পঞ্চকোট রাজবাড়ি।
প্রাচীন রাজবাড়ি ঘিরে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি) মডেলে পর্যটন প্রকল্প গড়ে তুলতে উদ্যোগী হল পুরুলিয়া জেলা টুরিজ়ম কাউন্সিল। বিষয়টি আপাতত প্রাথমিক স্তরে রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আধিকারিকদের মতে, পুজোর ঐতিহ্য ছাড়াও, পুরুলিয়ার পঞ্চকোট রাজবাড়ির লম্বা ইতিহাস রয়েছে। তাই এই প্রস্তাব নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয়েছে।
মানভূমের সভ্যতা বিকাশে পঞ্চকোট রাজবংশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। রাজ পরিবার সূত্রে জানা যায়, কবি মধুসূদন দত্ত কর্ম সূত্রে কিছু কাল এই রাজবাড়িতে কাটান। সঙ্গীতজ্ঞ যদুভট্ট, নৃত্যশিল্পী অলকনন্দা-সহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের পা পড়েছে এখানে। ইতিহাস গবেষকেরা জানান, রাজবংশের প্রায় উনিশশো বছরের ইতিহাসে শেষ রাজধানী গড়ে উঠেছিল কাশীপুরে। পঞ্চকোটের মহারাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিংহদেও এখানে প্রাসাদ তৈরি করেন। ‘জ্যোতিবিলাস’ নামে এই প্রাসাদ নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় ১২ বছর। সুদৃশ্য এই প্রাসাদ জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। রাজাদের শিকারের নানা নমুনা প্রাসাদে সংরক্ষিত রয়েছে।
পুরুলিয়া জেলা ট্যুরিজম কাউন্সিলের সদস্য মোহিত লাটা জানান, রাজ্যের অনেকের কাছেই এটি পঞ্চকোট রাজবাড়ি পরিচিত নাম। হিন্দি-বাংলায় বিভিন্ন চিত্র পরিচালকেরা তাঁদের ছবিতে এই রাজবাড়ি ব্যবহার করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজস্থান বা দক্ষিণ ভারতে এই ধরনের প্রাচীন রাজবাড়িগুলি ঘিরে পর্যটন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। পুরুলিয়া এখন এ রাজ্যের তো বটেই, ভিন্ রাজ্যের পর্যটকদের কাছেও অন্যতম গন্তব্য। জেলার পর্যটন ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে। সে ভাবনা থেকেই এই রাজবাড়ি ঘিরে পিপিপি মডেলে পর্যটন প্রকল্প গড়ে তোলা যায় কি না, খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।’’
জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা স্থানীয় বাসিন্দা সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। পুরুলিয়ায় পঞ্চকোট রাজবংশের দুর্গাপুজোরও যে ঐতিহ্য, এই উদ্যোগে তা পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা যাবে। পুজোর সময়ে বহু মানুষ এই রাজবাড়িতে পুজো দেখতে আসেন।’’ মোহিতবাবু বলেন, ‘‘রাজবাড়ি কর্তৃপক্ষের কাছে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছে সাড়া পেলে, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে।’’ তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলায় এসে কী ভাবে ‘পর্যটন সার্কিট’ গড়ে তোলা যায়, তা দেখার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন।
পঞ্চকোট রাজবাড়ির তরফে অনশূল রাজাওয়াত বলেন, ‘‘এ রকম একটি প্রস্তাব এসেছে। ২০১৬ সালেও রাজ্য পর্যটন দফতরের তরফে এমন প্রস্তাব এসেছিল। তার পরে, এ নিয়ে বিশদ প্রকল্প রিপোর্টও তৈরি করা হয়। দেশের অন্যত্র যেখানে এই ধরনের রাজবাড়িগুলি পর্যটন প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে, সে রকম জায়গায় কাজ করা একটি সংস্থা এই প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে। আমরাও এ নিয়ে এগোতে চাই। আমাদের অবস্থান জানাব।’’
সৌমেন বলেন, ‘‘পঞ্চকোট রাজবাড়ি, পাকবিড়রার জৈন আমলের নিদর্শন, তেলকুপী-সহ জেলার একাধিক নিদর্শন ঘিরে পর্যটনক্ষেত্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে পুরুলিয়ায়।’’ পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সদর্থক সাড়া মিললে, জেলা টুরিজ়ম কাউন্সিলে বিশদে আলোচনা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy