প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলির পড়ুয়াদের পড়াশোনা ও পুষ্টি-ঘাটতির অভিযোগ তুলছেন অভিভাবকেরা।

প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন, তৃণমূল শিক্ষক সমিতির জেলার নেতাদের অনেকেও সমস্যার কথা মানছেন। ঘরে-বাইরে শিক্ষকেরাও টানা ছুটিতে প্রশ্নের মুখে পড়ছেন বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

সংগঠনের নেতা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “কোভিডে তা-ও মিড-ডে মিলের খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হয়েছিল। এ বার তা-ও হচ্ছে না। পড়ুয়াদের অনেকে সমস্যায় পড়ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Summer Vacation purulia Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy